রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রুখতে বড় সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের

ভারত-মায়ানমার সীমান্তে (India-Myanmar Border) একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর সামনে এসেছে, যা দেশের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নেতৃত্বে…

India-Myanmar Border Fencing

ভারত-মায়ানমার সীমান্তে (India-Myanmar Border) একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর সামনে এসেছে, যা দেশের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া-মায়ানমার সীমান্তের ১,৬৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সীমান্তের ৪০১ কিলোমিটার বেড়া দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই বেড়া দেওয়ার প্রকল্পটি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ, মাদক চোরাচালান এবং সীমান্ত পারের অপরাধ রোধ করার জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মণিপুরের মোরে শহরে ৯.২ কিলোমিটার বেড়া নির্মাণ, যা একটি কৌশলগত স্থান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রকল্পের পটভূমি
ইন্ডিয়া-মায়ানমার সীমান্তে বেড়া দেওয়ার এই উদ্যোগটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সরকার কর্তৃক মঞ্জুরী পেয়েছিল, যার মোট ব্যয় প্রায় ৩১,০০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটি মূলত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়ানোর লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম এবং মণিপুর রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০২৪ সালের নিরাপত্তা কৌশল অনুসারে, এই বেড়া দেওয়া সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ, অস্ত্র চোরাচালান এবং নারকো-টেররিস্ট কার্যকলাপ রোধ করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২১ সালে মায়ানমারে সামরিক coup-এর পর থেকে এই সীমান্ত এলাকায় অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এই বেড়া দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে আরও জরুরি করে তুলেছে।

   

মোরে-এর গুরুত্ব
মণিপুরের মোরে শহরটি ইন্ডিয়া-মায়ানমার সীমান্তে একটি কৌশলগত স্থান হিসেবে পরিচিত। এই শহরটি সীমান্ত পারের অপরাধকর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০২৩ সালের একটি গবেষণা (ScienceDirect) অনুসারে, মোরে সীমান্ত অঞ্চলটি অবৈধ অভিবাসন এবং সীমান্ত পারের অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে উদিত হয়েছে। ৯.২ কিলোমিটার বেড়া নির্মাণ এই অঞ্চলে নিরাপত্তা বাড়াতে সাহায্য করবে, তবে এখনও বাকি ১,২৪২ কিলোমিটার নির্মাণের কাজ চলছে, যা বেশ কিছু বাধা-বিপত্তির মুখোমুখি হয়েছে।

চ্যালেঞ্জ এবং বিরোধ
এই বেড়া দেওয়ার প্রকল্পটি সহজে সম্পন্ন হয়নি। মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ডের স্থানীয় সরকার এবং সামাজিক সংগঠনগুলো এই উদ্যোগের বিরোধিতা করছে। ২০২৪ সালের মার্চে মিজোরাম সংসদে একটি রেজোলিউশনে জানানো হয়েছে যে, এই বেড়া দেওয়া স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়, যেমন কুকি, নাগা এবং মিজোদের জীবনযাত্রাকে বিঘ্নিত করবে। এই সম্প্রদায়গুলোর জমি দুই দেশের মাঝে বিভক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা তাদের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বন্ধন ভাঙতে পারে। অধিকন্তু, ২০২৪ সালে ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম (FMR) বাতিল করার সিদ্ধান্তও বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে, যা আগে দুই দেশের নাগরিকদের ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে ভিসা ছাড়া যাতায়াতের সুযোগ প্রদান করত।

Advertisements

অর্থনৈতিক এবং লজিস্টিকাল সমস্যা
এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩.৭ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩১,০০০ কোটি টাকা), যা একটি বড় অর্থনৈতিক বোঝা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তবে সরকারের মতে, এই বিনিয়োগ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। লজিস্টিকাল চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে পড়ে সীমান্ত এলাকার জটিল ভূ-প্রকৃতি এবং অভিযোগ যে, পূর্বে মণিপুর-মায়ানমার সীমান্তে কেবল ১০ কিলোমিটার বেড়া দেওয়া ১০ বছর সময় নিয়েছে। এই বাধাগুলো অতিক্রম করতে সরকার বর্তমানে আরও দ্রুত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পরিকল্পনা অনুসারে, বাকি ১,২৪২ কিলোমিটার বেড়া শীঘ্রই সম্পন্ন হবে। এর সাথে সাথে ইন্ডো-মায়ানমার বর্ডার ফোর্স (IMBF) গঠনের প্রস্তাব রয়েছে, যা ২৯ ব্যাটালিয়ন দিয়ে গঠিত হবে। এই বাহিনী সীমান্ত পাহারার দায়িত্ব পালন করবে এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। এই উদ্যোগটি শুধুমাত্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না, বরং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখতে পারে।

ইন্ডিয়া-মায়ানমার সীমান্তে ৪০১ কিলোমিটার বেড়া নির্মাণ একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও এর সাথে বিরোধ ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবুও এই উদ্যোগটি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযোগ বজায় রাখতে সরকারকে আরও সংবেদনশীল পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে এই প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হয় এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।