ক্রিকেট মাঠে তাঁর ইয়র্কার যেমন বিপক্ষ ব্যাটারদের বেকায়দায় ফেলে, ঠিক তেমনই এবার নিজেই চাপে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (RCB) তারকা পেসার যশ দয়াল (Yash Dayal)। প্রেম, বিয়ের প্রতিশ্রুতি ও পরবর্তী সময়ে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে আরসিবি বোলারের নাম মামলা দায়ের (FIR) হয়েছে গাজিয়াবাদের ইন্দিরাপুরম থানায়।
অভিযোগকারিণী এক তরুণী জানিয়েছেন, যশ দয়ালের সঙ্গে তাঁর পাঁচ বছরের সম্পর্ক ছিল। কথায় কথায় বিয়ের প্রতিশ্রুতি পেয়ে সেই সম্পর্কেই তিনি এগিয়ে যান। এমনকি যশের পরিবারও তাঁকে ‘বউমা’ বলে ডাকত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে যেতে থাকে যশের ব্যবহার। তরুণীর দাবি, একাধিকবার বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন যশ। যখন তিনি যশের অন্য নারীদের সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানতে পারেন এবং প্রশ্ন তোলেন, তখনই শুরু হয় অবহেলা, মানসিক নির্যাতন, এমনকি মারধরও।
তরুণীর কথায়, “আমি যখন সব প্রশ্ন করছিলাম, তখন আমাকে চুপ করাতে মারধর করেছিল। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি।”
প্রথমে ১৮১ মহিলা হেল্পলাইনে ফোন করে অভিযোগ জানান তিনি। এরপর স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও কোনও পদক্ষেপ হয়নি বলে দাবি তাঁর। শেষমেশ মুখ্যমন্ত্রীর জন-অভিযোগ পোর্টালে অভিযোগ দাখিল করেন তিনি। সেই সূত্র ধরেই পুলিশের কাছে আসে নির্দেশ এবং রবিবার গভীর রাতে এফআইআর দায়ের হয়।
গাজিয়াবাদ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তাঁর গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে এবং পরবর্তীতে মেডিক্যাল পরীক্ষাও করানো হবে। পুলিশ ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ইলেকট্রনিক তথ্যপ্রমাণ—যেমন হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, ভিডিও কল, স্ক্রিনশট এবং ছবি—পেয়েছে। তদন্তে কিছু তথ্যপ্রমাণের সত্যতাও মিলেছে বলে পুলিশ সূত্রে ইঙ্গিত।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (BNS) ধারা ৬৯ অনুযায়ী, মিথ্যা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন একটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধ ধর্ষণের আইনের আওতায় না পড়লেও এটিকে বিশ্বাসভঙ্গ এবং যৌন শোষণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
২৭ বছরের যশ দয়াল এলাহাবাদের বাসিন্দা। ঘরোয়া ক্রিকেটে উত্তরপ্রদেশের হয়ে খেলা এই বাঁ হাতি পেসার ২০২২ সালে গুজরাট টাইটান্সের হয়ে আইপিএলে নজর কাড়েন। এরপর খেলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সে। আইপিএল ২০২৫ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে প্রথম ট্রফি জয়ে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। যদিও এখনও আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়নি তাঁর। বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে স্কোয়াডে থাকলেও প্রথম একাদশে সুযোগ মেলেনি।
নিজের অভিযোগ প্রসঙ্গে তরুণী বলেন, “আমি প্রতিশোধ নিতে চাই না। শুধু চাই সত্যিটা সামনে আসুক। আমি লড়ছি নিজের সম্মানের জন্য, যেন অন্য মেয়েদের আর এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে না হয়।” তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। প্রমাণ যাচাই এবং তরুণীর জবানবন্দির পরেই যশ দয়ালের বিরুদ্ধে গ্রেফতারির সম্ভাবনা রয়েছে। আইনের চোখে সব দিক খতিয়ে দেখার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।
FIR registered against RCB star Yash Dayal for sexual harassment case after woman alleges exploitation