শেষ ৩২ সেকেন্ডে কী ঘটেছিল? প্রকাশ্যে ককপিটে এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটদের চাঞ্চল্যকর কথোপকথন

নয়াদিল্লি: ২ জুন আহমেদাবাদে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন ২৬০ জন। লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট AI171 বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার রানওয়ে থেকে ওড়ার কয়েক…

Air India AI171 Crash Report

নয়াদিল্লি: ২ জুন আহমেদাবাদে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন ২৬০ জন। লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট AI171 বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার রানওয়ে থেকে ওড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ভেঙে পড়ে শহরের বিজে মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের উপর। আজ সেই মর্মান্তিক ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করল ভারতের এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB)।

১৫ পাতার এই প্রাথমিক রিপোর্টে উঠে এসেছে এমন কিছু তথ্য, যা শুধু হতবাকই করে না, বরং আরও বড় প্রশ্ন তোলে এ দুর্ঘটনা নিছক প্রযুক্তিগত ছিল, না কি তার পিছনে ছিল ভুল বোঝাবুঝি কিংবা গাফিলতি?

   

কী ছিল সেই শেষ মুহূর্তে?

দুর্ঘটনার কয়েক সেকেন্ড আগে ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে ধরা পড়ে এক পাইলটের উদ্বেগভরা প্রশ্ন
“তুমি ফুয়েল কাট অফ কেন করলে?” জবাবে অন্য পাইলট বলেন, “আমি করিনি।” এই সংক্ষিপ্ত অথচ ভয়াবহ কথোপকথনের পরই মুহূর্তের মধ্যে সব শেষ।

AAIB জানাচ্ছে, ওড়াই পরপরই বিমানের দুই ইঞ্জিনের ফুয়েল কাট-অফ সুইচ RUN থেকে CUTOFF-এ চলে যায় একসঙ্গে। এর ফলে মাঝ আকাশে বন্ধ হয়ে যায় দুই ইঞ্জিনের জ্বালানি সরবরাহ। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে থেমে যায় থ্রাস্ট, হারাতে থাকে গতি ও উচ্চতা, তারপরই ধ্বংস।

 AAIB রিপোর্টের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এক নজরে Air India AI171 Crash Report

১. ওড়ার ঠিক পরেই দুই ইঞ্জিনের ফুয়েল কাট-অফ সুইচ একসঙ্গে বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে বন্ধ হয়ে যায় ইঞ্জিনের শক্তি সরবরাহ।

২. ককপিট ভয়েস রেকর্ডার জানায়, পাইলটদের মধ্যে ছিল বিভ্রান্তি, কেউ স্বীকার করেননি ফুয়েল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত।

৩. বিমানটি আছড়ে পড়ে মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের উপর। মৃত্যু হয় ২৪১ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্যের, এবং ওই হোস্টেলের ছাদে ক্যান্টিনে থাকা ১৯ জন সাধারণ নাগরিকের।

৪. সর্বোচ্চ গতি ছিল ১৮০ নট। তার ঠিক পরেই বন্ধ হয়ে যায় ইঞ্জিন। এরপর আর ঘুরে দাঁড়ানোর সময় পায়নি AI171।

৫. সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে Ram Air Turbine (RAT) নিজে থেকেই সক্রিয় হয়ে গিয়েছে—এটি ঘটে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে।

Advertisements

৬. দুই ফুয়েল সুইচ আবার RUN অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হলেও শুধু ইঞ্জিন ২ কিছু সময়ের জন্য কাজ করেছিল। ইঞ্জিন ১ আর ফিরিয়ে আনা যায়নি।

৭. তদন্তকারীরা স্পষ্ট করে জানাচ্ছেন, কোনও বার্ড স্ট্রাইকের চিহ্ন মেলেনি। ফলে তা দুর্ঘটনার কারণ নয়।

৮. থ্রটল টেকঅফ সেটিংয়ে ছিল শুরু থেকে। তবে দুর্ঘটনার পরে তা পাওয়া গেছে ‘আইডল’ অবস্থায়, যা সম্ভবত তাপজনিত ক্ষতির ফল।

৯. বিমানের সামনের ‘Extended Airframe Flight Recorder’ থেকে তথ্য উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। তবে পিছনের রেকর্ডারটি ক্ষতিগ্রস্ত।

১০. এখনই কোনও সতর্কবার্তা জারি হয়নি Boeing বা GE-এর (ইঞ্জিন নির্মাতা) প্রতি। মূল কারণ চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয়নি।

প্রযুক্তিগত ত্রুটি, না মানবিক ভুল?

প্রাথমিকভাবে বোঝা যাচ্ছে, ফুয়েল কাট-অফ সুইচ বন্ধ হয়ে যাওয়া ছিল এই দুর্ঘটনার মূল ট্রিগার। কিন্তু কে বা কী এর জন্য দায়ী? পাইলটের ভুল? ইলেকট্রনিক গ্লিচ? না কি কোনও সিস্টেমিক ত্রুটি?

AAIB এখনও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। তবে রিপোর্টের প্রতিটি লাইনেই স্পষ্ট—দ্রুত প্রতিক্রিয়া, প্রযুক্তিগত সচেতনতা ও স্পষ্ট যোগাযোগের ঘাটতি মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল ভয়াবহ এই পরিস্থিতি।