8th Pay Commission: পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যাশা ও সম্ভাবনা

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) নিয়ে উত্তেজনা এবং প্রত্যাশা তুঙ্গে। কেন্দ্রীয় সরকারের অষ্টম বেতন কমিশনের ঘোষণার পর থেকে রাজ্যের সরকারি…

West Bengal Government Employees’ Expectations Soar for 8th Pay Commission Salary Hike

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) নিয়ে উত্তেজনা এবং প্রত্যাশা তুঙ্গে। কেন্দ্রীয় সরকারের অষ্টম বেতন কমিশনের ঘোষণার পর থেকে রাজ্যের সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীরা তাদের বেতন, ভাতা এবং পেনশন সংক্রান্ত সুবিধাগুলির উন্নতির আশায় রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বেতন কমিশনের সুপারিশগুলি সাধারণত রাজ্য সরকারের বেতন কাঠামোর জন্য একটি নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে। তাই, পশ্চিমবঙ্গের কর্মচারীরা আশা করছেন যে অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশগুলি তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই প্রতিবেদনে আমরা পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যাশা, সম্ভাব্য বেতন বৃদ্ধি এবং অষ্টম বেতন কমিশনের প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

অষ্টম বেতন কমিশনের প্রেক্ষাপট
কেন্দ্রীয় সরকার ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের ঘোষণা করেছে, যা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই কমিশনের সুপারিশগুলি প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীদের জন্য বেতন, ভাতা এবং পেনশন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা আশা করছেন যে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের সুপারিশগুলির আলোকে তাদের বেতন কাঠামোর পুনর্গঠন করবে। বর্তমানে, পশ্চিমবঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ষষ্ঠ বেতন কমিশনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়, যা ২০১৯ সালে কার্যকর হয়েছিল। তবে, কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যে সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর করেছে, এবং অষ্টম বেতন কমিশনের ঘোষণার পর রাজ্যের কর্মচারীরা তাদের বেতন কাঠামোর সমতা আনার দাবি জানাচ্ছেন।

   

প্রত্যাশিত বেতন বৃদ্ধি এবং ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর
অষ্টম বেতন কমিশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর, যা বর্তমান মূল বেতনের উপর ভিত্তি করে নতুন বেতন নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। সপ্তম বেতন কমিশনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ছিল ২.৫৭, যা কর্মচারীদের বেতন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছিল। অষ্টম বেতন কমিশনের জন্য ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ১.৯২ থেকে ২.৮৬ এর মধ্যে হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। যদি ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.২৮ হয়, তবে ন্যূনতম মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ৪১,০০০ টাকা হতে পারে। এই বৃদ্ধি পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে, যদি রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সুপারিশগুলি গ্রহণ করে।

উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক একজন কর্মচারীর বর্তমান মূল বেতন ২৫,৫০০ টাকা। যদি ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.২৮ হয়, তবে নতুন মূল বেতন হবে ২৫,৫০০ × ২.২৮ = ৫৮,১৪০ টাকা। এর সাথে মহার্ঘ ভাতা (ডিএ), গৃহভাড়া ভাতা (এইচআরএ) এবং পরিবহন ভাতা (টিএ) যোগ হলে মোট বেতন আরও বাড়বে। এই ধরনের বেতন বৃদ্ধি রাজ্যের নিম্ন এবং মধ্য স্তরের কর্মচারীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হবে।

ভাতা এবং পেনশন সংস্কার
বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি, কর্মচারীরা মহার্ঘ ভাতা, গৃহভাড়া ভাতা এবং পরিবহন ভাতার উন্নতির প্রত্যাশা করছেন। বর্তমানে, পশ্চিমবঙ্গে মহার্ঘ ভাতা ১৮% (২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে কার্যকর), যা কেন্দ্রীয় সরকারের ৫০% মহার্ঘ ভাতার তুলনায় অনেক কম। অষ্টম বেতন কমিশন কার্যকর হলে, মহার্ঘ ভাতা নতুন মূল বেতনের সাথে সমন্বয় করা হতে পারে, যা কর্মচারীদের জন্য আরও আর্থিক সুবিধা নিয়ে আসবে।

Advertisements

পেনশনভোগীদের জন্যও অষ্টম বেতন কমিশন গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তম বেতন কমিশনে ন্যূনতম পেনশন ৯,০০০ টাকা নির্ধারিত হয়েছিল। অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.২৮ হলে ন্যূনতম পেনশন ২০,৫০০ টাকায় উন্নীত হতে পারে। এটি পশ্চিমবঙ্গের পেনশনভোগীদের জন্য উল্লেখযোগ্য আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করবে, বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে।

পশ্চিমবঙ্গের কর্মচারীদের দাবি
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে বেতন এবং ভাতার সমতা দাবি করে আসছেন। সম্প্রতি, রাজ্য সরকার ৪% মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা করেছে, যা ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। তবে, এই বৃদ্ধি অনেক কর্মচারীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। বিজেপি নেতা অমিত মালভিয়া এই ঘোষণাকে “প্রতারণা” বলে সমালোচনা করেছেন, উল্লেখ করে যে পশ্চিমবঙ্গ এখনও ষষ্ঠ বেতন কমিশনের ভিত্তিতে চলছে, যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর করেছে। কর্মচারী ইউনিয়নগুলি দাবি করছে যে রাজ্য সরকারের উচিত অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশগুলি দ্রুত গ্রহণ করা এবং বেতন কাঠামোর পুনর্গঠন করা।

অর্থনৈতিক প্রভাব
অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হলে, পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি রাজ্যের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বেতন বৃদ্ধির ফলে কর্মচারীদের হাতে বেশি নিষ্পত্তিযোগ্য আয় থাকবে, যা ভোগ্যপণ্য এবং পরিষেবার চাহিদা বাড়াবে। এটি স্থানীয় ব্যবসা এবং অর্থনীতির জন্য উপকারী হতে পারে। তবে, রাজ্য সরকারের জন্য এই বেতন বৃদ্ধি বাস্তবায়নের জন্য উল্লেখযোগ্য আর্থিক বোঝা বহন করতে হবে, যা রাজ্যের বাজেটের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীরা অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশের দিকে তাকিয়ে আছেন আশার দৃষ্টিতে। বেতন বৃদ্ধি, ভাতা সংস্কার এবং পেনশন বৃদ্ধির প্রত্যাশা তাদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। তবে, রাজ্য সরকার কতটা দ্রুত এবং কীভাবে এই সুপারিশগুলি গ্রহণ করবে, তা এখনও অনিশ্চিত। কর্মচারীদের দাবি এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের ভারসাম্য রক্ষা করা রাজ্য সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হবে। আগামী মাসগুলিতে অষ্টম বেতন কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ এবং রাজ্য সরকারের পদক্ষেপের উপর নির্ভর করবে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ।