প্রেমের টানে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ! আর এই প্রেমই শেষমেশ পুলিশের জালে। গ্রেফতার হলেন এক বাংলাদেশি তরুণী (Bangladeshi Woman) ও তাঁর প্রেমিক কর্ণাটকের যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে ত্রিপুরার সেপাহিজলা জেলায়। অভিযুক্তরা বর্তমানে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশি ওই তরুণীর নাম এখনও প্রকাশ্যে আনেনি প্রশাসন, তবে তাঁর বয়স ৩৫ বছর এবং তিনি বাংলাদেশের বগুড়া জেলার বাসিন্দা। অতীতে তিনি মুম্বইয়ের একটি বিউটি পার্লারে এবং পরে বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় কর্ণাটকের বিদার জেলার এক কন্ট্রাক্টর দত্তা যাদবের। আলাপ গড়ায় প্রেমে, তবে এরপর এক সময় ওই তরুণী বাংলাদেশে ফিরে যান।
প্রেমে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি দত্তা যাদব। তিনি পরিকল্পনা করেন তাঁর প্রেমিকাকে আবার ভারতে নিয়ে আসার। কিন্তু বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়াই সীমান্ত পার করানো হয় তরুণীকে। সূত্র বলছে, বুধবার তিনি ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। পরদিন, বৃহস্পতিবার, বিএসএফের একটি বিশেষ দল গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে ত্রিপুরার সেপাহিজলা জেলার সীমান্ত এলাকা থেকে ওই তরুণী এবং দত্তা যাদবকে গ্রেফতার করে। পরে তাঁদের ত্রিপুরা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারের সময় ওই দম্পতি আগরতলা থেকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে কোনও বৈধ ভিসা বা পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি। ফলে তাঁদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইন, ফরেনার্স অ্যাক্ট এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে।
শুক্রবার দুজনকেই আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁদের ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন।
ত্রিপুরা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, “এই ঘটনায় কারা বা কোন চক্র ভারত থেকে সাহায্য করেছে, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এটি শুধুমাত্র প্রেমের টান, নাকি এর আড়ালে কোনও মানব পাচার চক্র কাজ করছে, সেই দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। তদন্তের প্রয়োজনে পরে তাঁদের পুলিশ হেফাজতও চাওয়া হতে পারে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, সীমান্ত পেরিয়ে এমন অনুপ্রবেশ এখন একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু সময় এই প্রেম বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের আড়ালে আন্তর্জাতিক পাচার চক্র সক্রিয় থাকে। এক্ষেত্রেও পুলিশ সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএসএফ। স্থানীয় প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও এখন খতিয়ে দেখছে, অনুপ্রবেশে ব্যবহৃত রুট, দালালদের ভূমিকা ও চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সনাক্ত করতে।
এই ঘটনায় সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আরও কঠোর নজরদারি ও তথ্যভিত্তিক গোয়েন্দা তৎপরতার ওপর জোর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরছেন। প্রেমের টানে সীমান্ত পেরোনো এই ঘটনা আপাতদৃষ্টিতে আবেগপ্রবণ মনে হলেও, এর গভীরে থেকে যেতে পারে অপরাধের জটিল চালচিত্র—সেই দিকেই এখন নজর তদন্তকারীদের।