ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (SEBI) বুধবার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পেশ করেছে। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলো (CRA) ভবিষ্যতে অন্য আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রকের (Financial Sector Regulators বা FSR) অধীনে থাকা আর্থিক যন্ত্রের রেটিং করতে পারবে, এমনকি সেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি যদি রেটিং সংক্রান্ত কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা না দিয়ে থাকে, তবুও তা অনুমোদিত হবে।
বর্তমান সেবি রেগুলেশনের অধীনে, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলি শুধুমাত্র সেই সিকিউরিটিজের রেটিং দিতে পারে, যেগুলি কোনো স্বীকৃত স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত বা তালিকাভুক্তির প্রস্তাবিত। তবে, সেবির নিয়মে বলা আছে, অন্য কোনো আর্থিক নিয়ন্ত্রকের গাইডলাইনের অধীনে থাকলে সেসব প্রোডাক্ট, সিকিউরিটি বা ইস্যুয়ারের রেটিং করা বাধা নয়।
এই প্রস্তাবিত নীতিতে সেবি বলেছে, CRA-রা সেসব কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে, যা সেবির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, তবে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘‘CRA অন্যান্য আর্থিক নিয়ন্ত্রকের অধীনে থাকা আর্থিক যন্ত্রের রেটিং করতে পারবে, যদি সেই নিয়ন্ত্রক কোনো নীতিমালা, যোগ্যতার মানদণ্ড, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগকারী অভিযোগের নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া, পরিদর্শন, প্রয়োগ ও দাবি সংক্রান্ত কোনো নিয়মাবলি দিয়ে থাকে, তা অবশ্যই মানতে হবে।’’
তবে সেবি স্পষ্ট করেছে যে, এই ধরনের রেটিং কার্যক্রম শুধুমাত্র ফি-ভিত্তিক এবং নন-ফান্ড ভিত্তিক হতে হবে। এছাড়া, এসব কার্যক্রমকে সম্পূর্ণ ‘আর্মস লেন্থ’ ভিত্তিতে পরিচালনা করতে হবে, অর্থাৎ পৃথক ও নিরপেক্ষভাবে। এজন্য, এক বা একাধিক Separate Business Unit (SBU) গঠন করতে হবে, যা ‘চাইনিজ ওয়াল’ দ্বারা আলাদা থাকবে এবং সেবি-নিয়ন্ত্রিত মূল কার্যক্রম থেকে সম্পূর্ণ রিং-ফেন্স করা থাকবে।
সেবি আরও বলেছে, প্রস্তাব কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে সব নন-সেবি নিয়ন্ত্রিত কার্যক্রম এই পৃথক ইউনিটে স্থানান্তর করতে হবে। এসব পৃথক ইউনিটের নিজস্ব অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাও রাখতে হবে, যা সেবির নিয়ন্ত্রিত কার্যক্রমের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে।
এছাড়া, এই ইউনিটের মধ্যে সব রেকর্ড স্বতন্ত্রভাবে রাখতে হবে এবং এই ইউনিটের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদেরও সেবি নিয়ন্ত্রিত কার্যক্রমের কর্মীদের থেকে পৃথক করতে হবে। তবে, বিশেষ প্রক্রিয়া অনুসরণ এবং বোর্ডের অনুমোদনসাপেক্ষে ‘চাইনিজ ওয়াল’ অতিক্রমের অনুমতি কিছু ক্ষেত্রে দেওয়া যেতে পারে। এই নিয়ম অবশ্য মূল ব্যবস্থাপনা কর্মীদের (key managerial personnel) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
সেবি আরও বলেছে, CRA-র ন্যূনতম নেট ওয়ার্থের শর্ত, যা CRA রেগুলেশনের অধীনে নির্ধারিত, তা নন-সেবি কার্যক্রমের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যাবে না।
প্রতিটি CRA-কে তাদের ওয়েবসাইটে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে, কোন কার্যক্রম সেবির নিয়ন্ত্রিত নয়, এবং সেইসঙ্গে একটি ডিসক্লেইমার দিতে হবে যে, সেসব কার্যক্রমের জন্য সেবির বিনিয়োগকারী সুরক্ষা প্রক্রিয়া প্রযোজ্য নয়। এই ডিসক্লেইমার নন-সেবি নিয়ন্ত্রিত কার্যক্রম সংক্রান্ত রেটিং রিপোর্টেও স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করতে হবে।
কোনো কার্যক্রম গ্রহণের আগে CRA-কে লিখিত আকারে ক্লায়েন্ট, বেনিফিশিয়ারি ও কনট্রাক্ট পার্টির কাছে এই তথ্য জানাতে হবে যে, এ কার্যক্রম সেবির নিয়ন্ত্রিত নয়। সব এগ্রিমেন্ট, চুক্তি, ও বিজনেস কমিউনিকেশনেও এটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
এছাড়া, স্টেকহোল্ডারদের স্পষ্টভাবে নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা কার্যক্রমের প্রকৃতি, ঝুঁকি ও সেবির সুরক্ষা না থাকার বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
যেসব নন-সেবি নিয়ন্ত্রিত কার্যক্রম বর্তমানে চালু আছে, সেসবের ক্ষেত্রেও এই ডিসক্লেইমার দিতে হবে এবং স্টেকহোল্ডারের অনুমোদন নিতে হবে। এই প্রক্রিয়ার রিপোর্ট সেবিকে ছয় মাসের মধ্যে জমা দিতে হবে।
প্রতিটি CRA-কে অর্ধবার্ষিক অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টের অংশ হিসেবে একটি অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হবে, যেখানে বলা থাকবে যে, প্রস্তাবিত নিয়মাবলির যথাযথ অনুসরণ করা হয়েছে। এই রিপোর্ট অবশ্যই বোর্ড অফ ডিরেক্টরস দ্বারা পর্যালোচিত ও অনুমোদিত হতে হবে। সেবি এই প্রস্তাবের উপর জনমত গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছে এবং ৩০ জুলাই, ২০২৫ পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছে।
শিল্পের বিভিন্ন অংশগ্রহণকারী ও স্টেকহোল্ডারের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুরোধের প্রেক্ষিতে এই প্রস্তাব আনা হয়েছে। তাদের মতে, অন্যান্য আর্থিক নিয়ন্ত্রকের অধীনে থাকা আর্থিক পণ্য ও যন্ত্রের রেটিং কার্যক্রম CRA-দের বিদ্যমান ব্যবসার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এর ফলে কার্যক্রমে সমন্বয় বৃদ্ধি পাবে এবং বাজারে যে শূন্যতা আছে, তা পূরণ হবে।
এই প্রস্তাব কার্যকর হলে রেটিং এজেন্সির জন্য নতুন সুযোগের দরজা খুলে যাবে এবং এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এর পাশাপাশি সেবি বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কঠোর শর্ত আরোপ করেছে।