এগরা: একুশে জুলাই শহীদ দিবসের প্রস্তুতি সভাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) শিক্ষক সংগঠনে ফের প্রকাশ্যে এল গোষ্ঠীকোন্দল। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে চলছে তীব্র মতবিরোধ, যা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলেও।
সম্প্রতি রাজ্য কমিটির নির্দেশে পূর্ব মেদিনীপুরে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল (TMC) প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (WBTPTA) নতুন জেলা কমিটি গঠিত হয়। আর তারপর থেকেই সংগঠনের পুরোনো ও নতুন নেতৃত্বের মধ্যে শুরু হয়েছে ঠাণ্ডা লড়াই। কাঁথি সাংগঠনিক জেলার একাংশ শিক্ষকদের অভিযোগ, নতুন কমিটি গঠনের পর থেকেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভিন্ন মিটিং-মিছিল এবং সাংগঠনিক সভা থেকে দূরে রাখা হচ্ছে।
এই অভিযোগ আরও জোরদার হয়েছে ১২ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভার প্রেক্ষিতে। সূত্র বলছে, কাঁথিতে অনুষ্ঠিত হতে চলা সেই সভার আমন্ত্রণপত্র থেকে বাদ পড়েছে চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের নাম। সংগঠনেরই এক সদস্য শুভেন্দু প্রামাণিক বলেন, “আমরা দেখছি সোশ্যাল মিডিয়ায় আমন্ত্রণপত্র ঘুরছে, যাতে চেয়ারম্যানের নাম নেই। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ব্যক্তি হাবিবুর রহমানকে কেউ অপছন্দ করতেই পারেন, কিন্তু তিনি চেয়ারম্যান—পদকে সম্মান জানানো উচিত।”
তবে এই অভিযোগ মানতে নারাজ নতুন জেলা কমিটির নেতৃত্ব। সংগঠনের বর্তমান জেলা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুমন দাস বলেন, “এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাদের মধ্যে কোনও গোষ্ঠীকোন্দল নেই। দলের রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের পরামর্শেই সমস্ত সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। যারা এমন অভিযোগ করছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য ব্যক্তিগত। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি ও আদর্শকে সামনে রেখেই কাজ করছি।”
তবে যাঁর নামকে ঘিরে এই বিতর্ক, সেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি। তাঁর তরফ থেকে এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য মেলেনি।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শহীদ দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির আগে শিক্ষক সংগঠনের অন্দরের এই মতপার্থক্য দলের সংগঠনের উপর প্রভাব ফেলতেই পারে। এক বিশ্লেষকের মতে, “একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ তৃণমূলের কাছে শুধু আবেগ নয়, রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনেরও জায়গা। এর আগে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিরোধ সামনে এলে তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলা হতো। কিন্তু এবার সেটা প্রকাশ্যে চলে এসেছে—এটা নিশ্চয়ই দলের পক্ষে সুখবর নয়।”
পূর্ব মেদিনীপুরের এই ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে, নিচুতলার সংগঠনে এখনও অনেক ‘মেরামতির’ প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষক সংগঠনের মতো একটি সামাজিকভাবে প্রভাবশালী সংগঠনের মধ্যে যদি বারবার বিভাজনের ছবি উঠে আসে, তবে তা আগামী দিনে সংগঠনের গতিপথে প্রভাব ফেলতে বাধ্য।