ভারতীয় খুচরা ঋণ খাতে হাউজিং লোনের নতুন বিপ্লব

ভারতের রিটেইল ক্রেডিট বা খুচরা ঋণের বৃদ্ধির পরবর্তী ধাপটি মূলত ঋণগ্রহীতাদের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে আসবে বলে মনে করছে বার্নস্টেইনের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন। বিশেষ…

Home Renovation Loans on EMI in 2025: New Rates and Features Unveiled

ভারতের রিটেইল ক্রেডিট বা খুচরা ঋণের বৃদ্ধির পরবর্তী ধাপটি মূলত ঋণগ্রহীতাদের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে আসবে বলে মনে করছে বার্নস্টেইনের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন। বিশেষ করে আবাসন ঋণ (Housing Loans) বা মর্টগেজ সেগমেন্টকে এই বৃদ্ধির প্রধান চালক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

মূলত সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন খাত থেকেই এই প্রবৃদ্ধির একটি বড় অংশ আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী আবাসনের ক্ষেত্রে টিকিট সাইজ তুলনামূলকভাবে ছোট হলেও, এর মাধ্যমে প্রায় ৩ শতাংশ রিটার্ন অন অ্যাসেটস (RoA) অর্জন সম্ভব। এর ফলে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ঋণ বাজার তৈরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

   

এই খাতে সফল হওয়ার মূল চাবিকাঠি হবে ঋণদাতাদের সক্ষমতা—যেখানে বিভিন্ন রাজ্যে একই ধরনের অপারেটিং মডেলকে ধারাবাহিকভাবে প্রসারিত ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

গত এক দশকে ভারতের ঋণ খাতের বড় বড় সফলতার গল্পগুলো গড়ে উঠেছে মানুষের কাছে আনুষ্ঠানিক অর্থায়নের সহজলভ্যতা বাড়ানোর উপর ভিত্তি করে। এই সময়ে প্রায় ২০ কোটি নতুন ভোক্তা ক্রেডিট সিস্টেমে যুক্ত হয়েছে। ঋণগ্রহীতার সংখ্যা বাড়ার হার মোট ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির হারকেও ছাড়িয়ে গেছে।

বার্নস্টেইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ভারতের শ্রমশক্তির প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ আনুষ্ঠানিক ক্রেডিটের আওতায় এসেছে। ফলে ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধি আর শুধু নতুন ঋণগ্রহীতা যোগ করার উপর নির্ভর করবে না, বরং প্রত্যেক ঋণগ্রহীতার ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হবে। আর এই ক্ষেত্রে মর্টগেজ বা আবাসন ঋণ হবে মূল চালক।

মর্টগেজ বলতে বোঝানো হয় এমন একটি ঋণ, যা দিয়ে কেউ বাড়ি বা সম্পত্তি কিনে এবং পরে কিস্তিতে তা শোধ করে। এই ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার ক্রয়কৃত সম্পত্তি নিজেই সেই ঋণের জামানত হিসেবে কাজ করে।

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, ভারতের জিডিপির অনুপাতে মর্টগেজের প্রবেশমাত্রা এখনও খুবই কম—মাত্র ১১ শতাংশ। তুলনায়, চীনে এই হার প্রায় ৩০ শতাংশ এবং উন্নত দেশগুলিতে এটি ৫০ শতাংশেরও বেশি।

Advertisements

অন্যদিকে, ভারতের নন-মর্টগেজ রিটেইল ক্রেডিট ইতোমধ্যেই জিডিপির ৩০ শতাংশের বেশি, যা অনেক উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের তুলনায় বেশি। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে, যদিও ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ বেড়েছে, মর্টগেজের ক্ষেত্রে এখনো বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়েছে, যদি মর্টগেজের প্রবেশমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, তবে ২০৩৪-৩৫ অর্থবছর নাগাদ ভারতীয় মর্টগেজ বাজারের আকার প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে পারে। এই বিশাল সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য ঋণদাতাদের দক্ষতা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং সর্বভারতীয় উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাউজিং চাহিদা, নগরায়ণ বৃদ্ধি, সরকারি নানা সহায়তা এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়ার প্রতি মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন—এই সবকিছুর সম্মিলিত প্রভাবেই মর্টগেজ খাতকে এমন সম্ভাবনাময় করে তুলেছে। সরকারের ‘হাউজিং ফর অল’ বা ‘সবার জন্য বাসস্থান’ প্রকল্প, প্রাথমিক পর্যায়ের ট্যাক্স ছাড় এবং সুদে সাবসিডির মতো নীতিমালা সাধারণ মানুষের আবাসন স্বপ্ন পূরণে উৎসাহ দিচ্ছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের মর্টগেজ খাতের কম প্রবেশমাত্রা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, এই খাতে এখনও অনেকখানি অব্যবহৃত সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে ক্রেডিট বুমের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা মর্টগেজের মাধ্যমে আরও ত্বরান্বিত হতে পারে। এতে শুধু ব্যাংক এবং হাউজিং ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোই লাভবান হবে না, বরং দেশের সম্পূর্ণ আবাসন শিল্প, নির্মাণ খাত এবং সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও নতুন গতি পাবে।

সবমিলিয়ে বলা যায়, আগামী এক দশকে ভারতের রিটেইল ক্রেডিট বৃদ্ধির মূল মেরুদণ্ড হিসেবে মর্টগেজ সেক্টরকে ধরা হচ্ছে। যেসব ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান এই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে এবং দ্রুত স্কেল-আপ করতে সক্ষম হবে, তারাই ভবিষ্যতের বাজারে শীর্ষস্থান দখল করবে। ফলে ভারতীয় অর্থনীতির অগ্রগতিতেও মর্টগেজের ভূমিকা ক্রমেই আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।