কলকাতা: ৯ জুলাই, বুধবার কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা সর্বভারতীয় ধর্মঘটকে (Strike Day) কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে সতর্কতা জারি করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্য পরিবহন দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য বাড়তি বাস, ভেসেল এবং ট্রাম চালানোর পাশাপাশি খোলা থাকবে কন্ট্রোল রুম। সরকারি বাস পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এই ধর্মঘট (Strike Day) ডেকেছে বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনগুলি—যাদের দাবি, ২১টি বিদ্যমান শ্রম আইন বাতিল করে চারটি শ্রমকোড চালু করায় শ্রমিক স্বার্থ ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
তবে রাজ্য সরকার স্পষ্ট করেছে, ‘কর্মনাসা বনধ’ কোনওভাবেই পশ্চিমবঙ্গে বরদাস্ত করা হবে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন আগেই জানিয়েছে, ধর্মঘটের (Strike Day) দিন সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সব অফিস খোলা থাকবে। কেউ ছুটি নিলে বা হাফ-ডে করলে শোকজ করা হতে পারে, এমনকী বেতন কাটা হতে পারে বলেও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
পরিবহন দফতরের বিশেষ ব্যবস্থা:
পরিবহন দফতর জানিয়েছে, ৯ জুলাই বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হবে পরিষেবা। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নম্বর—
০৩৩-২২৩৬১৯১৬, ০৪৬২, ০৪৬৩ এবং ৮৬৯৭৭৩৩৩৯১—এই নম্বরগুলোতে ফোন করে যাত্রীরা কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে পারবেন।
রাজ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে:
প্রতি শিফটে নামবে CSCTC-এর ৫০০টি বাস,
CSTC-এর ২০০টি বাস,
WBSTC-এর ৭০টি বাস।
বেশিরভাগ বাসই ২ বা ৩টি শিফটে চলবে।
অতিরিক্তভাবে থাকবে ২৫টি ভেসেল পরিষেবা এবং ২টি ট্রাম।
বেসরকারি পরিবহন সংগঠনগুলির পক্ষ থেকেও আশ্বাস মিলেছে যে, বুধবার পর্যাপ্ত পরিমাণে বাস, মিনিবাস, অটো রাস্তায় থাকবে। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট এবং বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির তরফে জানানো হয়েছে, বাস চালকরা উপস্থিত থাকলেই বাস চলবে। অর্থাৎ, ধর্মঘটে যুক্ত না থাকা চালকরা যাত্রা চালাবেন।
যদিও বামপন্থী সংগঠন CITU ও AITUC-এর ট্যাক্সি ও ক্যাব সংগঠনগুলি ঘোষণা করেছে, ধর্মঘটের দিন তারা কোনও গাড়ি রাস্তায় নামাবে না। এআইটিইউসি অনুমোদিত সংগঠনের আহ্বায়ক নওয়ালকিশোর শ্রীবাস্তব জানান, “শ্রমিক স্বার্থে এই বনধে অংশ নেওয়া জরুরি। তাই কোনও গাড়ি রাস্তায় নামবে না।”
অন্যদিকে, অ্যাপ ক্যাব পরিষেবা যথারীতি চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ যাতে অসুবিধায় না পড়েন, সেটা মাথায় রেখেই অ্যাপ ক্যাব পরিষেবা স্বাভাবিক থাকবে।”
রাজ্য সরকারের তরফে সোমবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, কোনও সরকারি কর্মী ৯ জুলাই বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শোকজ, বেতন কাটার মতো পদক্ষেপও হতে পারে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পরিষ্কার যে, বনধকে কার্যত ব্যর্থ করতেই সক্রিয় নবান্ন।
৯ জুলাইয়ের ধর্মঘটে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সাধারণ মানুষের জন্য পর্যাপ্ত বাস, ভেসেল ও ট্রাম চালানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ট্যাক্সি কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি করলেও, অ্যাপ ক্যাব ও অধিকাংশ রুটে সরকারি বাস চলবে স্বাভাবিকভাবেই। অর্থাৎ বনধ থাকলেও রাস্তায় চলাচলে বড় কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।