নয়াদিল্লি: আহমদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার বিমান AI-171 দুর্ঘটনার এক মাস পরে প্রকাশিত প্রাথমিক তদন্তে উঠে এলো গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। বিমানটি আকাশে ওঠার ঠিক পরেই ইঞ্জিন বিকল হয় এবং মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই ভয়াবহ ভেঙে পড়ে। ওই ঘটনায় মোট ২৬০ জন প্রাণ হারান।
দুর্ঘটনার তদন্তে এবার সামনে এল এক পুরনো সতর্কবার্তা, যা ২০১৮ সালে মার্কিন বিমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) জারি করেছিল বোয়িং ৭৩৭ মডেলের বিমান নিয়ে।
ফুয়েল সুইচের গাফিলতি ২০১৮ সালেই চিহ্নিত করেছিল FAA
২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে FAA একটি বিশেষ পরামর্শমূলক বিজ্ঞপ্তি (SAIB) প্রকাশ করে জানায়, বোয়িং ৭৩৭ বিমানের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচগুলিতে ‘লকিং ফিচার’ সঠিকভাবে সক্রিয় ছিল না। ফলে সুইচ অনিচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।
তবে যেহেতু সেটি বাধ্যতামূলক নির্দেশ ছিল না, বরং কেবল একটি পরামর্শমাত্র, তাই এয়ার ইন্ডিয়া কোনও পরীক্ষানিরীক্ষা বা পরিবর্তন করেনি। অথচ, ঠিক একই ধরণের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ ব্যবহৃত হয় বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলেও — অর্থাৎ সেই বিমানেই, যা ১২ জুন দুর্ঘটনার শিকার হয়।
কি বলছে তদন্ত রিপোর্ট? ai 171 crash faa warning
এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB)-এর প্রকাশিত প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী,
বিমান রানওয়ে ছাড়ার তিন সেকেন্ড পরেই, দু’টি ইঞ্জিনেই ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ ‘RUN’ থেকে ‘CUTOFF’-এ চলে যায়, যার ফলে জ্বালানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এই পরিবর্তন ঘটে মাত্র এক সেকেন্ডের মধ্যে, যা স্বাভাবিক নয়।
তদন্তে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ককপিটের ভয়েস রেকর্ডারে একজন পাইলট অপরজনকে জিজ্ঞেস করেন, “তুমি জ্বালানি বন্ধ করলে কেন?” উত্তরে অপরজন বলেন, “আমি করিনি।” তবে কে কী বলেছিলেন, তা নিশ্চিত নয়।
পাইলটদের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন নেই
বিমানের ক্যাপ্টেন ছিলেন সুমিত সাবরওয়াল (৫৬), যাঁর ১৫,৬৩৮ ঘণ্টার ফ্লাইং অভিজ্ঞতা ছিল। সহ-চালক ক্লাইভ কুন্দর (৩২), তাঁর ছিল ৩,৪০৩ ঘণ্টার অভিজ্ঞতা।
প্রাক্তন অসামরিক বিমান পরিবহণ দপ্তরের যুগ্ম সচিব সনৎ কৌল বলেন, “পাইলটদের দোষ দেওয়া যাবে না। তাঁরা অত্যন্ত অভিজ্ঞ ছিলেন। বরং বোয়িং-এর যন্ত্রপাতির সিস্টেমেই কোনো গুরুতর গলদ থাকতে পারে।”
এছাড়া, AAIB-এর প্রাক্তন আধিকারিক কিশোর চিন্তা প্রশ্ন তোলেন, “ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ কি ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল ইউনিট থেকেই ট্রিগার হয়ে গিয়েছিল? যদি তা হয়ে থাকে, তবে এটা খুবই চিন্তার বিষয়।”
একটি জীবন, ২৬০ মৃত্যু
১২ জুন, উড়ানের কয়েক সেকেন্ড পরই AI-171 বিমানটি আহমদাবাদে একটি মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে ধাক্কা মারে এবং মুহূর্তে বিস্ফোরিত হয়। ২৪২ জন আরোহীর মধ্যে মাত্র একজন যাত্রী বেঁচে যান, বাকিরা প্রাণ হারান। সঙ্গে মৃত ১৯ জন ছিলেন হোস্টেলের ভিতরে।
ফাইনাল তদন্ত রিপোর্টে উঠে আসতে পারে আরও তথ্য
এই মুহূর্তে যান্ত্রিক ত্রুটি, বিশেষত ফুয়েল সুইচের ডিজাইন ও ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল ইউনিটের ভূমিকা নিয়েই গভীর তদন্ত চালাচ্ছে AAIB। সম্পূর্ণ রিপোর্টে হয়তো বোয়িং-এর দায় কিংবা বড় কোনও প্রযুক্তিগত সমস্যা প্রকাশ্যে আসবে।