মহারাষ্ট্রের থানে জেলায় এক স্কুলে চরম লজ্জাজনক এবং অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকলো সমাজ। অভিযোগ, ঋতুস্রাব (Period) হয়েছে কি না তা জানার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ একের পর এক ছাত্রীকে বাধ্য করেন পোশাক খুলে যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করাতে। গোটা রাজ্যে নিন্দার ঝড় উঠেছে এই ঘটনার পর। ইতিমধ্যেই পুলিশ স্কুলের প্রিন্সিপাল ও এক পরিচারিকাকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকিদের বিরুদ্ধেও চলছে তদন্ত।
ঘটনাটি ঘটেছে থানের আর.এস. দামানি স্কুলে, মঙ্গলবার ৯ জুলাই। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ওইদিন স্কুলের শৌচালয়ে রক্তের (Period) দাগ দেখতে পান স্কুল কর্তৃপক্ষ। এরপরই শুরু হয় এক লজ্জাজনক অধ্যায়। পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীরা পড়াশোনা করে ওই স্কুলে। অভিযোগ, রক্তের দাগের ছবি দেখিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানতে চান, কোন কোন ছাত্রী ঋতুস্রাব (পিরিয়ড) শুরু করেছে।
এই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে স্কুলের প্রিন্সিপাল নির্দেশ দেন যে, যাদের পিরিয়ড হচ্ছে তারা যেন একটি লাইনে দাঁড়ায় এবং যাদের হচ্ছে না তারা যেন অন্য লাইনে দাঁড়ায়। এরপর যেসব ছাত্রীর পিরিয়ড হয়নি, তাদের এক এক করে শৌচাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, সেখানে এক মহিলা পরিচারিকা তাদের যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করেন এবং অন্তর্বাস খোলার নির্দেশ দেন। এই ঘটনায় কেবল ছাত্রীরা নয়, অভিভাবকরাও ভেঙে পড়েন আতঙ্কে ও অপমানে।
স্কুলের বাইরে অভিভাবকরা বিক্ষোভ দেখান। তারা স্পষ্ট জানান, এমন কাণ্ড শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও শিশুদের উপর আঘাত হেনেছে। অনেক ছাত্রীর মধ্যে তৈরি হয়েছে গভীর ভয় ও মানসিক চাপ। অভিভাবকদের একাংশ বলেন, “আমাদের মেয়েরা নিরাপদ নয় স্কুলের মধ্যেই! এটা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
ঘটনার পরই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, স্কুলের প্রিন্সিপাল, দুই শিক্ষিকা, এক পরিচারিকা ও দু’জন ট্রাস্টি-সহ মোট ছ’জনের বিরুদ্ধে পকসো (POCSO) আইনের একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রিন্সিপাল ও পরিচারিকাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে।
সামাজিক সংগঠনগুলিও মুখ খুলেছে এই ঘটনার পরে। নারী অধিকার কর্মীরা বলেন, “এই ঘটনা শিশুদের শরীর ও মন—দুটোকেই আঘাত করেছে। এর পেছনে যারা আছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।” শিশুর প্রতি এমন অমানবিক আচরণ নিয়ে জাতীয় শিশুকল্যাণ কমিশনও রিপোর্ট তলব করেছে।
রাজ্য শিক্ষা দপ্তর থেকেও জানানো হয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং প্রয়োজনে স্কুলের স্বীকৃতি বাতিলের সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে।
এখন প্রশ্ন উঠছে—যেখানে মেয়েদের ঋতুস্রাব নিয়ে সমাজে এখনও একাধিক কুসংস্কার ও সংকোচ রয়েছে, সেখানে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে এমন অপমানজনক এবং গর্হিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে? যে প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা ও শিক্ষার আশ্বাস দেয়, সেখানে এই ধরনের মানসিক নির্যাতনের ঘটনা শুধু লজ্জার নয়, ভয়াবহও।