আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি (Gautam Adani) শুক্রবার এক ঐতিহাসিক ঘোষণা করে জানিয়েছেন যে, আগামী পাঁচ বছরে তার কংগ্লোমারেট প্রায় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মূলধনী ব্যয় (ক্যাপেক্স) বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। ভারতের বেসরকারি খাতের ইতিহাসে এই বিনিয়োগের আকার এবং গতি অভূতপূর্ব বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ‘সোসাইটি ফর মিনিমালি ইনভেসিভ স্পাইন সার্জারি-এশিয়া প্যাসিফিক’ (SMISS-AP)-এর পঞ্চম বার্ষিক সম্মেলনে শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসকদের উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে গৌতম আদানি বলেন, “এই বিনিয়োগ আমাদের দেশের ভবিষ্যতের উপর বিশ্বাসের প্রতিফলন। আমাদের লক্ষ্য শক্তির গ্রিড, লজিস্টিকসের নাড়ি-নক্ষত্র এবং ভারতের শিল্প মেরুদণ্ডকে আরও শক্তিশালী করা।”
তিনি বলেন, “ভারতের ১.৪ বিলিয়ন মানুষের স্বপ্নকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের এই উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই বিনিয়োগ ভারতের উন্নয়নের মেরুদণ্ডকে আরও মজবুত করবে।”
গৌতম আদানি তার বক্তব্যে আদানি গ্রুপের সাফল্যের গল্প শেয়ার করেন। তিনি উল্লেখ করেন, কীভাবে মুণ্ড্রা বন্দরকে একটি সাধারণ লবণ রপ্তানি জেটি থেকে ভারতের বৃহত্তম মাল্টি-কার্গো বন্দরে রূপান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, “মুণ্ড্রা হলো সেই বিশ্বাসের জীবন্ত উদাহরণ, যেখানে দৃষ্টি সাহসী হলে ভাগ্যকেও বদলানো যায়। আজ এটি শুধু ভারতের বৃহত্তম মাল্টি-কার্গো বন্দর নয়, বিশ্বের বৃহত্তম প্রাইভেট সিঙ্গল-সাইট থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট, ভারতের প্রথম HVDC ট্রান্সমিশন লাইন, দেশের বৃহত্তম ইন্টিগ্রেটেড সোলার ও উইন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং হাব এবং পেট্রোকেমিক্যাল, কপার স্মেল্টার, সোলার এক্সেসরিজের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্প কেন্দ্রের আবাসভূমি।”
তিনি আরও বলেন, যখন ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার মুণ্ড্রা প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়, তখন কোনো নির্মাণ অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও আদানি গ্রুপ এককভাবে কাজটি চালিয়ে যায়। সেই সময় গুজরাট সরকার বন্দর উন্নয়নের জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ নীতি প্রবর্তন করে এবং আদানি গ্রুপ প্রথমেই সেই সুযোগ কাজে লাগায়।
মুণ্ড্রা বন্দর ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে প্রথম বার্থের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে, যা ভারতের প্রথম বেসরকারি বন্দর হিসেবে ইতিহাসে স্থান পায়। এর কিছু বছর পর, স্পেশাল ইকোনমিক জোন (SEZ) নীতি প্রবর্তিত হলে, আদানি গ্রুপ তড়িৎ গতিতে ৪০,০০০ একর জমিকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
গৌতম আদানি বলেন, “মুণ্ড্রা অভিজ্ঞতা আমাদের সীমার বাইরে ভাবতে শিখিয়েছে। এটি আমাদের সাহস এবং বিশ্বাস জুগিয়েছে যে, শূন্যতা থেকেও বিশ্বমানের অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের কর্মভূমি থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রা আজ ভারতের সর্বত্র বিস্তৃত হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোলার পাওয়ার কোম্পানিতে পরিণত হয়েছি এবং বিশ্বের বৃহত্তম সিঙ্গল-সাইট হাইব্রিড রিনিউয়েবল পার্ক তৈরি করছি, যা ৩০ গিগাওয়াট ক্ষমতা এবং ৫০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।”
তিনি জানান, আদানি গ্রুপ এখন ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি বিমানবন্দর অপারেটর, যা দেশের মোট যাত্রী পরিবহনের ২৫ শতাংশ এবং এয়ার কার্গোর ৩৮ শতাংশ পরিচালনা করছে। এ ছাড়া, ভারতের বৃহত্তম বন্দর ও লজিস্টিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের ৩০ শতাংশ সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন করে।
এছাড়া, আদানি গ্রুপের শক্তি খাতের ব্যবসা সর্বাধিক ইন্টিগ্রেটেড, যেখানে রয়েছে থার্মাল ও রিনিউয়েবল জেনারেশন, ট্রান্সমিশন, ডিস্ট্রিবিউশন, LNG, LPG, CNG, PNG, ব্যাটারি স্টোরেজ, হাইড্রোজেন ট্রাক, ইভি চার্জিং স্টেশন, পাম্পড হাইড্রো এবং মাইনিং।
গৌতম আদানি আরও বলেন, “আমরা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিমেন্ট উৎপাদক এবং সবচেয়ে দক্ষ নির্মাতা। পাশাপাশি, আমরা অ্যারোস্পেস, ডিফেন্স, ডেটা সেন্টার এবং রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রেও বিশাল বিনিয়োগ করেছি।”
তিনি তার ভাষণের শেষাংশে বলেন, “আমরা যা শুরু করেছি, তা কেবল একটি প্রকল্প নয়; এটি ভারতের কোটি কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে জড়িত। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বড় স্বপ্ন দেখা এবং সেই স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়া।”
এই ঘোষণার মাধ্যমে আদানি গ্রুপের অগ্রযাত্রা আরও গতিশীল হবে এবং ভারতের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন দিশা প্রদর্শন করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিনিয়োগ দেশের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে এবং ভারতকে বৈশ্বিক মঞ্চে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।