ইসলামি আইনে ফাঁসি থেকে বাঁচতে পারেন ভারতীয় হিন্দু নিমিশা, ‘রক্তের মূল্য’ আইন কী?

খুনের মামলায় দোষী প্রমানিত। অতএব ফাঁসি হবে। আগামী ১৬ জুলাই ভারতীয় নার্স নিমিশাকে (Nimisha Priya) ফাঁসি দেবে ইয়েমেন (Yemen) সরকার। দেশটিতে ক্ষমতাসীন হুথি গোষ্ঠী কড়া…

Indian Nurse Nimisha Priya Set for Execution in Yemen on July 16 Amid Death Row Plea

খুনের মামলায় দোষী প্রমানিত। অতএব ফাঁসি হবে। আগামী ১৬ জুলাই ভারতীয় নার্স নিমিশাকে (Nimisha Priya) ফাঁসি দেবে ইয়েমেন (Yemen) সরকার। দেশটিতে ক্ষমতাসীন হুথি গোষ্ঠী কড়া ইসলামি শাসন অর্থাৎ ‘শরিয়া’ অনুসারে বিচার চালিয়ে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে। কেরলের বাসিন্দা নিমিষা প্রিয়া এক ইয়েমেনি নাগরিককে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

নিমিশাকে বাঁচানোর জন্য একটি মাত্র আইনি পথ খোলা আছে বলে জানিয়েছেন কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যরা, তারা এই ভারতীয় নার্সের হয়ে আইনি লড়াই চালিয়েছেন। এরা বলছেন, ইয়েমেনে ইসলামি শাসন ‘শরিয়া’ চলে। এই কড়া ধর্মীয় আইনের একটি ধারায় ‘রক্তের মূল্য’ চুকিয়ে মৃত্যুদণ্ড রোধ করা যেতে পারে।

   

রক্তের মূল্য আইন বা ব্লাড মানি কী?

ইসলামি আইন অনুযায়ী কোনও হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির পরিবার যদি ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছে “ব্লাড মানি” বা রক্তমূল্য হিসেবে ক্ষতিপূরণ দেয় এবং ভুক্তভোগীর পরিবার সেটি গ্রহণ করে, তাহলে মৃত্যুদণ্ড বাতিল হতে পারে। ইসলামি আইনে রক্তমূল্য আইন কার্যকর আগেও করা হয়েছে। এতে মৃত্যুদন্ডের আসামী বেঁচে গিয়েছেন। এই ইসলামি শরিয়া আইনেই ভারতীয় হিন্দু নারী নিমিশা বাঁচতে পারেন।

বিবিসি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত মাহদির পরিবার যদি নিমিশা প্রিয়াকে ক্ষমা করে দেয়, তাহলেই কেবল তাকে বাঁচানো সম্ভব। ওই নার্সের আত্মীয়স্বজন এবং সমর্থকরা মৃত মাহদির পরিবারকে ১০ লাখ ডলার ‘রক্তের মূল্য’ দানের প্রস্তাব করেছে। ‘সেভ নিমিশা প্রিয়া’ কাউন্সিলের একজন সদস্য বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা এখনো তাদের ক্ষমা বা অন্য কোনো দাবির জন্য অপেক্ষা করছি।’ 

নিমিশা যে কারণে ফাঁসির আসামী

নিমিশা প্রিয়া ইয়েমেনে তার ব্যবসায়িক অংশীদার তালাল আবদো মাহদিকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডিত। তদন্তে উঠে আসে, ২০১৪ সালে ইয়েমেনে একটি ক্লিনিক খোলেন নিমিশা। ইয়েমেনের নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় কোনও ব্যক্তির সঙ্গে অংশীদারিত্ব ছাড়া ব্যবসা শুরু করা যায় না, তাই নিমিশা যোগাযোগ করেন স্থানীয় তালাল আব্দো মাহদির সঙ্গে।

Advertisements

পরে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। নিমিশা পরে মাহদির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। মাহদিকে ২০১৬ সালে গ্রেফতার করা হলেও পরে মুক্তি পেয়ে তিনি নিমিশাকে হুমকি দিতে থাকেন বলে অভিযোগ।

নিমিষার পরিবার দাবি করে, মাহদি তার পাসপোর্ট আটকে করে রেখেছিলেন, তাই সেটি ফিরে পেতে তিনি মাহদিকে ঘুমের ওষুধ ইনজেকশন দেন। কিন্তু অতিরিক্ত ডোজে তার মৃত্যু হয়। তার দেহ ২০১৭ সালে একটি জলের ট্যাঙ্কে পাওয়া যায়। অভিযোগ, নিমিষা খুন করেছিলেন। ২০১৮ সালে নিমিশা প্রিয়া ইয়েমেন ছাড়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। শুরু হয় হত্যা মামলা।

নিমিশার আইনজীবী সুবাস চন্দ্রন জানিয়েছেন একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম গঠিত হয়েছে নিমিশাকে বাঁচাতে। তারা ‘ব্লাড মানি’-এর জন্য ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিল। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, ভারতীয় দূতাবাস নিযুক্ত আইনজীবী আবদুল্লাহ আমীর প্রাক আলোচনার জন্য ২০,০০০ ডলার দাবি করেন।

ভারতের বিদেশ মন্ত্রক আমীরকে ১৯,৮৭১ ডলার প্রদান করেছিল, কিন্তু তিনি মোট ৪০,০০০ ডলারের দাবিতে আলোচনায় অগ্রসর হতে অস্বীকার করেন। প্রথম কিস্তির টাকা জনসাধারণের থেকে সংগৃহীত হলেও পরে অর্থের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।