৯ জুলাই, বুধবার ভারতজুড়ে ডাকা হয়েছে সর্বভারতীয় বন্ধ (Bharat Bandh)। এই বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে দেশের ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং কৃষক ও গ্রামীণ শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ। বন্ধের মূল লক্ষ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের কর্পোরেটপন্থী ও শ্রমিক-কৃষক স্বার্থ বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো। দাবি করা হয়েছে, এই বন্ধে ২৫ কোটিরও বেশি শ্রমিক অংশ নিতে পারেন।
বন্ধের কারণ:
ধর্মঘটের (Bharat Bandh) মূল ইস্যু হল কেন্দ্রীয় সরকারের চালু করা চারটি শ্রম কোড বাতিল করার দাবি। ট্রেড ইউনিয়নগুলির অভিযোগ—
সরকার গত দশ বছরে একবারও বার্ষিক শ্রম সম্মেলন আয়োজন করেনি,
বেকারত্ব বেড়েছে মারাত্মকভাবে,
মূল্যবৃদ্ধি রুখতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি,
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণমূলক খাতে ব্যয় একাধিকবার কমানো হয়েছে,
দীর্ঘ সময় ধরে কাজের সময় বেড়েছে, কিন্তু মজুরি সেই হারে বাড়েনি।
রাজ্যের অবস্থান:
পশ্চিমবঙ্গ সরকার বন্ধের দিন সরকারি কর্মীদের জন্য নির্দেশিকা জারি করেছে।
নবান্ন জানিয়ে দিয়েছে—
৯ জুলাই সব সরকারি ও সরকার-সহায়তা প্রাপ্ত অফিস খোলা থাকবে,
কর্মীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক,
কোনও ক্যাজুয়াল লিভ বা হাফ-ডে গ্রহণযোগ্য নয়,
বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকলে বেতন কাটা হতে পারে,
গুরুতর অসুস্থতা, হাসপাতাল ভর্তির মতো নির্দিষ্ট কারণ থাকলে ছাড় দেওয়া হবে।
বন্ধের সম্ভাব্য প্রভাব:
ব্যাঙ্কিং পরিষেবা: রাষ্ট্রায়ত্ত ও সমবায় ব্যাঙ্কে বন্ধের প্রভাব পড়তে পারে, যদিও বেসরকারি ব্যাঙ্ক খোলা থাকবে।
ডাক পরিষেবা: পোস্ট অফিসে পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যান চলাচল ও গণপরিবহণ: ধর্মঘট এবং রাস্তা অবরোধের কারণে বিভিন্ন স্থানে যানজট হতে পারে। রাজ্য পরিবহন দপ্তর বিশেষ বাস পরিষেবা চালু করলেও সাধারণ যাত্রীরা সমস্যায় পড়তে পারেন।
বিদ্যুৎ পরিষেবা: দেশজুড়ে ২৭ লক্ষেরও বেশি বিদ্যুৎ কর্মী ধর্মঘটে যোগ দিতে পারেন, ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রভাব পড়তে পারে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ও খনিজ সংস্থা: NMDC সহ সরকারি খনিজ সংস্থার কর্মীরাও ধর্মঘটে অংশ নিতে পারেন।
স্কুল, কলেজ ও বেসরকারি অফিস: বেশিরভাগ স্কুল-কলেজ খোলা থাকবে। বেসরকারি অফিসও খোলা থাকার সম্ভাবনা, তবে পরিবহণ বিঘ্নে কর্মীদের উপস্থিতিতে সমস্যা হতে পারে।
রেল, মেট্রো ও বিমান পরিষেবা: রেল পরিষেবা ধর্মঘটে অন্তর্ভুক্ত না হলেও প্রতিবাদ মিছিল ও অবরোধের কারণে ট্রেন দেরি বা বাতিল হতে পারে। মেট্রো ও বিমান পরিষেবা স্বাভাবিক থাকার সম্ভাবনা।
হাসপাতাল ও জরুরি পরিষেবা: স্বাস্থ্য, অ্যাম্বুল্যান্স, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ — জরুরি পরিষেবাগুলি সচল থাকবে। তবে প্রতিবাদে রাস্তায় যানজট হতে পারে।
শেয়ার বাজার
শেয়ার বাজারে ধর্মঘটের কোনও প্রভাব পড়বে না বলে মনে করা হচ্ছে।
সমর্থনকারী ট্রেড ইউনিয়নগুলির তালিকা:
INTUC (Indian National Trade Union Congress)
AITUC (All India Trade Union Congress)
HMS (Hind Mazdoor Sabha)
CITU (Centre of Indian Trade Unions)
AIUTUC, TUCC, SEWA, AICCTU, LPF, UTUC
৯ জুলাইয়ের ভারত বন্ধ শুধুই একটি ধর্মঘট নয়, বরং শ্রমিক, কৃষক, এবং গ্রামীণ সমাজের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। একদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ, অন্যদিকে রাজ্য সরকার ও প্রশাসনের কড়া অবস্থান—সব মিলিয়ে ওইদিন জনজীবনে মিশ্র প্রভাব পড়তে চলেছে, তা বলাই যায়। তবে মানুষকে যতটা সম্ভব স্বস্তি দিতে প্রশাসনের তরফে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।