কলকাতা: জলমগ্ন দক্ষিণবঙ্গ (South Bengal)৷ বাস্তবের আষাঢ়ই এখন দক্ষিণবঙ্গের নাগরিকদের জীবন থেকে স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে। সপ্তাহের শুরু থেকে শুরু হওয়া বর্ষণ মঙ্গলবার আরও তীব্র আকার নেয়। আকাশভাঙা বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা। শহরের রাস্তাঘাট জলের তলায়। পরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। কাজের চাপে ভোর সকালেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে বহু নিত্যযাত্রীর দিন শুরু হয়েছে দুর্ভোগ দিয়ে।
কলকাতা শহরের রাসবিহারী, বেহালা, টালিগঞ্জ, কসবা, বালিগঞ্জ, ঠনঠনিয়া, উল্টোডাঙা, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ সহ বহু এলাকায় হাঁটুপানি। কোথাও কোথাও আবার কোমরসমান জল জমে রয়েছে। সেই জলে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে পড়েছে, রিকশা চলা বন্ধ, বাস ঘুরে যাচ্ছে বিকল্প পথে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি কার্যত যানজটে স্তব্ধ।
কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জল সরানোর সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশ কিছু পাম্পিং স্টেশন কাজ করছে। তবে একটানা বৃষ্টির ফলে জল নামানোর কাজে সময় লাগছে। পুর আধিকারিকদের একটি বিশেষ দল শহরের জলজমা এলাকাগুলিতে নজর রাখছে এবং প্রয়োজনে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে।
তবে শুধু রাস্তায় নয়, বৃষ্টির ভোগান্তি ছড়িয়েছে রেলপথেও। শিয়ালদহ উত্তর ও দক্ষিণ শাখার একাধিক লাইনে জল জমে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বারাকপুর, টিটাগড়, নৈহাটি, ডায়মন্ড হারবার, ক্যানিং লাইনের ট্রেনগুলো চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। অনেক ট্রেন বাতিলও করা হয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা গেছে। যাত্রীদের সতর্ক করা হয়েছে এবং জরুরি প্রয়োজনে বিকল্প রুট ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়ার দফতরের পূর্বাভাস বলছে, এই দুর্ভোগের মূলে রয়েছে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া একটি নিম্নচাপ। এটি এখন ধীরে ধীরে ঝাড়খণ্ডের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে বুধবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত চলবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে, যেমন উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তাতে আষাঢ়ের জলছবি যেন দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে। অফিসযাত্রী থেকে স্কুলপড়ুয়া, দোকানদার থেকে গৃহবধূ— সকলেই সমস্যায় পড়েছেন। অনেক স্কুল ও অফিস থেকে আজ হাফ ডে ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু বেসরকারি সংস্থা কর্মীদের ওয়ার্ক ফ্রম হোমের নির্দেশ দিয়েছে।
অতএব, আষাঢ়ের এই বর্ষণ দক্ষিণবঙ্গে আপাতত স্বস্তি নয়, বরং অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। হাওয়া অফিসের মতে, বৃহস্পতিবার থেকে আবহাওয়া কিছুটা ঠিক হতে পারে। কিন্তু তার আগে নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।