ধর্মঘটে রাজ্যজুড়ে রেল-রাস্তা অবরোধ, নাজেহাল নিত্যযাত্রী

সপ্তাহের মাঝামাঝি দিনেই রাজ্যজুড়ে দেখা গেল ধর্মঘটের (Strike) জোরদার প্রভাব। কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিক ও কৃষকবিরোধী নীতির প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকেই বিভিন্ন স্থানে রেল এবং রাস্তায়…

ধর্মঘটে রাজ্যজুড়ে রেল-রাস্তা অবরোধ, নাজেহাল নিত্যযাত্রী

সপ্তাহের মাঝামাঝি দিনেই রাজ্যজুড়ে দেখা গেল ধর্মঘটের (Strike) জোরদার প্রভাব। কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিক ও কৃষকবিরোধী নীতির প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকেই বিভিন্ন স্থানে রেল এবং রাস্তায় অবরোধে সামিল হলেন বনধ সমর্থকেরা। দশটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা এই ধর্মঘটের প্রভাব পড়ল হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়।

বুধবার সকাল থেকেই হুগলির তারকেশ্বরের তালপুর স্টেশনে বামপন্থী কর্মী ও সমর্থকরা রেল লাইনে নেমে তারকেশ্বর-আরামবাগ লোকাল ট্রেন আটকান। যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। বিক্ষোভকারীরা লাল পতাকা হাতে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ স্তব্ধ করে দেন। দ্রুত খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে রেল পুলিশ। এরপর অবরোধকারীদের সরাতে পুলিশ ও র‍্যাফ নামানো হয়। ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে পুলিশের সঙ্গে।

   

ব্যারাকপুর ১৫ নম্বর রেলগেটেও সকাল থেকেই রেল অবরোধ করেন বনধ সমর্থকরা। বামপন্থী সংগঠনের পতাকা হাতে তাঁরা রেল লাইনে বসে পড়েন। পুলিশ হস্তক্ষেপ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একই ছবি ধরা পড়ে দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর স্টেশনেও। সেখানে বনধ সমর্থকরা রেল অবরোধের চেষ্টা চালান।

হুগলির পান্ডুয়া স্টেশনেও বনধের জোরালো প্রভাব পড়ে। ডাউন হাওড়া-বর্ধমান লোকাল ট্রেনের ঢোকার সময় তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে লাইনে নেমে অবরোধ শুরু করেন সিপিআইএম-এর প্রাক্তন বিধায়ক আমজাদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সমর্থকরা। সেখানে পৌঁছে অবরোধ তুলতে রেল পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়।

শুধু রেলপথ নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তাও অবরোধ করেন বনধ সমর্থনকারীরা। হুগলির তারকেশ্বর, জয়কৃষ্ণ বাজার, চাঁপাডাঙ্গা এবং ডানকুনি-আরামবাগ রোড অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

রায়দিঘি-ডায়মন্ড হারবার রোড, কৃষ্ণনগর, বাগদার হেলেঞ্চা, বাগদা বনগাঁ রাজ্য সড়কে একইভাবে অবরোধ সৃষ্টি হয়। কোথাও পিচঢালা রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে লাল পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে পড়েন বাম সমর্থকেরা, সরকারি বাস আটকে দেওয়া হয়। বহু সরকারি বাস ঘুরপথে চালাতে বাধ্য হয় প্রশাসন।

Advertisements

সকাল ৭টা থেকে শুরু হওয়া অবরোধের জেরে বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে দীর্ঘক্ষণ ট্রেনের অপেক্ষায় থাকলেও, অনির্দিষ্ট কালের জন্য ট্রেন বাতিলের কারণে বিকল্প যানের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন। ট্যাক্সি, অটো রিকশাতেও ভাড়া বেড়ে যায় কয়েক গুণ।

সরকারি তরফে যদিও চেষ্টা হয় পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার, তবে বনধের ব্যাপক প্রভাব পুরোপুরি সামাল দেওয়া যায়নি।

বাম নেতৃত্বে আয়োজিত এই ধর্মঘটে রাজ্যের সাধারণ মানুষ দিনের শুরুতেই নাজেহাল হয়ে পড়েন। যদিও বিকেলের দিকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে, কিন্তু তার আগেই বহু অফিস যাত্রী, পরীক্ষার্থী ও অসুস্থ মানুষ কার্যত ঘন্টার পর ঘন্টা ভোগান্তির শিকার হন।

এদিনের ধর্মঘট যে বামেদের রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের জায়গা ছিল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তার খেসারত দিতে হল সাধারণ মানুষকেই।