রাজ্যজুড়ে সমালোচনার বন্যা। সমালোচিত রাজন্যা (Rajanya Haldar)। তাঁর নগ্ন ছবি ঘুরছে ঘাসফুলের নেতাকর্মীদের মোবাইলে। সেটা কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা তৈরি? নাকি নেই কোনও জারিজুরি? এ নিয়ে মতের মেলা। এর পিছনেও কি রাজনীতির খেলা? নগ্ন ছবি ঘিরেই উঠছে নানা প্রশ্ন।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেত্রী রাজন্যা হালদার। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ কাঁপিয়েছিলেন। জুলুমের বিরুদ্ধে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সরব হবেন বলে দাবি করেছিলেন। সেই তিনিই এখন দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে সরব। তিনিই নাকি জুলুমের শিকার, দাবি করছেন রাজন্যা হালদার।
অনেকে বলেন, বাঙালি কাঁকড়ার জাত। তেমনই কোনও বাঙালি রাজন্যাকে টেনে নামাতে চাইছেন। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ভাষণ। তাতেই বাজিমাত। অভিযোগ, তখন থেকেই খেলা শুরু। আচমকা উড়ে এসে জুড়ে বসা নেত্রীকে দলের অনেকেরই অপছন্দ। তাঁর নগ্ন ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। সোজা কথায় চরিত্র হননের চেষ্টা। বুঝিয়ে দেওয়া হয়, ভাষণে ভাইরাল নেত্রীর চরিত্রের দোষ। একের মাথায় তুললেন হবে আফসোস।
রাজন্যার দাবি, ছবিটি এআই অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি। এ নিয়ে প্রমাণ দিতে দিতে তিনি ক্লান্ত। সংবাদমাধ্যমে এ কথা বলতে গিয়ে তিনি কেঁদে ফেলেন। আরজি কর পর্বে শর্টফিল্ম করে দলের রোষে পড়েন রাজন্যা ও তাঁর স্বামী প্রান্তিক। দলীয় পদ যায়। কসবার ল’ কলেজে গণধর্ষণের পর তিনি মুখ খুলেছেন রাজন্যা হালদার। এতেই রাজ্যজুড়ে তোলপাড়।
রাজন্যাকে আক্রমণ করছেন তৃণমূলের বড় অংশ। তাদের বক্তব্য, রাজন্যার ছবিতে নেই কোনও জারিজুরি। ছবিটি খাঁটি পুরোপুরি। তাদের যুক্তি, বছর খানেক আগে এআইয়ের এত রমরমা ছিল না। তাছাড়া কোনও নগ্ন ছবি করতে দেয় না এআই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সব প্ল্যাটফর্মেই এই তত্ত্ব প্রযোজ্য। তাহলে কি কুমিরের কান্না রাজন্যার? সবই কি রাজনৈতিক কৌশল? ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা? অনেকে আবার এও বলছেন, এআই আসার অনেক আগেও ছবি বিকৃত করা হত। ফটোশপ বা সমতুল সফটওয়্যারের মাধ্যমে নানান কীর্তি দেখা গিয়েছে। কিন্তু রাজন্যা বারবার স্পষ্ট করে এআইয়ের কথা বলছেন। এ নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে নাকি স্বচ্ছ জল ঘোলা করা হচ্ছে তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। নানান ধরনের জল্পনা।
যাঁরা বলছেন যে এআই নগ্ন ছবি করে না তাঁদের জন্য একটি তথ্য দেওয়া যেতে পারে। মাস খানেক আগে এক মহিলা সাংসদ নিজের নগ্ন ছবি সংসদে তুলে ধরেন। দাবি করেন সেটি এআই দিয়ে তৈরি। নিউজিল্যান্ডের সাংসদ লরা ম্যাকক্লুর সাহসিকতার সাথে ডিপফেক প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান হুমকির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। গত মে মাসে তিনি পার্লামেন্টের মেঝেতে নিজের একটি ম্যানিপুলেটেড, নগ্ন ছবি তুলে ধরেন। ম্যাকক্লুর দাবি করেন যে এই ছবিটি অনলাইনে তৈরি করতে পাঁচ মিনিটেরও কম সময় লেগেছে। সম্প্রচারের উদ্দেশ্যে ছবিটি সেন্সর করা হলেও, এটি ডিপফেকের সম্ভাব্য বিপদের একটি শক্তিশালী উদাহরণ হিসেবে কাজ করেছে। গত ১৪ মে তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, “এই ছবিটি আমার একটি নগ্ন ছবি, কিন্তু এটি বাস্তব নয়।” অর্থাৎ কোনও কিছুই আর অসম্ভব নয়।