হাওড়া ব্রিজে বিশ্বমানের আলোকসজ্জা ও ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ শো

নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে ঐতিহাসিক হাওড়া ব্রিজ (Howrah Bridge), অর্থাৎ রবীন্দ্র সেতু। এবার কানাডার জ্যাকেস কার্টিয়ার ব্রিজ বা প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের মতোই আধুনিক আলোকসজ্জায়…

হাওড়া ব্রিজে বিশ্বমানের আলোকসজ্জা ও ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ শো

নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে ঐতিহাসিক হাওড়া ব্রিজ (Howrah Bridge), অর্থাৎ রবীন্দ্র সেতু। এবার কানাডার জ্যাকেস কার্টিয়ার ব্রিজ বা প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের মতোই আধুনিক আলোকসজ্জায় ঝলমল করবে হাওড়া ব্রিজ। থাকছে ‘ডায়নামিক অর্কিটেকচারাল ইলুমিনেশন’-এর এক বিশাল আয়োজন। হাওড়া ব্রিজের ইতিহাসে এই প্রথম এত বৃহৎ ও টেকসই প্রযুক্তিতে সাজানো হবে এই সেতু। তৈরি হবে একটি বিশেষ মোবাইল অ্যাপ, যার মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনও প্রান্ত থেকে সরাসরি দেখা যাবে হাওড়া ব্রিজের এই দৃশ্য।

কী থাকছে এই নতুন আলোকসজ্জা প্রকল্পে?
‘ডায়নামিক আর্কিটেকচারাল ইলুমিনেশন অফ রবীন্দ্র সেতু’ (Howrah Bridge) নামের এই প্রকল্পে ব্যবহৃত হবে পাঁচ ধরনের উন্নতমানের আলো। এই আলোগুলি সেতুর মূল কাঠামো বরাবর স্থাপন করা হবে। আলোর সঙ্গে সঙ্গত দেবে সাউন্ড শো, অর্থাৎ একসঙ্গে চলবে লাইট অ্যান্ড মিউজিক সিঙ্ক্রোনাইজেশন। প্রতিদিন পরিবর্তন হবে আলোর রং ও ছন্দ।

   

বিশেষ ৫০ দিনে—যেমন স্বাধীনতা দিবস, দুর্গাপুজো, মহালয়া, ইদ, বড়দিন ইত্যাদিতে চলবে ভিন্ন ভিন্ন থিমে সাজানো লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো। এই শোগুলি হবে ৫-১০ মিনিটের এবং প্রতিটিই আলাদা আলাদাভাবে তৈরি করা হবে বাংলার সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে।

কলকাতা বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যান সম্রাট রাহি জানান, “এই আলোকসজ্জা শুধুই দর্শনীয় নয়, এটি এক বিশাল পর্যটন ও সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতাও। কলকাতাকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরার অন্যতম হাতিয়ার হবে হাওড়া ব্রিজ (Howrah Bridge)।”

শুধু ভিজ্যুয়াল নয়, তৈরি হচ্ছে বিশেষ অ্যাপ—যার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে দর্শকরা লাইভ স্ট্রিমে উপভোগ করতে পারবেন এই সৌন্দর্য। ভবিষ্যতে থাকবে টিকিট কেটে লাইভ শো দেখার ব্যবস্থা। ফলে স্থানীয় পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও আসবে প্রচুর আগ্রহী দর্শক।

Advertisements

১৯৪৩ সালে নির্মিত এই স্টিল সেতু শুধুমাত্র কলকাতার নয়, সমগ্র ভারতের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন। প্রতিদিন এই ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করে প্রায় ১ লক্ষ গাড়ি ও ১.৫ লক্ষ পথচারী। এর আগে ২০০৬ সালে তাপস সেনের তত্ত্বাবধানে প্রথম পর্যায়ে আলোকসজ্জার কাজ হয়। ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হাওড়া ব্রিজে দ্বিতীয় পর্যায়ের LED আলো উদ্বোধন করেন।

এছাড়াও বিশেষ দিনে যেমন প্রজাতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় দিবসগুলিতে ব্রিজে চলেছে ডায়নামিক আলোকসজ্জা। এবার সেই উদ্যোগ আরও আধুনিক রূপ নিচ্ছে।

হাওড়া ব্রিজ শুধু এক সেতু নয়, এটি কলকাতার গর্ব, ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতীক। সেই সেতুই এবার নতুন রূপে জেগে উঠবে ‘আলো আর শব্দের রঙিন কার্নিভালে’। এই উদ্যোগে কলকাতার রাত আরও রঙিন হবে, বাড়বে পর্যটন, আর গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে বাংলার ঐতিহ্যের আলোর প্রতিফলন। এই প্রকল্প যে কলকাতার ভিজ্যুয়াল আইডেন্টিটিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে, তা বলাই বাহুল্য।