পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ সফর নিয়ে সমালোচনার জবাবে ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় (MEA) তাঁর মন্তব্যকে ‘দায়িত্বহীন’ বলে অভিহিত করেছে। ঠিক তখন ই আম আদমি পার্টির (AAP) সাংসদ সঞ্জয় সিং (Sanjay Singh) ভগবন্ত মানের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। তিনি বলেছেন, “পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান এমন কিছু বলেননি যা প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে। তিনি ঠিকই বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে যান, কিন্তু এই সফরগুলি থেকে ভারত কী সুবিধা পাচ্ছে তা স্পষ্ট হওয়া উচিত। তিনি ৭৩টি দেশে ১২৯ বার সফর করেছেন, তবুও পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সংঘাতের সময় কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি।” এই বিতর্ক ভারতের কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা
বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের মন্তব্যকে ‘দায়িত্বহীন এবং দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “একজন উচ্চপদস্থ রাজ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ভারতের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এমন মন্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন।
এই ধরনের মন্তব্য ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে।” ভগবন্ত মান সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মোদীর পাঁচ দেশের সফর নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করেছিলেন, যেখানে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের ফলে ভারত কী লাভ করছে। তিনি আরও বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যান, সেখানে আদানি গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ লক্ষ্য করা যায়।
সঞ্জয় সিংয়ের সমর্থন (Sanjay Singh)
সঞ্জয় সিং (Sanjay Singh) ভগবন্ত মানের মন্তব্যের সমর্থনে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কোনো ভুল কথা বলেননি। প্রধানমন্ত্রী ৭৩টি দেশে ১২৯ বার সফর করেছেন, কিন্তু এই সফরগুলি থেকে ভারতের জনগণ কী পেয়েছে? পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সংঘাতের সময় কোনো দেশ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি।”
তিনি আরও বলেন, “একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ভগবন্ত মানের দেশের বিদেশ নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার রয়েছে। জনগণ জানতে চায় এই সফরগুলির ফলাফল কী।” সঞ্জয় সিং দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরগুলি প্রায়শই বড় শিল্পপতিদের স্বার্থে পরিচালিত হয়, যা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য সুবিধা নিয়ে আসে না।
প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়ে বিতর্ক
প্রধানমন্ত্রী মোদী (Sanjay Singh)সম্প্রতি ঘানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং নামিবিয়ায় সফর করেছেন। এই সফরে তিনি একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, এই সফরগুলি ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেছে এবং অর্থনৈতিক সুবিধা এনেছে।
উদাহরণস্বরূপ, নামিবিয়ায় ইউপিআই প্ল্যাটফর্ম গ্রহণ এবং ব্রাজিলে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদের নিন্দা ভারতের কূটনৈতিক সাফল্যের প্রমাণ। তবে, ভগবন্ত মান এই সফরগুলির সুনির্দিষ্ট ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, এবং সঞ্জয় সিং তাঁর এই অবস্থানকে সমর্থন করেছেন।
বিজেপির প্রতিক্রিয়া
বিজেপি নেতারা ভগবন্ত মান এবং সঞ্জয় সিংয়ের (Sanjay Singh) মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র প্রদীপ ভাণ্ডারী বলেন, “ভগবন্ত মান এবং সঞ্জয় সিংয়ের মন্তব্য ভারতের কূটনৈতিক সাফল্যকে অবমাননা করে। প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর ভারতের বিশ্ব মঞ্চে প্রভাব বাড়িয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এএপি নেতারা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তাদের উচিত পাঞ্জাবের সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দেওয়া।”
বিজেপি সাংসদ প্রবীণ খাণ্ডেলওয়াল ভগবন্ত মানের কৌতুক অভিনেতা হিসেবে অতীতের উল্লেখ করে বলেন, “মানের উচিত মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা, কৌতুক নয়।”
পাঞ্জাবের সমস্যা নিয়ে সঞ্জয় সিংয়ের বক্তব্য
সঞ্জয় সিং পাঞ্জাবের সমস্যা, বিশেষ করে সুতলেজ-যমুনা লিঙ্ক নদী নিয়ে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যদি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলেন, তাহলে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার জল বিরোধের সমাধান কেন করতে পারেন না?
পাঞ্জাবের (Sanjay Singh) কৃষকরা জল এবং ন্যূনতম সমর্থন মূল্য (এমএসপি) নিয়ে সমস্যার মুখে পড়ছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত এই সমস্যাগুলির সমাধানে মনোযোগ দেওয়া।” তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের তুলনায় দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
২০৪৭ এ ভারতের জিডিপি বাড়বে ৮ গুন, দাবি দোভালের
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
সঞ্জয় সিংয়ের (Sanjay Singh) মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এএপি সমর্থকরা তাঁর বক্তব্যকে জনগণের প্রশ্নের প্রতিধ্বনি বলে মনে করছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “সঞ্জয় সিং ঠিক বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর থেকে জনগণ কী পাচ্ছে? আমরা জানতে চাই।” তবে, বিজেপি সমর্থকরা এই মন্তব্যকে ‘ভারত-বিরোধী’ বলে সমালোচনা করেছেন। একজন লিখেছেন, “এএপি প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক সাফল্যকে অস্বীকার করছে। এটি তাদের রাজনৈতিক হতাশার প্রমাণ।”
ভগবন্ত মানের (Sanjay Singh) মন্তব্য এবং সঞ্জয় সিংয়ের সমর্থন ভারতের বিদেশ নীতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রণালয় তাঁদের মন্তব্যকে দায়িত্বহীন বললেও, এএপি নেতারা জনগণের প্রশ্ন তুলে ধরার দাবি করছেন।
এই বিতর্ক কেবল রাজনৈতিকই নয়, বরং ভারতের কূটনৈতিক অগ্রাধিকার এবং অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। আগামী দিনে এই বিতর্ক কীভাবে রাজনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করে, তা দেখার বিষয়।