কোচবিহার: কোচবিহারের দিনহাটার রাজবংশী কৃষক উত্তম কুমার ব্রজবাসীর নামে অসম সরকারের ‘বিদেশি অনুপ্রবেশকারী’ তকমা-এই ঘটনা নিয়ে এবার সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টিকে “গণতন্ত্রের উপর পরিকল্পিত আক্রমণ” বলে আখ্যা দিয়ে তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান।
বিচলিত মুখ্যমন্ত্রী
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি হতবাক ও অত্যন্ত বিচলিত হয়েছি। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করা এক প্রান্তিক কৃষককে এনআরসি নোটিস দিয়ে অসম সরকার বিজেপির আসল চেহারাই প্রকাশ্যে এনেছে। বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছে। এটা শুধু একজন মানুষের বিরুদ্ধে নয়, এটা বাংলার স্বাভিমান ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধেই এক নগ্ন আগ্রাসন।”
উত্তম কুমার ব্রজবাসী পেশায় একজন কৃষক। দিন আনি দিন খাই সংসার চলে তাঁর। দাবি, কোনওদিন কোচবিহারের বাইরে পা রাখেননি, অথচ অসমের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল জানুয়ারি মাসে নোটিস পাঠায়, যেখানে তাঁকে ১৯৬৬–১৯৭১ সালের মধ্যে ‘অসম সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসা’ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলা হয়েছে।
রাজনৈতিক চাপানউতোর NRC controversy Mamata Banerjee statement
এই ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতোরও তুঙ্গে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ বিজেপিকে একহাত নিয়ে বলেন, “রাজবংশী তো এই মাটিরই সন্তান। উত্তমকে নোটিস মানে গোটা জনগোষ্ঠীকেই সন্দেহ করা। এটা বিজেপির বাঙালি বিরোধিতার পরিচায়ক।”
তবে পাল্টা রাজ্য সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলেছে বিজেপি। মাথাভাঙার বিজেপি বিধায়ক সুশীল চন্দ্র বর্মনের দাবি, “উত্তম এখানকার ভোটার। ট্রাইব্যুনাল কীভাবে এমন চিঠি পাঠাল? এর পেছনে রাজ্য সরকারেরই চক্রান্ত থাকতে পারে বিজেপিকে বাঙালি বিরোধী প্রতিপন্ন করার জন্য।”
এনআরসি চাপিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, “এটাই প্রমাণ করে যে অসমে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চাপিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছে, যেখানে তাদের কোনও সাংবিধানিক ক্ষমতা নেই। এটি একটি পরিষ্কার বার্তা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ভয় দেখিয়ে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সংবিধানবিরোধী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এখনই সমস্ত বিরোধী দলকে একজোট হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। বাংলা চুপ করে থাকবে না। আমরা আমাদের পরিচয়, ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনিয়ে নিতে দেব না।”
এই ঘটনার জেরে উত্তরের রাজনীতিতে নতুন করে তাপমাত্রা বেড়েছে। কোচবিহার জেলায় রাজবংশী সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, এবং প্রশাসনের তরফে উত্তম ব্রজবাসীর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার দাবিও উঠছে।