NBFC ও ব্যাংকের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক অংশীদারির ডাক অর্থমন্ত্রীর

নন-ব্যাংকিং ফাইনান্সিয়াল কোম্পানিগুলির (NBFC) মোট ঋণ অগ্রগতি বা গ্রস লোন অ্যাডভান্সের পরিমাণ মাত্র চার বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে যেখানে NBFC গুলির মোট…

GST 2.0 Reform on the Horizon: FM Nirmala Sitharaman Meets Industry Leaders for Tax Simplification

নন-ব্যাংকিং ফাইনান্সিয়াল কোম্পানিগুলির (NBFC) মোট ঋণ অগ্রগতি বা গ্রস লোন অ্যাডভান্সের পরিমাণ মাত্র চার বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে যেখানে NBFC গুলির মোট ঋণ ছিল ₹২৪ লক্ষ কোটি, সেখানে ২০২৫ সালের মার্চে এই অঙ্ক পৌঁছেছে ₹৪৮ লক্ষ কোটি টাকায়। বুধবার নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত NBFC সিম্পোজিয়াম ২০২৫-এ এই তথ্য জানিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, “এই বৃদ্ধি NBFC সেক্টরের ক্ষমতা এবং সম্ভাবনার স্পষ্ট প্রমাণ।”

তিনি বলেন, NBFC গুলি এমন সব খাতে ঋণ পৌঁছে দিচ্ছে, যেগুলি ঐতিহাসিকভাবে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা থেকে বঞ্চিত ছিল বা উপেক্ষিত ছিল। ক্ষুদ্র ব্যবসা, স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাহকেরা NBFC গুলির মাধ্যমে সহজেই ঋণ পাচ্ছেন। এর ফলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি (financial inclusion) অনেকটাই বেগ পেয়েছে।

   

বর্তমানে ভারতের NBFC ইকোসিস্টেমে ৯ হাজারেরও বেশি নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বৃহৎ পরিকাঠামো ঋণদাতা, মাইক্রোফাইনান্স প্রদানকারী সংস্থা এবং বিভিন্ন সম্পদ-সমর্থিত (asset-backed) ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান। একসাথে মিলে এই প্রতিষ্ঠানগুলি জনগণের নানাবিধ ঋণ চাহিদা পূরণ করছে। কোটি কোটি নাগরিক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য NBFC গুলি আজ প্রথম আর্থিক সহায়তার দরজা।

অর্থমন্ত্রী জানান, সাম্প্রতিক সময়ে RBI কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন ব্যাংকের ঋণ প্রদানে রিস্ক ওয়েট পুনঃস্থাপন এবং আর্থিক শর্ত শিথিলকরণ। এর ফলে NBFC সেক্টরের ঋণ প্রবাহের সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং সেক্টরের তহবিল সংগ্রহের পরিবেশ আরও শক্তিশালী হবে।

তিনি আরও বলেন, “RBI-এর সাম্প্রতিক পদক্ষেপে NBFC গুলির তহবিল সংগ্রহের খরচ কমানো হয়েছে। আমি NBFC গুলিকে অনুরোধ করছি, এই সুবিধা যেন সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে NBFC সেক্টরকে সমর্থন করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং আমরা সর্বদা একটি প্রতিক্রিয়াশীল নীতি পরিবেশ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।”

NBFC সেক্টরের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা একটি পরামর্শমূলক (consultative) পদ্ধতিতে বিশ্বাস করি। NBFC গুলির সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসা প্রতিটি বিষয় আমরা যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখব।”

NBFC এবং ব্যাংকের মধ্যে গভীর সহযোগিতা আরও বাড়ানোর ওপর বিশেষ জোর দেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সহ-ঋণ (co-lending) ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যাংক এবং NBFC গুলির মধ্যে অংশীদারিত্ব আরও প্রাতিষ্ঠানিক এবং বিস্তৃত করা উচিত। একটি সুষ্ঠু ডিজিটাল কো-লোনিং আর্কিটেকচার, সাধারণ অনবোর্ডিং স্ট্যান্ডার্ড এবং ইন্টারঅপারেবল সার্ভিসিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হলে বঞ্চিত খাতে আরও সহজে ঋণ পৌঁছানো যাবে। একইসঙ্গে রিস্ক শেয়ারিং ও দক্ষতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”

Advertisements

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, “NBFC গুলি এখন আর ‘ছায়া ব্যাংক’ নয়। এদের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং তত্ত্বাবধান প্রমাণ করে যে, NBFC সেক্টর আজ ভারতের আর্থিক ব্যবস্থায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।”

তিনি উল্লেখ করেন, কিছু সিস্টেমেটিকালি ইম্পর্ট্যান্ট NBFC আকার এবং জটিলতায় এতটাই বড় হয়েছে যে, তাদের গভার্নেন্স এবং কমপ্লায়েন্স স্ট্যান্ডার্ড এখন অনেকটাই ব্যাংকের সমতুল্য। এটি NBFC সেক্টরের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যেখানে শক্তিশালী NBFC গুলি ভবিষ্যতে ব্যাংকে রূপান্তরিত হতে পারে। ফলে ভারতের আর্থিক খাতের একটি ধারাবাহিক প্রাতিষ্ঠানিক বৃদ্ধি সম্ভব হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, NBFC সেক্টরের এই বিস্তার দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে। অতীতে যেখানে ব্যাঙ্কের শাখা বা পরিষেবা পৌঁছায়নি, সেখানে NBFC গুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ক্ষুদ্র ব্যবসা, নতুন উদ্যোগ, এবং ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারগুলির জন্য সহজে ঋণ পাওয়ার পথ খুলে দিচ্ছে NBFC।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সরকারের এমন সমর্থন NBFC সেক্টরের প্রতি আস্থা বাড়াবে। একইসঙ্গে ডিজিটাল লেনদেন এবং ফিনটেক সহযোগিতার মাধ্যমে এই সেক্টর আগামী দিনে আরও বেশি আধুনিক, স্বচ্ছ এবং গ্রাহক-কেন্দ্রিক হয়ে উঠবে।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, NBFC গুলির ভবিষ্যতকে আরও দৃঢ় করতে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। নীতি সহায়তা, রেগুলেটরি শিথিলতা এবং প্রযুক্তিগত সমন্বয়ের মাধ্যমে NBFC সেক্টর ভারতের আর্থিক ব্যবস্থার এক শক্তিশালী স্তম্ভে পরিণত হবে।

অর্থমন্ত্রী সীতারামনের কথায়, “NBFC গুলি দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করছে। আগামী দিনে এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও শক্তিশালী করতে সরকার প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নেবে।”