প্রস্তুতি শেষ, তারিখ নির্ধারিত! ভারতীয় নার্স নিমিষাকে ফাঁসি দেবে ইয়েমেনের জঙ্গি সরকার

এক দশক ধরে চলা আইনি লড়াই, ভারতের কূটনৈতিক চেষ্টা সবই ব্যর্থ হতে চলেছে। খুনের মামলায় ফাঁসি হবে ভারতীয় নার্সের। তাকে ফাঁসি দেবে ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠীর…

Indian Nurse Nimisha Priya Set for Execution in Yemen on July 16 Amid Death Row Plea

এক দশক ধরে চলা আইনি লড়াই, ভারতের কূটনৈতিক চেষ্টা সবই ব্যর্থ হতে চলেছে। খুনের মামলায় ফাঁসি হবে ভারতীয় নার্সের। তাকে ফাঁসি দেবে ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠীর সরকার। হুথি গোষ্ঠী আন্তর্জাতিক জঙ্গি তালিকাভুক্ত। তবে ওই ভারতীয় নার্সকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা চলছে বলেই একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর।

কেরলের বাসিন্দা নার্স নিমিষা প্রিয়া ( Nimisha Priya) । তিনি ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডিত। তাঁর ফাঁসির তারিখ ১৬ জুলাই। এক ইয়েমেনি নাগরিককে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি।২০১৮ সালে নিমিষা প্রিয়াকে গ্রেফতার করা হয় যখন তিনি ওই দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছিলেন।

   

নিমিষা প্রিয়া ২০১৮ সালে ইয়েমেনি নাগরিক তালাল আব্দো মাহদিকে নেশাদ্রব্যের অতিরিক্ত ডোজ দিয়ে হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। ইয়েমেনের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। ২০২৪ সালে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট দণ্ড অনুমোদন করেন।

২০০৮ সালে পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে নিমিষা ইয়েমেনে পাড়ি জমান। কয়েকটি হাসপাতালে চাকরি করার পর, ২০১৪ সালে তিনি একটি ক্লিনিক খোলেন। ইয়েমেনের নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় কোনও ব্যক্তির সঙ্গে অংশীদারিত্ব ছাড়া ব্যবসা শুরু করা যায় না, তাই নিমিষা যোগাযোগ করেন স্থানীয় তালাল আব্দো মাহদির সঙ্গে। পরে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয় নিমিষা পরে মাহদির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। মাহদিকে ২০১৬ সালে গ্রেফতার করা হলেও পরে মুক্তি পেয়ে তিনি নিমিষাকে হুমকি দিতে থাকেন বলে অভিযোগ।

নিমিষার পরিবার দাবি করেছে, মাহদি তার পাসপোর্ট আটকে করে রেখেছিলেন, তাই সেটি ফিরে পেতে তিনি মাহদিকে ঘুমের ওষুধ ইনজেকশন দেন। কিন্তু অতিরিক্ত ডোজে তার মৃত্যু হয়। এরপর নিমিষা দেশ ছাড়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। শুরু হয় হত্যা মামলা।

Advertisements

ইয়েমেনি আইন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড প্রযোজ্য হয় রাষ্ট্রের অখণ্ডতা ও ঐক্য বিনষ্ট,সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার চেষ্টা, হত্যা, মাদক পাচার, ব্যভিচার, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সম্মতিসূচক সমকামী সম্পর্ক, ইসলাম ধর্ম ত্যাগ বা প্রত্যাখ্যান, পতিতাবৃত্তি চালানোর মতো অভিযোগ প্রমাণ হলে।

তবে এ দেশে ‘ব্লাড মানি’ দিয়ে প্রাণরক্ষা সম্ভাবনা আছে।ইসলামিক আইন অনুযায়ী, কোনও হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির পরিবার যদি ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছে “ব্লাড মানি” বা রক্তমূল্য হিসেবে ক্ষতিপূরণ দেয় এবং ভুক্তভোগীর পরিবার তা গ্রহণ করে, তাহলে মৃত্যুদণ্ড বাতিল হতে পারে।

নিমিষার আইনজীবী সুবাস চন্দ্রন জানিয়েছেন, এক আন্তর্জাতিক ফোরাম গঠিত হয়েছে নিমিষাকে বাঁচাতে। তারা ‘ব্লাড মানি’-এর জন্য ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলছিল, কিন্তু ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, ভারতীয় দূতাবাস নিযুক্ত আইনজীবী আবদুল্লাহ আমীর প্রাক-আলোচনার জন্য ২০,০০০ ডলার দাবি করেন। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক আমীরকে ১৯,৮৭১ ডলার প্রদান করেছিল, কিন্তু তিনি মোট ৪০,০০০ ডলারের দাবিতে আলোচনায় অগ্রসর হতে অস্বীকার করেন। প্রথম কিস্তির টাকা জনসাধারণের থেকে সংগৃহীত হলেও পরে অর্থের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

নিমিষার মা, যিনি কোচিতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন, নিজের বাড়ি বিক্রি করে মামলা চালিয়েছেন।তিনি বলেন “আমি ভারত সরকার, কেরালা সরকার এবং যাঁরা সাহায্য করছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু সময় খুব কম। এটা আমার শেষ অনুরোধ আমার মেয়েকে বাঁচান।”