DVC-র জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ানোয় হাওড়া-হুগলিতে প্লাবন পরিস্থিতি ভয়াবহ!

বর্তমানে গোটা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের মাথায় একটি নিম্নচাপ ঘনীভূত হচ্ছে, যার (DVC News) প্রভাবে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জায়গায়…

"Arunachal Pradesh CM Warns of Chinese Dam on Brahmaputra, Calls it a 'Water Bomb' Threat to India"

বর্তমানে গোটা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের মাথায় একটি নিম্নচাপ ঘনীভূত হচ্ছে, যার (DVC News) প্রভাবে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জায়গায় প্রবল বৃষ্টির দাপট শুরু হয়েছে। ভারতের আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই নিম্নচাপের সঙ্গে যোগ দিয়েছে মৌসুমী অক্ষরেখাও, যা আরও বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এরই মধ্যে রাজ্যের একাধিক জায়গায় জলাবদ্ধতা এবং প্লাবনের আশঙ্কা বাড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দামোদার ভ্যালি কর্পোরেশন (DVC)। অতিবৃষ্টি এবং জলাধারে অতিরিক্ত জল জমার ফলে ডিভিসি দুর্গাপুর ব্যারেজ, মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে বিপুল পরিমাণ জল ছাড়তে শুরু করেছে। জানা গেছে, দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে গতকাল পর্যন্ত ৪৬ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে, এবং মাইথন ও পাঞ্চেত থেকেও ৪০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। এই জলছাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন নদী ও জলাশয়ের জলস্তর বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।(DVC News) 

   

দ্বীপচূড়ান্ত ভারী বৃষ্টির কারণে দুর্গাপুরে আরও অতিরিক্ত জল জমে গেছে, যার ফলে ডিভিসি আরও ৬ হাজার কিউসেক জল ছাড়তে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে হাওড়া এবং হুগলি জেলার বাসিন্দারা উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কারণ, ডিভিসি কর্তৃক অতিরিক্ত জল ছাড়ার ফলে এই দুটি জেলা প্রচণ্ডভাবে প্লাবিত হয়ে গেছে বহুবার। বিভিন্ন অঞ্চলে ফসল ক্ষতি, সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত, ও বাড়ি ঘর ভেসে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলি বারবার ঘটেছে।

রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ডিভিসির এই জলছাড়ার ফলে স্থানীয়দের যে সমস্যা হচ্ছে, সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। বিশেষ করে, গত এক দশকে একাধিক বার ডিভিসির অতিরিক্ত জল ছাড়ার কারণে হাওড়া এবং হুগলি জেলায় ব্যাপক প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, একাধিক বার ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা সত্ত্বেও তারা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি, যার ফলে সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

এখনও পর্যন্ত রাজ্যে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকলেও, জলস্তরের ভয়াবহতা ও প্লাবনের পরিণতি সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ডিভিসি এভাবে জল ছাড়তে থাকে, তাহলে হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, ও বাঁকুড়া সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলার পরিস্থিতি খুব শীঘ্রই আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে।

এদিকে, বর্ষাকালের শেষের দিকে দাঁড়িয়ে, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা এই সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। তবে, বন্যার পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য শুধুমাত্র ডিভিসি বা রাজ্য সরকারের উপর নির্ভরশীল না হয়ে, স্থানীয় প্রশাসন, সাধারণ মানুষ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।

Advertisements

এই পরিস্থিতি যে শুধু সাধারণ মানুষের জন্য উদ্বেগজনক, তা নয়। কৃষকদের জন্যও এটি বড় ধরনের বিপদ নিয়ে এসেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডিভিসির জলছাড়ার কারণে প্রচুর ফসল নষ্ট হয়েছে, এবং ভবিষ্যতে আরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে, দুর্গাপুর, বাঁকুড়া, ও বর্ধমানের কৃষকরা ডিভিসির জলছাড়ার ফলে তাঁদের ক্ষেতগুলির ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে।

ভবিষ্যতের প্রস্তুতি কী হবে?

রাজ্য সরকারের উচিত দ্রুত জলাধারগুলির পর্যবেক্ষণ ও জল ছাড়ার পরিমাণ সম্পর্কে আরও সংবেদনশীল হওয়া। স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলির সঙ্গে পরামর্শ করে, মানুষের জন্য জরুরি সতর্কতা জারি করা দরকার। তাছাড়া, নদী বাঁধ এবং জলাধারের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ করা, এবং প্লাবনের জন্য আগাম পরিকল্পনা প্রস্তুত করা উচিত।

পরিসংখ্যান ও পূর্বাভাসের ভিত্তিতে এমন ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে মানুষের জানমালের ক্ষতি না হয়। রাজ্যের কৃষক, ব্যবসায়ী, এবং সাধারণ মানুষ যাতে দুর্ভোগে না পড়েন, তার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট প্ল্যান বাস্তবায়ন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।