চিনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত নেই, বিস্ফোরক দাবি মুখ্যমন্ত্রীর

চিন নিয়ে বিস্ফোরক দাবি অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্দুর (Arunachal CM Pema Khandu)। চিনের সঙ্গে ভারতের কোনো সরাসরি সীমান্ত নেই বলে দাবি করেছেন তিনু। জোর…

Arunachal CM Pema Khandu Claims No Direct Border with China, Stirs Geopolitical Debate

চিন নিয়ে বিস্ফোরক দাবি অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্দুর (Arunachal CM Pema Khandu)। চিনের সঙ্গে ভারতের কোনো সরাসরি সীমান্ত নেই বলে দাবি করেছেন তিনু। জোর দিয়ে বলেছেন যে, তাঁর রাজ্যের সীমানা তিব্বতের সঙ্গে সীমানা শেয়ার করে, এবং ১৯৫০ সালে চিন তিব্বতকে জোরপূর্বক দখল করার আগে এই অঞ্চলটি একটি স্বাধীন অঞ্চল ছিল। এই বিবৃতি ভারত-চিন সম্পর্কে একটি বড় প্রশ্ন তুলে ধরেছে এবং ভূ-রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই ঘোষণা দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, বিশেষ করে চিনের দ্বারা অরুণাচল প্রদেশকে ‘দক্ষিণ তিব্বত’ হিসেবে দাবি করার পটভূমিতে।

পেমা খান্দু এই মন্তব্যটি একটি সাক্ষাৎকারে করেন, যেখানে একজন পিটিআই সাংবাদিক তাকে জানতে চেয়েছিলেন যে, অরুণাচল প্রদেশের ১,২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমানা চিনের সঙ্গে শেয়ার করে। এর উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “না, আমরা চিনের সঙ্গে সীমানা শেয়ার করি না। আমরা তিব্বতের সঙ্গে সীমানা শেয়ার করি। ১৯৫০ সালে চিন তিব্বতকে জোরপূর্বক দখল করেছে। আইনত এখন তিব্বত চিনের অধীনে থাকলেও, মূলত আমাদের সীমানা তিব্বতের সঙ্গে।” তিনি আরও বলেন, “ভারতের কোনো রাজ্যের সরাসরি সীমানা চিনের সঙ্গে নেই।” এই বিবৃতি চিনের বিরুদ্ধে একটি স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণের ইঙ্গিত দেয় এবং তিব্বতের ঐতিহাসিক স্বাধীনতার পক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থন প্রকাশ করে।

   

তিব্বত ও দলাই লামার ভূমিকা
পেমা খান্দু তাঁর বক্তব্যে দলাই লামাকে ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘ভারত রত্ন’ দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই প্রস্তাবটি লেখার পরিকল্পনা করছেন। দলাই লামা, যিনি ১৯৫৯ সালে চিনের দখলের পর তিব্বত থেকে পলায়ন করে ভারতের ধর্মশালায় আশ্রয় গ্রহণ করেন, সারা বিশ্বে তিব্বতীয় সংস্কৃতি ও স্বায়ত্তশাসনের জন্য কাজ করছেন। ভারত তিব্বতীয় শরণার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করছে, এবং এই প্রস্তাবটি ভারত-তিব্বত সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে পারে। তবে এই পদক্ষেপ চিনের সঙ্গে সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, কারণ বেইজিং দলাই লামাকে ‘বিচ্ছিন্নবাদী’ হিসেবে দেখে।

যারলুং ত্সাংপো বাঁধ ও জল নিরাপত্তা
মুখ্যমন্ত্রী আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন—চিনের দ্বারা যারলুং ত্সাংপো নদীতে নির্মাণাধীন বিশ্বের বৃহত্তম জল বিদ্যুৎ প্রকল্প। তিনি এই প্রকল্পকে একটি ‘জল বোমা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা অরুণাচল প্রদেশ ও পূর্ব ভারতের জন্য একটি বিপর্যয়কর হুমকি। যারলুং ত্সাংপো, যা ভারতে ব্রহ্মপুত্র নদী হিসেবে প্রবাহিত হয়, এই বাঁধের কারণে জলের প্রবাহে পরিবর্তন আসতে পারে, যা অরুণাচল, অসম ও বাংলাদেশের জন্য বন্যা ও পরিবেশগত ক্ষতির কারণ হতে পারে। আন্তর্জাতিক গবেষণা (আন্তর্জাতিক জল সম্পদ উন্নয়ন জার্নাল, ২০২৪) অনুসারে, এই প্রকল্প চিনকে জলর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভারতের উপর প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ দেবে।

পেমা খান্দু জানিয়েছেন যে, চিন এই আন্তর্জাতিক জল ভাগাভাগি চুক্তিতে অংশগ্রহণ না করায় এই সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “যদি চিন এই চুক্তিতে থাকত, তাহলে নিচের অঞ্চলের জন্য জল প্রবাহ নিশ্চিত করা যেত। কিন্তু এখন আমাদের নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।” তিনি স্থানীয় আদি উপজাতি ও অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে একটি সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য সভা আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন।

Advertisements

ভারত-চিন সম্পর্কে প্রভাব
এই বিবৃতি ভারত ও চিনের মধ্যে চলমান সীমান্ত বিতর্ককে নতুন দিক থেকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধের পর থেকে অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে, এবং চিন বারবার এই অঞ্চলকে নিজের অংশ হিসেবে দাবি করেছে। পেমা খান্দুর এই অবস্থান চিনের দাবির বিরোধিতা করে এবং তিব্বতের ঐতিহাসিক স্বাধীনতার পক্ষে একটি দৃঢ় ভূমিকা নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, এই বিবৃতি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, বিশেষ করে যখন চিন অরুণাচলের উপর ভারতের উন্নয়ন কার্যক্রমের বিরোধিতা করছে।

জনমত ও আলোচনা
সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয় নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। অনেকে পেমা খান্দুর সাহসকে প্রশংসা করছেন, যিনি চিনের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলেছেন। অন্যদের মতে, এই বিবৃতি ভারতের পররাষ্ট্র নীতিতে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ আনতে পারে। তবে কিছু বিশ্লেষক সতর্কতা জানিয়েছেন যে, এই ধরনের বক্তব্য চিনের সঙ্গে সংঘাত বাড়াতে পারে, যা ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

সারা দেশে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে, এবং ভারত সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সবার চোখ রয়েছে। পেমা খান্দুর এই দৃঢ় ভূমিকা ভারতের সীমান্ত নীতি ও তিব্বত সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে।