PM Modi Brasilia visit: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোমবার রাতে রিও ডি জেনেইরোতে ১৭তম ব্রিকস সম্মেলনে অংশগ্রহণের পর ব্রাসিলিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। এই রাষ্ট্রীয় সফরে তিনি ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন, যেখানে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, শক্তি, মহাকাশ, প্রযুক্তি, কৃষি, স্বাস্থ্য এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার মতো পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলোতে ভারত-ব্রাজিল কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রসারের উপর জোর দেওয়া হবে। এই সফর ভারতের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কারণ এটি প্রায় ছয় দশকের মধ্যে প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্রাসিলিয়ায় রাষ্ট্রীয় সফর। এই প্রতিবেদনে আমরা মোদির ব্রাসিলিয়া সফর, ব্রিকস সম্মেলনের ফলাফল এবং ভারতের গ্লোবাল সাউথ নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করব।
ব্রিকস সম্মেলন: বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার নতুন দিশা
৬-৭ জুলাই রিও ডি জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত ১৭তম ব্রিকস সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদি ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নতুন সদস্য মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতাদের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। সম্মেলনের মূল বিষয় ছিল গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর জোরদার করা, শান্তি ও নিরাপত্তা, বৈশ্বিক শাসন সংস্কার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দায়িত্বশীল ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্য সহযোগিতা। মোদি সম্মেলনে বলেন, ভারতের ব্রিকস চেয়ারম্যানশিপে (২০২৬) ব্রিকসকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে, যার মূলমন্ত্র হবে “স্থিতিস্থাপকতা ও সহযোগিতার জন্য উদ্ভাবন।” তিনি ব্রিকসকে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে উল্লেখ করেন।
সম্মেলনের প্রথম দিনে, মোদি ‘পরিবেশ, কপ-৩০ এবং গ্লোবাল হেলথ’ বিষয়ক অধিবেশনে বক্তৃতা দেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্রিকস দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার উপর জোর দেন। এছাড়া, তিনি বৈশ্বিক শাসন ও শান্তি-নিরাপত্তা বিষয়ক অধিবেশনে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন যে ২০২৫ সালের এপ্রিলে পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলা কেবল ভারতের উপর নয়, সমগ্র মানবতার উপর আঘাত ছিল। মোদি বলেন, “সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন, প্রচার বা আশ্রয় দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।” তিনি ব্রিকস নেতাদের পাহালগাম হামলার নিন্দা করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
ব্রাসিলিয়া সফর: ভারত-ব্রাজিল সম্পর্কের নতুন অধ্যায়
রিওতে সম্মেলন শেষ করে মোদি ব্রাসিলিয়ায় রাষ্ট্রীয় সফরে যান, যা ১৯৬৮ সালের পর প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্রাসিলিয়া সফর। এই সফরে তিনি রাষ্ট্রপতি লুলার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মিলিত হবেন। আলোচনার মূল বিষয় হবে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, শক্তি, মহাকাশ, প্রযুক্তি, কৃষি, স্বাস্থ্য এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা। ভারত ও ব্রাজিলের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব ২০০৬ সাল থেকে ক্রমশ শক্তিশালী হয়েছে, এবং এই সফর এই সম্পর্ককে আরও গভীর করবে।
মোদি রিওতে ভারতীয় সম্প্রদায়ের কাছ থেকে উষ্ণ স্বাগত পেয়েছেন, যেখানে ‘অপারেশন সিন্দুর’ থিমের একটি সাংস্কৃতিক নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এই নৃত্য, যার পটভূমিতে ছিল “সৌগন্ধ মুঝে ইস মিট্টি কি” গান, ভারতের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী প্রচেষ্টার প্রতীক। মোদি সামাজিক মাধ্যমে বলেন, “ব্রাজিলের ভারতীয় সম্প্রদায়ের উষ্ণ স্বাগত আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাঁদের ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সংযোগ এবং ভারতের উন্নয়নের প্রতি উৎসাহ অসাধারণ।”
সম্মেলনের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা
ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে মোদি উরুগুয়ের রাষ্ট্রপতি ইয়ামান্দু ওরসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা ভারত-মার্কোসুর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির প্রসার এবং ডিজিটাল সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা, রেল, স্বাস্থ্য, কৃষি এবং শক্তি খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। এই আলোচনা ভারতের গ্লোবাল সাউথ দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার প্রচেষ্টার অংশ।
ব্রিকসের ভবিষ্যৎ ও ভারতের ভূমিকা
ব্রিকস এখন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী উদীয়মান অর্থনীতির জোটগুলোর একটি। নতুন সদস্যদের যোগদানের ফলে এর প্রভাব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মোদি ব্রিকসকে একটি বহুপাক্ষিক বিশ্ব ব্যবস্থার প্রচারক হিসেবে উল্লেখ করেন এবং সুপারিশ করেন যে ব্রিকস নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের প্রকল্পগুলো চাহিদাভিত্তিক এবং দীর্ঘমেয়াদী টেকসই হওয়া উচিত। তিনি গ্লোবাল সাউথের জন্য একটি বিজ্ঞান ও গবেষণা ভাণ্ডার গঠন, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবরাহ চেইন নিরাপদ করা এবং দায়িত্বশীল এআই গবেষণার উপর জোর দেন।
ভারতের পাঁচ দেশের সফর
ব্রাজিল মোদির পাঁচ দেশের সফরের চতুর্থ পর্যায়। তিনি ঘানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এবং আর্জেন্টিনা সফরের পর ব্রাজিলে পৌঁছেন। ব্রাসিলিয়া সফরের পর তিনি নামিবিয়ায় যাবেন, যেখানে তিনি নামিবিয়ার পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন। এই সফর ভারতের গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্ব এবং বৈশ্বিক কূটনীতিতে তার ক্রমবর্ধমান ভূমিকার প্রতিফলন।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
মোদির ব্রাজিল সফর ভারতের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ভারত-ব্রাজিল বাণিজ্য ২০২৩-২৪ সালে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে, এবং এই সফরে নতুন বাণিজ্য চুক্তি এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ভারতীয় সম্প্রদায়ের উৎসাহ এবং মোদির সফর নিয়ে আলোচনা ভারতের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রভাবের প্রমাণ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্রাসিলিয়া সফর এবং ব্রিকস সম্মেলনে অংশগ্রহণ ভারতের বৈশ্বিক কূটনীতির একটি মাইলফলক। ব্রাজিলের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদার করা এবং ব্রিকসের মাধ্যমে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর উত্তোলন ভারতের নেতৃত্বের প্রতিফলন। মোদির দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং ব্রিকসের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিশ্বব্যাপী শান্তি, সমৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করবে।