হিমন্তর (Himanta) উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত। একের পর এক বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে অসম কে এগিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর মুখ্যমন্ত্রী। এবার চা বাগান এলাকার শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে চলেছে অসম সরকার । মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে যে, ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে চা বাগান এলাকায় আরও ৮০টি আদর্শ বিদ্যালয় (মডেল স্কুল) খোলা হবে।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে চা বাগানের শ্রমিক সম্প্রদায়ের শিশুদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ আরও প্রসারিত হবে। এই স্কুলগুলিতে আধুনিক শিক্ষার সুবিধা, যেমন স্মার্ট ক্লাসরুম এবং মধ্যাহ্ন ভোজন প্রকল্পের মতো সুবিধা থাকবে, যা শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করবে।
চা বাগানে শিক্ষার প্রসার (Himanta)
অসমের (Himanta) চা বাগান এলাকাগুলি ঐতিহাসিকভাবে শিক্ষার ক্ষেত্রে অনগ্রসর। এই অঞ্চলের শ্রমিক সম্প্রদায়ের শিশুরা প্রায়ই অর্থনৈতিক চাপ এবং শিক্ষার অভাবের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় । বিশেষত ক্লাস ৮ এবং ৯-এ ড্রপআউটের হার উদ্বেগজনক ছিল। তবে, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে অসম সরকার এই সমস্যার সমাধানে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে।
২০২১ সালে চা বাগান এলাকায় প্রথম সেট আদর্শ বিদ্যালয় চালু হয়েছিল, যার সংখ্যা বর্তমানে ১১৮-এ পৌঁছেছে। এই স্কুলগুলি সিবিএসই পাঠ্যক্রমের অধীনে পরিচালিত হয় এবং ৯৬% থেকে ১০০% পাসের হার অর্জন করেছে, যা শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
নতুন ঘোষিত ৮০টি স্কুল এই সাফল্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই স্কুলগুলি চা বাগানের ৮০০টি এলাকায় ২০০টি আদর্শ বিদ্যালয় স্থাপনের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ। মুখ্যমন্ত্রী শর্মা (Himanta) জানিয়েছেন, “আমরা চা বাগানের শিশুদের জন্য গুণগত শিক্ষার সুযোগ প্রদানে বদ্ধপরিকর। এই নতুন স্কুলগুলি শুধু শিক্ষার মান উন্নত করবে না, বরং শিক্ষার্থীদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।”
আধুনিক সুবিধা ও শিক্ষার উন্নয়ন
নতুন স্কুলগুলিতে স্মার্ট বোর্ড, স্মার্ট ক্লাসরুম এবং ডিজিটাল শিক্ষার সুবিধা থাকবে, যা শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করবে। এছাড়া, মধ্যাহ্ন ভোজন প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হবে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করবে। মুখ্যমন্ত্রী শর্মা (Himanta) জানিয়েছেন, “আমরা শুধু শিক্ষা নয়, শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নের দিকে নজর দিচ্ছি।
স্মার্ট ক্লাসরুম এবং পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে আমরা তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে চাই।”এছাড়া, অসম সরকার হ্যান্স ফাউন্ডেশনের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করছে, যারা আগামী পাঁচ বছরে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে চা বাগানের স্কুলগুলির উন্নয়নে। এই অর্থ স্কুলের অবকাঠামো উন্নত করা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য আরও সুযোগ-সুবিধা তৈরিতে ব্যয় হবে।
ড্রপআউট হার কমানোর প্রচেষ্টা
চা বাগান এলাকায় ড্রপআউট (Himanta) হার একটি বড় সমস্যা। অর্থনৈতিক চাপের কারণে অনেক শিক্ষার্থী, বিশেষত ক্লাস ৮ এবং ৯-এ, পড়াশোনা ছেড়ে চা বাগানে বা কারখানায় কাজ শুরু করে। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই হার জাতীয় গড়ের কাছাকাছি এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী শর্মা (Himanta) জানিয়েছেন, “আমরা ড্রপআউট হার কমাতে কাজ করছি। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশিত হবে।”
সম্প্রতি, অসম সরকার উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার সুযোগ প্রবর্তন করেছে, যা বিশেষত মেয়েদের ড্রপআউট হার কমাতে সাহায্য করবে। নিকটবর্তী উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের অভাব ছিল এই সমস্যার একটি বড় কারণ। নতুন স্কুলগুলির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শিক্ষক নিয়োগ ও পরিকাঠামো উন্নয়ন
অসমের (Himanta) শিক্ষা বিভাগ সম্প্রতি ৪,৫০০ শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যা সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষকের ঘাটতি পূরণ করবে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলগুলির জন্য উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, শিক্ষা মন্ত্রী রানোজ পেগু জানিয়েছেন, বিশ্বনাথ জেলার মাজুলিগড়ে একটি আদর্শ আবাসিক স্কুল কলেজে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কোচ বদলেও বদলায়নি ভাগ্য, ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বিশাল পতন ভারতের
চা বাগান সম্প্রদায়ের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি
চা বাগানের (Himanta) শ্রমিক সম্প্রদায়ের জন্য অসম সরকারের এই উদ্যোগ শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। সম্প্রতি, শ্রমমন্ত্রী রূপেশ গোয়ালা ঘোষণা করেছেন যে, চা শ্রমিকদের জন্য জমির অধিকার সংক্রান্ত একটি নতুন আইন অক্টোবর বা নভেম্বরের মধ্যে কার্যকর হবে। এছাড়া, শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ২৫০ টাকায় উন্নীত করা হবে। এই পদক্ষেপগুলি চা বাগান সম্প্রদায়ের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অসম সরকারের এই উদ্যোগ চা বাগান এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আধুনিক শিক্ষার সুযোগ, উন্নত পরিকাঠামো এবং ড্রপআউট হার কমানোর প্রচেষ্টার মাধ্যমে রাজ্য সরকার শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ৮০টি নতুন স্কুল শুধু শিক্ষার প্রসারই নয়, বরং চা বাগান সম্প্রদায়ের সামগ্রিক উন্নয়নের একটি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।