ভারতের ব্যাংকিং সেক্টর ক্রমেই আরও ডিজিটাল হচ্ছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (Bank Account) খোলা থেকে শুরু করে টাকা ট্রান্সফার—সবই এখন কয়েকটি ক্লিকেই সম্ভব। তবে এতদিন অ্যাকাউন্ট বন্ধের জন্য গ্রাহকদের ব্যাংকের শাখায় যেতে হত, ফর্ম পূরণ করতে হত এবং দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হত। অবশেষে সেই সমস্যার সমাধান এসেছে। এখন বেশ কয়েকটি ব্যাংক অনলাইনেই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার সুবিধা চালু করেছে।
স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (SBI), ICICI ব্যাংক, HDFC ব্যাংক, অ্যাক্সিস ব্যাংক-সহ একাধিক বড় ব্যাংক ইতিমধ্যেই এই পরিষেবা শুরু করেছে। অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে খুব সহজেই গ্রাহকরা তাদের অব্যবহৃত বা অনাবশ্যক সেভিংস অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে পারছেন।
কেন বাড়ছে অনলাইন পরিষেবা চাহিদা?
মোবাইল এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং গ্রাহকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ব্যাংকগুলো ক্রমাগত ডিজিটাল পরিষেবার ওপর জোর দিচ্ছে। করোনা মহামারির পর থেকে অনলাইন পরিষেবার চাহিদা আরও অনেক গুণ বেড়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার অ্যাকাউন্ট বন্ধের প্রক্রিয়াও ডিজিটাল হল।
কীভাবে অনলাইনে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করবেন?
যদি আপনি অনলাইনে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে চান, তবে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
প্রথম ধাপ: আপনার ব্যাংকের অফিসিয়াল ইন্টারনেট বা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপে লগ-ইন করুন।
দ্বিতীয় ধাপ: ‘Service Requests’ বা ‘Account Services’ সেকশনে যান।
তৃতীয় ধাপ: অনলাইন অ্যাকাউন্ট ক্লোজার ফর্মটি পূরণ করুন এবং অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার কারণ উল্লেখ করুন।
চতুর্থ ধাপ: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট (যেমন পরিচয়পত্রের কপি, আবেদনপত্র) আপলোড করুন।
পঞ্চম ধাপ: বাকি অর্থ অন্য কোনো অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করুন বা অন্য কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ডিটেইলস দিন যেখানে অবশিষ্ট টাকা পাঠানো হবে।
ষষ্ঠ ধাপ: OTP বা ইমেইল ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে আপনার অনুরোধটি কনফার্ম করুন।
সপ্তম ধাপ: সঠিকভাবে সাবমিশন হয়ে গেলে ব্যাংক থেকে একটি কনফার্মেশন মেসেজ পাওয়া যাবে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
অনলাইন অ্যাকাউন্ট ক্লোজার সুবিধা চালু হলেও, কিছু ব্যাংক এখনও অব্যবহৃত চেকবই ও ডেবিট কার্ড শাখায় জমা দিতে বলছে। কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাক্ষরের প্রয়োজন হতে পারে যাচাইয়ের জন্য। সেক্ষেত্রে একবার হলেও শাখায় যেতে হতে পারে।
অ্যাকাউন্ট বন্ধের আগে সব ধরনের ঋণ, EMI, অথবা অটো-ডেবিট ম্যান্ডেটগুলো বন্ধ বা অন্য কোনো অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করা আবশ্যক। অন্যথায়, ভবিষ্যতে অনাকাঙ্ক্ষিত লেনদেন বা জরিমানা হতে পারে।
চার্জের নিয়ম:
অ্যাকাউন্ট খোলার পর প্রথম ১৪ দিনের মধ্যে বন্ধ করলে কোনো চার্জ দিতে হয় না। যদি ১৪ দিন থেকে ১ বছরের মধ্যে বন্ধ করেন, তাহলে বেশিরভাগ ব্যাংক কিছু চার্জ ধার্য করে। তবে ১২ মাসের বেশি সময়ের অ্যাকাউন্ট বন্ধের ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো চার্জ নেওয়া হয় না।
কেন এই উদ্যোগ?
গ্রাহকদের সময় ও ঝামেলা বাঁচানোই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। এর মাধ্যমে ব্যাংকের শাখার ভিড়ও অনেকটা কমবে। বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষদের জন্য, যারা সময়ের অভাবে ব্যাংকে যেতে পারেন না, এই সুবিধা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, ব্যাংকগুলোর পক্ষে এটি একটি বড় ইতিবাচক পদক্ষেপ। ডিজিটাল ব্যাংকিং পরিষেবা বাড়ানোর মাধ্যমে তারা তাদের গ্রাহক বেসের কাছে আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠছে।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা:
ডিজিটাল লেনদেন এবং পরিষেবা আগামী দিনে আরও বাড়বে বলেই আশা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে শাখায় না গিয়ে সম্পূর্ণরূপে অনলাইনে অ্যাকাউন্ট খোলা, বন্ধ করা, কেওয়াইসি আপডেট করা, লোনের আবেদন—সবই এক জায়গা থেকে করা যাবে।
তবে, এর সঙ্গে সাইবার সিকিউরিটি এবং তথ্য সুরক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকগুলোকেও এই খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, যাতে গ্রাহকের গোপনীয়তা রক্ষা হয় এবং প্রতারণার ঝুঁকি কমানো যায়।
ব্যাংকিং সেক্টরে এই ডিজিটাল পরিবর্তন নিঃসন্দেহে গ্রাহকদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। ব্যাংকের শাখায় না গিয়ে ঘরে বসেই সব কাজ করা—এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। তাই যদি আপনার অব্যবহৃত কোনো অ্যাকাউন্ট থাকে, এখনই অনলাইনে সহজে তা বন্ধ করুন। তবে অবশ্যই, প্রয়োজনীয় শর্ত ও নির্দেশিকা ভালোভাবে জেনে নিন এবং ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন প্রয়োজনে।