Q1 FY26-এ TCS-এর মুনাফায় ৬% ঊর্ধ্বগতি

ভারতের বৃহত্তম আইটি পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS), এপ্রিল-জুন ২০২৫ ত্রৈমাসিকে (Q1 FY26) ৬ শতাংশ বছর-ওভার-বর্ষ মুনাফা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের চমক দিয়েছে। এই…

Andhra Pradesh Allots Land to TCS for 99 Paise in Vizag

ভারতের বৃহত্তম আইটি পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS), এপ্রিল-জুন ২০২৫ ত্রৈমাসিকে (Q1 FY26) ৬ শতাংশ বছর-ওভার-বর্ষ মুনাফা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের চমক দিয়েছে। এই সময়ে কোম্পানির নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১২,৭৬০ কোটি টাকা। বাজার বিশ্লেষকরা যেখানে ১২,২৬৩ কোটি টাকার মুনাফার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, সেখানে টিসিএস তাদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। এই ফলাফল ১.৯ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাসকেও ছাপিয়ে গেছে।

তবে মুনাফার ক্ষেত্রে সুখবর থাকলেও, আয় (Revenue) নিয়ে কিছুটা হতাশা তৈরি হয়েছে। টিসিএসের রাজস্ব দাঁড়িয়েছে ৬৩,৪৩৭ কোটি টাকা, যা মাত্র ১.৩ শতাংশ বছর-ওভার-বর্ষ বৃদ্ধি। এই সংখ্যা ব্লুমবার্গের অনুমিত ৬৪,৬৩৬ কোটির চেয়ে কম।

   

এছাড়াও, কোম্পানি একটি অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ (interim dividend) ঘোষণা করেছে ১১ টাকা প্রতি শেয়ার। শেয়ারহোল্ডারদের জন্য রেকর্ড তারিখ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ জুলাই ২০২৫ এবং লভ্যাংশ প্রদানের তারিখ ৪ আগস্ট ২০২৫। আয়ের রিপোর্টের আগে টিসিএসের শেয়ারের দাম সামান্য ০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩,৩৯৭.১ টাকায় বন্ধ হয়।

ইবিট মার্জিনে উন্নতি:
এই ত্রৈমাসিকে কোম্পানির ইবিট (EBIT) মার্জিন ৩০ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪.৫ শতাংশে। টিসিএসের সিইও এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর কে কৃষ্ণিভাসন জানান, “বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে চাহিদার সংকোচন দেখা দিয়েছে। তবে ইতিবাচক দিক হলো, আমাদের নতুন পরিষেবাগুলি ভালোভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই ত্রৈমাসিকে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সাইন করেছি।”

ত্রৈমাসিকের মোট চুক্তির মূল্য (Total Contract Value বা TCV) দাঁড়িয়েছে $৯.৪ বিলিয়ন, যা পূর্ববর্তী ত্রৈমাসিকের $১২.২ বিলিয়নের চেয়ে কম হলেও, বিশ্লেষকদের $৮–৯ বিলিয়ন অনুমানের চেয়ে বেশি। কোম্পানির সিএফও সমীর সেক্সারিয়া বলেন, “আমরা দীর্ঘমেয়াদি এবং টেকসই বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছি। পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েও আমরা স্থিতিশীল মার্জিন ধরে রাখতে পেরেছি।”

Advertisements

নিয়োগ ও কর্মী ধরে রাখা:
টিসিএস এই ত্রৈমাসিকে ৬,০৭১ জন নতুন কর্মী নিয়োগ করেছে। ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মোট কর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬,১৩,০৬৯। তবে কোম্পানির কর্মী ছাড়ার হার বা Attrition Rate বেড়ে হয়েছে ১৩.৮ শতাংশ, যা গত ত্রৈমাসিকের ১৩.৩ শতাংশ এবং ডিসেম্বরে ১৩ শতাংশ ছিল।
টিসিএসের চিফ এইচআর অফিসার (CHRO) মিলিন্দ লাখাড বলেন, “টিসিএসের মূল চালিকাশক্তি হলো ট্যালেন্ট ডেভেলপমেন্ট। এই ত্রৈমাসিকে আমাদের কর্মীরা ১.৫ কোটি ঘণ্টা নতুন প্রযুক্তি ও উদীয়মান ট্রেন্ড শেখার পেছনে ব্যয় করেছেন। এটি আমাদের গ্রাহকদের জন্য রূপান্তরমূলক সেবা প্রদানে সহায়তা করছে। বর্তমানে, টিসিএসের প্রায় ১,১৪,০০০ কর্মী উচ্চ স্তরের এআই দক্ষতা অর্জন করেছেন, যা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।”

বাজারের প্রতিক্রিয়া:
টিসিএসের এই মিশ্র ফলাফলে বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। মুনাফার বৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও, রাজস্ব প্রত্যাশার চেয়ে কম হওয়া কিছুটা হতাশার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার কারণে বেশ কিছু বড় ক্লায়েন্ট ব্যয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে ধীর গতি অবলম্বন করছে। তবে বিশ্লেষকেরা আশা করছেন, আগামী প্রান্তিকে নতুন সেবা এবং চুক্তির প্রবাহ কোম্পানির রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা:
টিসিএস নেতৃত্ব স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে তারা নতুন প্রযুক্তি, বিশেষ করে এআই ও মেশিন লার্নিং, ক্লাউড, এবং সাইবার সিকিউরিটি সেবা প্রসারে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কে কৃষ্ণিভাসন বলেছেন, “আমরা কৌশলগত খাতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবো এবং ক্রমশ আমাদের গ্রাহকদের সাথে আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলবো। একইসাথে, কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈশ্বিক চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবো।”

এই ফলাফলের মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে, টিসিএস মুনাফার দিক থেকে সাফল্য পেলেও, রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য এখনো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। তবে কোম্পানির শক্তিশালী চুক্তি এবং টেকসই মানবসম্পদ উন্নয়নের উপর জোর ভবিষ্যতে আরও ভালো পারফরম্যান্সের ইঙ্গিত দিচ্ছে।