লন্ডনের অল ইংল্যান্ড লন টেনিস ক্লাবে চলমান উইম্বলডন ২০২৫-এ (Wimbledon 2025) সার্বিয়ান টেনিস কিংবদন্তি নোভাক জোকোভিচ (Novak Djokovic) আরও একবার তাঁর অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। সোমবার (৭ জুলাই, ২০২৫) তিনি অস্ট্রেলিয়ার অ্যালেক্স ডি মিনারের বিরুদ্ধে প্রথম সেটে পিছিয়ে পড়েও অসাধারণ প্রত্যাবর্তন করে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছেন। চার সেটের এই ম্যাচে জোকোভিচ ১-৬, ৬-৪, ৬-৪, ৬-৪ স্কোরে জয়লাভ করেন, যা তিন ঘণ্টা ১৯ মিনিট ধরে চলেছিল। এই জয়ের মাধ্যমে তিনি উইম্বলডনে তাঁর ১৬তম কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছেন, যা রজার ফেদেরারের ১৮টি কোয়ার্টার ফাইনালের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই প্রতিবেদনে আমরা এই ম্যাচের বিশদ বিবরণ, জোকোভিচের কৌশল এবং তাঁর অষ্টম উইম্বলডন শিরোপার পথে সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করব।
ম্যাচের শুরুতে ধাক্কা
ম্যাচের শুরুটা জোকোভিচের জন্য মোটেও সহজ ছিল না। প্রথম সেটে তিনি তিনবার সার্ভিস ব্রেক করেন এবং চারটি ডাবল ফল্ট করে মাত্র ৩১ মিনিটে ১-৬ স্কোরে সেটটি হারেন। ডি মিনার, যিনি গত বছর হিপ ইনজুরির কারণে জোকোভিচের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হতে পারেননি, প্রথম সেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান। তাঁর দ্রুতগতির খেলা এবং ব্যাককোর্ট থেকে সুনির্দিষ্ট শট উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে দর্শকদের মুগ্ধ করে। জোকোভিচ নিজেও স্বীকার করেছেন, “আমি প্রথম সেটে খুব একটা সমাধান খুঁজে পাইনি। বাতাসের কারণে খেলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন ছিল, এবং ডি মিনার পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে সামাল দিয়েছিলেন।”
জোকোভিচের প্রত্যাবর্তন
দ্বিতীয় সেটে জোকোভিচ তাঁর খেলায় ফিরে আসেন। তিনি প্রথম গেমেই ডি মিনারের সার্ভিস ব্রেক করেন এবং দীর্ঘ ১৮ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের একটি ম্যারাথন গেমে তাঁর সার্ভিস ধরে রাখেন। যদিও ডি মিনার ষষ্ঠ ব্রেক পয়েন্টে জোকোভিচের সার্ভিস ব্রেক করেন, তবুও জোকোভিচ ৩৪ শটের একটি অসাধারণ র্যালির মাধ্যমে পুনরায় ব্রেক করে ৬-৪ স্কোরে দ্বিতীয় সেট জিতে নেন। এই সেটটি ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। জোকোভিচ বলেন, “দ্বিতীয় সেট শেষে আমি মনে করেছি, ‘ঠিক আছে, আমি খেলায় ফিরে এসেছি।’”
তৃতীয় সেটেও জোকোভিচ তাঁর ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। তিনি ডি মিনারের সার্ভিসে চাপ সৃষ্টি করেন এবং ৪-৪ স্কোরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক পয়েন্ট অর্জন করেন। ডি মিনারের ফোরহ্যান্ড ভুলের সুযোগে জোকোভিচ সেটটি ৬-৪ স্কোরে জিতে নেন। চতুর্থ সেটে ডি মিনার ৪-১ এগিয়ে যান, এবং মনে হচ্ছিল ম্যাচটি পঞ্চম সেটে গড়াবে। কিন্তু জোকোভিচ অসাধারণভাবে পাঁচটি গেম টানা জিতে ম্যাচটি শেষ করেন। শেষ ১৫ পয়েন্টের মধ্যে তিনি ১৪টি জিতে নেন, যা তাঁর মানসিক দৃঢ়তা এবং শারীরিক সক্ষমতার প্রমাণ দেয়।
ডি মিনারের চ্যালেঞ্জ
২৬ বছর বয়সী অ্যালেক্স ডি মিনার, যিনি উইম্বলডনে এবার মাত্র একটি সেট হারিয়েছিলেন, জোকোভিচের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত লড়াই করেছেন। তাঁর দ্রুতগতির খেলা এবং ঘাসের কোর্টে কম বাউন্সের সুবিধা নেওয়ার ক্ষমতা ম্যাচটিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তুলেছিল। জোকোভিচ নিজেই বলেন, “ডি মিনার ট্যুরের দ্রুততম খেলোয়াড়দের একজন। ঘাসের কোর্টে, যেখানে বল কম বাউন্স করে, তাঁর মতো খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে খেলা অত্যন্ত কঠিন। তিনি আমার দুর্বলতাগুলো প্রকাশ করেছিলেন।” তবে, ডি মিনার ব্রেক পয়েন্ট রূপান্তরে ব্যর্থতা এবং শেষ সেটে ধারাবাহিকতা হারানো তাঁর পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
রজার ফেদেরারের উপস্থিতি
ম্যাচটি আরও বিশেষ হয়ে ওঠে রজার ফেদেরারের উপস্থিতির কারণে। আটবারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন ফেদেরার রয়্যাল বক্স থেকে এই ম্যাচ দেখছিলেন। জোকোভিচ মজা করে বলেন, “এটি সম্ভবত প্রথমবার যে ফেদেরার আমাকে দেখছেন এবং আমি ম্যাচটি জিতেছি। আগের কয়েকবার আমি হেরেছিলাম, তাই এই ‘অভিশাপ’ ভাঙতে পেরে ভালো লাগছে।” ফেদেরারের সঙ্গে জোকোভিচের সংক্ষিপ্ত কথোপকথনও ম্যাচের পর আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে।
অষ্টম শিরোপার পথে
এই জয়ের মাধ্যমে জোকোভিচ উইম্বলডনে তাঁর ১০১তম ম্যাচ জয়ের রেকর্ড স্থাপন করেছেন, যা ফ্রেঞ্চ ওপেনে তাঁর ১০১ জয়ের সমান। তিনি এখন ফেদেরারের আটটি উইম্বলডন শিরোপার রেকর্ডের সমান হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন ইতালির ফ্লাভিও কোবোলি, যিনি মারিন চিলিচকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছেন। জোকোভিচ বলেন, “আমি এখনও পুরো ম্যাচটি প্রক্রিয়া করার চেষ্টা করছি। এটি একটি কঠিন লড়াই ছিল, তবে আমি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ধরে রাখতে পেরেছি।”
জোকোভিচের এই জয় শুধুমাত্র তাঁর ব্যক্তিগত কৃতিত্বই নয়, টেনিস জগতেও একটি বড় ঘটনা। তাঁর ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য অনুপ্রেরণা। উইম্বলডনের এই ম্যাচ ভারত এবং বিশ্বজুড়ে টেনিস ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। সামাজিক মাধ্যমে ভক্তরা জোকোভিচের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, এবং তাঁর অষ্টম শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে উৎসাহ প্রকাশ করছেন।
নোভাক জোকোভিচের এই জয় প্রমাণ করে যে ৩৮ বছর বয়সেও তিনি টেনিস জগতের শীর্ষে রয়েছেন। অ্যালেক্স ডি মিনারের মতো দ্রুত এবং প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে তাঁর প্রত্যাবর্তন তাঁর মানসিক শক্তি এবং কৌশলগত দক্ষতার প্রমাণ। কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্লাভিও কোবোলির বিরুদ্ধে তাঁর খেলা উইম্বলডন ২০২৫-এর আরেকটি আকর্ষণ হবে। জোকোভিচের ২৫তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা এবং ফেদেরারের রেকর্ডের সমান হওয়ার সম্ভাবনা এখন টেনিস ভক্তদের জন্য প্রধান আলোচনার বিষয়।