দৈনিক জরিমানা ১০ লাখ! কাজে বিলম্বে কড়া যোগী সরকার

ফের শিরোনামে উত্তরপ্রদেশের (UP Government) যোগী সরকার। নয়ডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজে বিলম্বের জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে গঠিত…

Yogi Adityanath UP Government Slaps Rs 10 Lakh Daily Fine on Noida Airport for Construction Delays

ফের শিরোনামে উত্তরপ্রদেশের (UP Government) যোগী সরকার। নয়ডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজে বিলম্বের জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে গঠিত এই সরকার নয়ডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণে দেরি করার জন্য প্রতিদিন ১০ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করেছে। এই সিদ্ধান্তটি বহু মানুষের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে এবং এটি রাজ্যের অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের কঠোর নীতির প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নয়ডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা আগে ২০২৪ সেপ্টেম্বরে উদ্বোধনের লক্ষ্যে নির্ধারিত ছিল, বর্তমানে বিলম্বের কারণে জুন ২০২৫ পর্যন্ত স্থগিত হয়ে গেছে। এই প্রকল্পটি উত্তরপ্রদেশের জুয়ার অঞ্চলে নির্মাণাধীন এবং এটি রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রতিশ্রুত। তবে নির্মাণ কাজে সাম্প্রতিক বিলম্ব সরকারের ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছে। তাই সরকার এখন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে নির্মাণ সংস্থাগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়, যাতে কাজটি সময়মতো শেষ করা যায়।

   

নয়েডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছে তাতা প্রজেক্টস লিমিটেড এবং ফ্লুগহাফেন জ্যুরিখ এজি, যিনি সুইজারল্যান্ডের জ্যুরিখ বিমানবন্দর পরিচালনা করে। এই প্রকল্পটি একটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলের মাধ্যমে চলছে এবং এটি শুধুমাত্র একটি বিমানবন্দর নয়, বরং একটি পরিবেশবান্ধব (নেট-জিরো এমিশন) অবকাঠামো হিসেবে গড়ে উঠছে। তবে নির্মাণে বিলম্বের কারণগুলো জটিল—যেমন কাজের সমন্বয়ে সমস্যা, উপকরণ সরবরাহে বাধা এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ। এর ফলে প্রকল্পটি তার নির্ধারিত সময়সূচী থেকে বেশ কিছুদিন পিছিয়ে গেছে।

সরকারের এই ১০ লাখ টাকা দৈনিক জরিমানার সিদ্ধান্তটি অনেকের মধ্যে আশা আর উদ্বেগের মিশ্রণ সৃষ্টি করেছে। একদিকে, এটি দেখাচ্ছে যে যোগী সরকার অবকাঠামো প্রকল্পে কোনো বিলম্ব সহ্য করবে না এবং সময়মতো কাজ শেষ করার জন্য কঠোরতা অবলম্বন করছে। অন্যদিকে, কিছু বিশ্লেষক এই জরিমানাকে “চোখের ধোঁয়া” বলে মনে করছেন, কারণ বিলম্বের মূল কারণগুলো সমাধান না হলে এই জরিমানা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। উদাহরণস্বরূপ, জল ও সেচ পরিচালনা কেন্দ্রগুলো এখনও ৪০-৪৩% মাত্র সম্পন্ন হয়েছে, কারণ প্রথম দুটি ঠিকাদার প্রকল্প থেকে সরে গেছে। এই পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে সরকারের বাধ্য হয়েছে, যা আরও সময় নিতে পারে।

Advertisements

সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয় নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। কিছু ব্যবহারকারী যোগী সরকারের এই পদক্ষেপকে প্রশংসা করছেন, বলছেন যে এটি রাজ্যে দায়িত্ববোধ আর শৃঙ্খলা আনবে। তবে অন্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে, দ্রুত কাজের চাপে নিরাপত্তা বিষয়টি উপেক্ষিত হতে পারে। ভারতের অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে সম্প্রতি দেখা দিয়েছে কিছু দুর্ঘটনা, যেমন বিমানবন্দরের ছাদ ধসে পড়া ঘটনা, যা গুণমান নিশ্চিত করার দাবি জোরদার করেছে। একজন বিশ্লেষক বলেছেন, “দ্রুততা এবং নিরাপত্তা একসঙ্গে রাখতে হবে, নইলে এই প্রকল্পগুলো দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করতে পারে।”

নয়ডা বিমানবন্দরের গুরুত্ব অস্বীকার্য। এটি শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশের জন্য নয়, ভারতের পূর্বাঞ্চলের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াত কেন্দ্র হবে। নতুন রেলপথ এবং এক্সপ্রেসওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা, যেমন পলওয়াল-নয়ডা-খুরজা রেল লাইন এবং জুয়ার-ফরিদাবাদ এক্সপ্রেসওয়ে, এই বিমানবন্দরকে দিল্লি, আগ্রা, এবং মথুরার মতো জনপ্রিয় গন্তব্যের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে। তবে এই যোগাযোগ ব্যবস্থাগুলোর নির্মাণও এখনও চলছে, যা সময়সূচীতে আরও চাপ সৃষ্টি করছে।

যোগী সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের ফলাফল কী হবে তা সময়ই বলবে। তবে এটি নিশ্চিত যে, নয়ডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজটি এখন রাজ্যের জনগণের চোখের সামনে একটি পরীক্ষার মতো। সরকার যদি জরিমানার পাশাপাশি প্রকল্পের মূল সমস্যাগুলো সমাধানে গুরুত্ব দেয়, তাহলে এই বিমানবন্দরটি ভারতের অবকাঠামো উন্নয়নে একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হতে পারে। অন্যথায়, এটি আরও বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠতে পারে।