চর্মশিল্পে দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় রাজ্য হিসেবে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ। বৃহস্পতিবার সংসদের বাণিজ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে উঠে এল এই তথ্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বণিকসভা ও শিল্পমহলের প্রতিনিধিদের সামনে বাংলার চর্মশিল্পের উন্নয়ন নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। চমকপ্রদভাবে, উত্তরপ্রদেশের কানপুরের বিজেপি সাংসদ রমেশ অবস্তিও এই আলোচনায় বাংলার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সূত্রের খবর, বৈঠকে যখন ট্যানারি শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষণ চলছিল, তখন রমেশ অবস্তি স্বীকার করেন যে বর্তমানে দেশের মধ্যে চর্মশিল্পে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি করেছে পশ্চিমবঙ্গ। তিনি বলেন, “এক সময়ে চর্মশিল্প মানেই কানপুর ছিল একচ্ছত্র আধিপত্যের জায়গা। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। পশ্চিমবঙ্গ চমৎকারভাবে এই শিল্পে এগিয়ে গেছে।”
বৈঠকে আরও আলোচিত হয়, কীভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ট্যানারি শিল্পের পরিকাঠামো উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ‘সিঙ্গেল উইন্ডো ক্লিয়ারেন্স সিস্টেম’ চালু হওয়ার পরেই শিল্পক্ষেত্রে অনুমোদন প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়েছে। এর ফলে রাজ্যে বিনিয়োগ উৎসাহ পেয়েছে, এবং বহুজাতিক সংস্থারাও বাংলা মুখী হতে শুরু করেছে।
রমেশ অবস্তি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল উইন্ডো নীতির ফলে শিল্পপতিরা এখন পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন। চর্মশিল্পে এর বড় সুফল মিলছে। এই উদ্যোগ অন্য রাজ্যগুলোর জন্যও উদাহরণ হতে পারে।”
প্রসঙ্গত, কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় চর্মশিল্প হাবগুলির মধ্যে অন্যতম। রাজ্যে প্রায় ৫০০-র বেশি ট্যানারি এখানে কাজ করে। প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও বাংলার চামড়া রপ্তানির পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। ইউরোপ, আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশ বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য আমদানি করে।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক সদস্য মনে করেন, বাংলার এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে সরকার ও বেসরকারি অংশীদারিত্বের সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং দক্ষ মানবসম্পদের উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।
তবে এই উন্নয়নের পথ সহজ ছিল না। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের নানা নিয়ম, আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ এবং কোভিড-পরবর্তী আর্থিক ধাক্কা—সব কিছু পেরিয়ে বাংলা আজ এই অবস্থানে পৌঁছেছে।
শিল্পমহলের একাংশ মনে করছেন, রমেশ অবস্তির মন্তব্য এক দৃষ্টান্ত। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাংসদ হয়েও তিনি যে নিরপেক্ষভাবে বাস্তবটা মেনে নিয়েছেন, তা যথেষ্ট ইতিবাচক বার্তা বহন করে।
সব মিলিয়ে, সংসদের বাণিজ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটির এই বৈঠকে বাংলার চর্মশিল্প নিয়ে যে সম্মান ও স্বীকৃতি মিলেছে, তা রাজ্যের শিল্পনীতির পক্ষেই একপ্রকার সিলমোহর বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।