বারুইপুর: দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি থানা এলাকায় এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু (Murder) ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মৃতার নাম মানোয়ারা মোল্লা (২০)। অভিযোগ, পণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, স্বামী মাঝিদুল মণ্ডলের এক মহিলার সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল বলেও দাবি করেছেন মৃতার বাপেরবাড়ির লোকজন।
পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, বছর দেড়েক আগে মানোয়ারা ও মাঝিদুলের প্রথম পরিচয় হয় ফোনে। কয়েক মাস কথাবার্তার পর নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং মাঝিদুল বন্ধুবান্ধব নিয়ে মানোয়ারার বাড়িতে এসে তাঁকে বিয়ে করেন। যদিও পরিবারের প্রথমে আপত্তি থাকলেও, মেয়ের ইচ্ছার কথা ভেবে তাঁরা শেষমেশ রাজি হন।
বিয়ের পর কিছুদিন বাপেরবাড়িতে থেকে, স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কুলতলি থানার অধীন শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যান মাঝিদুল। এরপর থেকেই মানোয়ারার জীবনে শুরু হয় নরক যন্ত্রণা। অভিযোগ, বিয়ের সময় পণ হিসেবে সোনার গয়না ও নগদ অর্থ দেওয়ার পরেও আরও টাকা আনার জন্য মানোয়ারাকে চাপ দেওয়া হত। স্বামীর পরকীয়ার বিষয় জানতে পারার পর মানোয়ারা প্রতিবাদ করলে, তাঁর উপর অত্যাচার আরও বাড়ে। এমনকি বাপেরবাড়ির সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেওয়া হত না তাঁকে।
বুধবার মানোয়ারার বাপেরবাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই এদিন সকালে তাঁর ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায় শ্বশুরবাড়ির একটি ঘরে। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি, মানোয়ারা আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু মৃতার পরিবারের দাবি, এটি আত্মহত্যা নয়, বরং পূর্বপরিকল্পিত খুন। তাঁদের অভিযোগ, মানোয়ারাকে মারধর করে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের আরও দাবি, গতকাল বিকাল পর্যন্ত মানোয়ারার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে এবং তিনি একেবারেই স্বাভাবিক ছিলেন।
এই ঘটনায় মানোয়ারার পরিবারের পক্ষ থেকে কুলতলি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে এবং তদন্ত শুরু করেছে। জানা গিয়েছে, মানোয়ারার স্বামী মাঝিদুল ও তাঁর বাবা এই মুহূর্তে ভিনরাজ্যে কাজের জন্য রয়েছেন। শ্বশুরবাড়িতে তখন উপস্থিত ছিলেন শাশুড়ি, এক দেওর ও এক ননদ। মৃতার পরিবারের অভিযোগ, তাঁরাই এই খুনের সঙ্গে জড়িত।
এই ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। প্রতিবেশীরাও ঘটনার নিন্দা করেছেন। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ স্পষ্ট হবে।
পণপ্রথা ও গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনা আজও দেশের এক অন্ধকার বাস্তব। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। পুলিশের ওপর চাপ বাড়ছে, যাতে দোষীরা শাস্তি পায় এবং ভবিষ্যতে আর কোনও পরিবার যেন এইরকম যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে না যেতে হয়।