রাজ্য সরকার, বিশেষত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য অর্থ দপ্তরের(Business Industry Conclave) প্রধান উপদেষ্টা অমিত মিত্র, আগামী দিনে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পুজোর পর রাজ্যে অনুষ্ঠিত হতে চলা ‘বিজনেস ইন্ডাস্ট্রি কনক্লেভ’-এর মাধ্যমে তারা বিশেষভাবে আটটি শিল্পক্ষেত্রের উপর নজর দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এই শিল্পগুলির বিকাশের মাধ্যমে রাজ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সূচনা হবে এবং কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে(Business Industry Conclave)
এই সিদ্ধান্তটি এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্যে গঠিত স্টেট লেভেল ইনভেস্টমেন্ট সিনার্জি কমিটির পর্যালোচনা বৈঠক থেকে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে, রাজ্যের ভবিষ্যৎ শিল্পনীতির বিষয়ে গভীর আলোচনা হয় এবং সেখানেই বিশেষ করে আটটি শিল্পক্ষেত্রকে প্রাধান্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী চান, এই শিল্পগুলির বিকাশ দ্রুত শুরু হোক এবং তারা যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন হতে পারে, সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আটটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পক্ষেত্র:
ইস্পাত
রাজ্যে ইস্পাত শিল্পের অগ্রগতি অনেকাংশে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল।(Business Industry Conclave) এখানে প্রচুর খনিজ সম্পদ রয়েছে, যা ইস্পাত উৎপাদনে সহায়ক হতে পারে। এই শিল্পটির বিকাশ হলে, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি উভয় ক্ষেত্রেই সুফল পাওয়া যাবে।জেমস ও জুয়েলারি
পশ্চিমবঙ্গের মণিমুক্তো শিল্পের ঐতিহ্য অনেক পুরনো। এই শিল্পটি বর্তমান সময়ে রপ্তানি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। রাজ্য সরকার এই শিল্পে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে এবং সারা বিশ্বে তার প্রসারের জন্য উদ্যোগী হতে চায়।তথ্যপ্রযুক্তি
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রাজ্যের সম্ভাবনা অনেক বেশি। কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ইতিমধ্যে বেশ কিছু আইটি হাব গড়ে উঠেছে। এই শিল্পে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব। সরকার নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে এই খাতে আরও প্রসার ঘটানোর পরিকল্পনা করছে।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তি আজকের যুগে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বিকাশমান শিল্পক্ষেত্র। রাজ্য সরকার এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।ফিনটেক ও সেমিকন্ডাক্টর
ফিনটেক খাতে রাজ্য সরকারের বিশেষ নজর রয়েছে, কারণ এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক লেনদেনের আধুনিকীকরণ সম্ভব। সেমিকন্ডাক্টর শিল্পও বিশ্বব্যাপী উচ্চ চাহিদা সম্পন্ন, যা রাজ্যের রপ্তানি ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।খাদ্য সংক্রান্ত শিল্প
রাজ্যের কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। খাদ্যশিল্পের আধুনিকীকরণ এবং বিপণন ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে রাজ্যকে খাদ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এক আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব।পর্যটন
পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন ক্ষেত্রের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্যে নানা ঐতিহাসিক স্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে যা পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে। এই শিল্পটির বিকাশ কর্মসংস্থান এবং আয় বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হতে পারে।টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত সামগ্রী
পশ্চিমবঙ্গে টেক্সটাইল এবং চামড়া শিল্পের একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। বিশেষ করে হুগলি, নাদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও কোচবিহারের মতো অঞ্চলে এই শিল্পের বিস্তার রয়েছে। এর মাধ্যমে রাজ্য আন্তর্জাতিক বাজারে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারে।
শিল্পগুলির বিকাশের ফলে সম্ভাব্য সুবিধা:
অমিত মিত্রের মতে, এই আটটি শিল্পক্ষেত্র রাজ্যের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইস্পাত, জুয়েলারি, তথ্যপ্রযুক্তি, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তি শিল্পের বিকাশ রাজ্যের রপ্তানি ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। এসব শিল্পের প্রসার হলে রাজ্যের আয় বৃদ্ধি পাবে, কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
এছাড়াও, এই শিল্পগুলির বিকাশে স্কিল ডেভলপমেন্টের দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হবে। রাজ্য সরকার কর্মশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালু করবে, যাতে যুবক-যুবতীরা নতুন শিল্পের সাথে যুক্ত হতে পারে এবং উপযুক্ত কাজের সুযোগ পায়।