‘এবার বিশ্বকাপ খেলব…’ দাবি তারকা ভারতীয় ফুটবলারদের

ছেলেদের জন্য বিশেষ কিছু না হলেও, সঙ্গীতা- মনীষা কল্যাণদের দাপটে ইতিহাস গড়েছে ভারতীয় মহিলা ফুটবল দল (Indian Football Team)। কয়েক দিন আগে ইতিহাস গড়ে এএফসি…

FIFA Womens World Cup the next mountain to climb for Indian Football Team

ছেলেদের জন্য বিশেষ কিছু না হলেও, সঙ্গীতা- মনীষা কল্যাণদের দাপটে ইতিহাস গড়েছে ভারতীয় মহিলা ফুটবল দল (Indian Football Team)। কয়েক দিন আগে ইতিহাস গড়ে এএফসি মহিলা এশিয়ান কাপে (AFC Womens Asian Cup) প্রথমবারের মতো যোগ্যতা অর্জন করেছে ভারত। যদিও উৎসবের ধুলো এখনো পড়েনি, আর দেশের মহিলা ফুটবল প্রেমীদের উত্তেজনা বাড়ছে দিন দিন।

অধিনায়ক সুইটি দেবী দলের বাকি ফুটবলার এবং সহায়ক কর্মীদের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে জানান, “সত্যিই ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এত মিশ্র অনুভূতি। মনে হয়েছিল এটি স্বপ্নের মতো, কিন্তু আমরা একে অপরকে বলছিলাম, হ্যাঁ, আমরা সফল হয়েছি। কারণ এহেন অনুভূতি বর্ণনা করা অসম্ভব। যারা মহিলা ফুটবলকে ভালোবাসেন, তারা বুঝবেন। এটি সত্যিই অতুলনীয়।”

   

এই জয় ভারতের মহিলা ফুটবলের জন্য এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ২৩ বছরের লম্বা অপেক্ষার পর প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন করা দল ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে পারে। এশিয়ান কাপের মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপের পথও নির্মিত হয়। তাই ব্লু টাইগ্রেসরা এখন বিশ্রাম নেওয়ার বদলে তাদের বড় লক্ষ্য, বিশ্বকাপের স্বপ্ন পূরণের প্রস্তুতি শুরু করেছে।

তিনি আরও যোগ করুন, “শৃঙ্গ ছোঁয়ার পর নতুন শৃঙ্গ আরো বড়। আমাদের আরো শিখতে ও বেড়ে উঠতে হবে। এশিয়ান কাপের যোগ্যতা পাওয়া হয়েছে, এবার লক্ষ্য বিশ্বকাপ। স্বপ্ন দেখতে থামব না।”

এতদিনে স্বপ্ন হারানোর অনেক ব্যথা পেরিয়ে এসেছে। ২০২২ সালের এএফসি মহিলা এশিয়ান কাপ, যা ভারতেই অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, কোভিডের কারণে দলকে নাম প্রত্যাহার করতে হয়েছিল। সেই বছর ব্লু টাইগ্রেসরা একমাত্র ম্যাচে ইরানের সঙ্গে ০-০ ড্র করেছিল, আর বিশ্বকাপের যোগ্যতা ছিল মাত্র তিন ম্যাচ দূরে। সেই স্বপ্ন এক লহমায় ভেঙে গিয়েছিল।

সঙ্গীতা বাসফোরে তখন বলেছিলেন, “সেই স্মৃতি এখনও ভাসছে, আফসোস এখনও আছে।” তবে এবার তিনি থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই গোল করে ভারতকে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ব মঞ্চে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন।

সুইটি দেবী বলেন, “গতবার যখন আমরা হোস্ট করছিলাম, খেলা হয়নি কোভিডের জন্য। কিন্তু এবার পুরো টুর্নামেন্ট খেলে আমরা যোগ্যতা অর্জন করেছি। ২৩ বছর পর আমরা আবার বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখছি।”

Advertisements

থাইল্যান্ডের বিপক্ষে জয় সহজ ছিল না। ভারত থেকে ২৪ ধাপ এগিয়ে এবং তাদের হাতে বিশ্বকাপ খেলেছে ইতিমধ্যে। এছাড়াও থাইল্যান্ডের কোচ ফুতোশি ইকেদা, যিনি ২০২৩ সালের বিশ্বকাপে জাপানকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন, তার দলকে ভারত বড় ব্যবধানে হারিয়েছে।

২৫ বছর বয়সে সুইটি দেবী যেভাবে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কোচ ছেত্রী কোয়ালিফায়ার চলাকালীন অধিনায়কদের বদলাচ্ছিলেন। সুইটি মঙ্গোলিয়ার বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সঙ্গীতা তিমুর লেস্তের বিরুদ্ধে, আর সানজু ইরাকের বিরুদ্ধে। তবে এই সাফল্য কেবল অধিনায়কের নয়, পুরো দলের। সুইটি বলেন, “অধিনায়ক হওয়া গর্বের, কিন্তু সাফল্য আমাদের সবার। সবাই সমান ভূমিকা রেখেছে। তাই এটি পুরো দলের এবং দেশের।”

এশিয়ান কাপের ড্র ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। ১২ দল ৩টি গ্রুপে ভাগ হবে। ভারত পট ৪-এ রয়েছে এবং সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হতে পারে: পট ১ থেকে অস্ট্রেলিয়া, জাপান বা কোরিয়া। পট ২ থেকে চীন, কোরিয়া রিপাবলিক বা ভিয়েতনাম। সর্বশেষ পট ৩ থেকে ফিলিপাইনস, চায়নিজ তাইপে বা উজবেকিস্তান।

গ্রুপের শীর্ষ দুই দল এবং দুই সেরা রানার-আপ কোয়ার্টার ফাইনালে যাবে। কোয়ার্টার ফাইনালের চার বিজয়ী দল ফিফা মহিলা বিশ্বকাপ (FIFA Womens World Cup) ব্রাজিল ২০২৭ জন্য সরাসরি যোগ্যতা পাবে। পরাজিতরা প্লে-অফে অংশ নিয়ে আরও দুটি স্থান নিশ্চিত করবে। এরপরও বাকি দুই দল আন্তঃকনফেডারেশন প্লে-অফে অংশ নিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়ার সুযোগ পাবে।

ভারতীয় মহিলা ফুটবল এখন বড় উচ্চতায় পৌঁছেছে। এখন শুধু পথ চিহ্নিত করতে হবে বিশ্বমঞ্চে পদার্পণের জন্য। ব্লু টাইগ্রেসদের স্বপ্ন এখনও জীবিত, আরও উঁচুতে পৌঁছানোর আগ্রহ তাদের চোখে স্পষ্ট। আগামী বছর এশিয়ান কাপ ও বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি শুরু, আর পুরো দেশ তাদের পাশে থাকবে।

FIFA Womens World Cup the next mountain to climb for Indian Football Team