পেট্রোলের উপর করের প্রভাব কেন এক রাজ্যে সস্তা, অন্যটিতে বেশি? জেনে নিন বিস্তারিত

What Is Petrol Tax: ভারতে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি আজকাল প্রত্যেক মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে। হোক সে একজন অফিস কর্মী, ব্যবসায়ী, বা বাজারে সবজি কিনতে যাওয়া একজন…

India Fuel Price Update: No Major Changes; Chennai Sees Minor Dip in Petrol Rates

What Is Petrol Tax: ভারতে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি আজকাল প্রত্যেক মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে। হোক সে একজন অফিস কর্মী, ব্যবসায়ী, বা বাজারে সবজি কিনতে যাওয়া একজন গৃহিণী — সবার জন্যই জ্বালানির দাম একটি বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ফলে পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে যায়, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে বাজারের অন্যান্য জিনিসের উপরও। এর ফলস্বরূপ, সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি (inflation) ঘটে, যা সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়।
তবে আপনি কি কখনও খেয়াল করেছেন যে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম এক নয়? একই দেশে থেকেও কেন এমন তারতম্য? এর পেছনে মূল কারণ হলো কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের উপরোক্ত কর নীতি।

পেট্রোল ও ডিজেলের করের কাঠামো:
ভারতে পেট্রোলের চূড়ান্ত খুচরো মূল্যের প্রায় ৫৫ শতাংশ এবং ডিজেলের মূল্যের প্রায় ৫০ শতাংশ কর হিসেবে ধার্য করা হয়। এর মধ্যে একটি বড় অংশ কেন্দ্রীয় এক্সসাইজ ডিউটি (Excise Duty) এবং রাজ্য সরকারের ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (VAT)।

   

জ্বালানির মূল দামের গঠন নিম্নলিখিতভাবে হয়:
ক্রুড অয়েলের বেস প্রাইস (মূল দাম)
এক্সসাইজ ডিউটি
ডিলারের কমিশন ও চার্জ
ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (VAT) এবং সেলস ট্যাক্স

এই চারটি উপাদান মিলিয়ে পেট্রোল এবং ডিজেলের শেষ খুচরো দাম নির্ধারিত হয়। এর মধ্যে ক্রুড অয়েলের দাম, এক্সসাইজ ডিউটি এবং ডিলারের কমিশন সারা দেশে একরকম থাকে। কিন্তু ভ্যাট ও সেলস ট্যাক্স রাজ্যভেদে আলাদা হওয়ায় বিভিন্ন রাজ্যে পেট্রোল-ডিজেলের দাম ভিন্ন হয়।

কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কর:
পেট্রোল এবং ডিজেলে কেন্দ্র ও রাজ্য — উভয় সরকারই কর আরোপ করে। ২০২৫ সালের ৮ই এপ্রিল থেকে কেন্দ্র সরকার পেট্রোলে প্রতি লিটারে ১৩ টাকা এবং ডিজেলে প্রতি লিটারে ১০ টাকা এক্সসাইজ ডিউটি ধার্য করেছে। এর পাশাপাশি, প্রতিটি রাজ্য সরকার তাদের নিজস্ব ভ্যাট, সেলস ট্যাক্স এবং অন্যান্য সারচার্জ ধার্য করে থাকে। ফলে এক রাজ্যে যদি ভ্যাটের হার বেশি হয়, সেই রাজ্যে জ্বালানির দামও তুলনামূলক বেশি হয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মহারাষ্ট্র বা কর্ণাটকের মতো রাজ্যে পেট্রোলের উপর ভ্যাটের হার তুলনামূলক বেশি হওয়ায় সেখানে দাম বেশি থাকে। অন্যদিকে, দিল্লি বা পণ্ডিচেরির মতো কিছু রাজ্যে ভ্যাটের হার কম, ফলে জ্বালানির দামও কিছুটা কম থাকে।

কেন এই কর আরোপ করা হয়?
সরকার এই কর থেকে যে বিপুল রাজস্ব আয় করে, তা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হয়। যেমন — সড়ক, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প ইত্যাদি। ঠিক যেমনভাবে আয়কর বা জিএসটি থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হয়, তেমনি পেট্রোল ও ডিজেলের করও একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস।

Advertisements

সচেতন নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব:
ভারতের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আপনার দায়িত্ব হলো নিয়মিতভাবে পেট্রোল ও ডিজেলের দামে কত কর ধার্য হচ্ছে, তা জানা। প্রায়ই দেখা যায়, কিছু পেট্রোল পাম্প রাজ্যের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা আদায় করার চেষ্টা করে। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং প্রতারণার শামিল।

পেট্রোল পাম্পে গিয়ে আপনার গাড়িতে পেট্রোল বা ডিজেল ভরানোর আগে, সরকারি ঘোষিত মূল্যের সঙ্গে যাচাই করে নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে সরকার নির্ধারিত ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপ থেকে দৈনিক হালনাগাদ দাম জেনে নেওয়া যায়।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ:
বিশ্ববাজারে ক্রুড অয়েলের দাম ওঠানামা করে। ফলে ভারতের জ্বালানি বাজারও তার প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। তাছাড়া, পরিবেশবান্ধব জ্বালানির চাহিদা ও বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ক্রমবর্ধমান প্রবণতা ভবিষ্যতে এই কর কাঠামোর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। সরকারকে তখন নতুনভাবে কর কাঠামো পুনর্গঠন করতে হতে পারে।

জ্বালানির দাম শুধু একটি অর্থনৈতিক সূচক নয়, বরং এটি প্রত্যক্ষভাবে সাধারণ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে। তাই এর কর কাঠামো জানা ও সচেতন থাকা খুবই জরুরি। পেট্রোল-ডিজেলের কর থেকে প্রাপ্ত অর্থ দেশের অগ্রগতিতে ব্যবহার হয় ঠিকই, তবে এর ব্যবহারে স্বচ্ছতা এবং সঠিক ন্যায্যতা রক্ষা করা জরুরি।

আপনি যখন পরবর্তীবার পেট্রোল পাম্পে যাবেন, মনে রাখবেন — শুধুমাত্র গাড়ি নয়, পুরো অর্থনৈতিক চক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আপনি তখন চালাচ্ছেন। জ্বালানির করের বোঝা সঠিকভাবে বোঝা এবং তা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া প্রতিটি নাগরিকের সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব।