আগামী বিধানসভা নির্বাচনে একক শক্তিতে পশ্চিমবঙ্গ দখল সম্ভব নয় তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বঙ্গ বিজেপির (BJP West Bengal) সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর ভরসা বাম ভোট! শুধু শমীক নন, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও বারে বারে বামপন্থীদের কাছে ভোট চেয়ে আবেদন করছেন। বাংলার পূর্বতন শাসক বামফ্রন্ট গত দেড় দশক ক্ষমতার বাইরে। ভোট তলানিতে। তবুও তাদের শেষ সন্বল পাঁচ-ছয় শতাংশ ভোটে নজর বিজেপির।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী’ করার দাবি করে থাকেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করেছে বিজেপি শূন্য বিধানসভা হবে। বিধানসভায় শূন্য হয়ে গেছে রাজ্যের দুই পূর্বতন শাসক দল জাতীয় কংগ্রেস ও সিপিআইএম।
ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী দল হিসেবে বিজেপির অবস্থা তথৈবচ। দলত্যাগ আশঙ্কা আরো বেড়েছে। দলটির অভ্যন্তরে গোষ্ঠীবাজি প্রবল। বিজেপি বাংলায় “লোকসভা কেন্দ্রিক” দল হিসেবে চিহ্নিত।
বাংলা রাজনীতিতে বিজেপি কতটা প্রাসঙ্গিক?
বাংলা রাজনীতিতে ভারতীয় জনতা পার্টির উত্থান ছিল অনেকটাই ঝড়ের মতো। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি দখল করেছিল বিজেপি। বাম ও কংগ্রেস যখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে, তখন বাংলার মানুষের এক বড় অংশ বিজেপিকে বিকল্প বলে ভাবতে শুরু করেন। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর সেই গতি থমকে যায়।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ব্যাপক প্রচার, প্রধানমন্ত্রী মোদী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের একের পর এক সফর এবং ধর্মীয় মেরুকরণের কৌশল নিয়েও ৭৭টি আসন এসেছিল। পরে দলবদলের ধাক্কায় বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা কমে চলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষণে উঠে আসছে, বিজেপির সাময়িক বিকাশ হয়েছিল। দলটির ‘হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্তান’ ঘরানার রাজনীতি বাংলায় পুরোপুরি জমি পায়নি।
বিশ্লেষণ বলছে, বিজেপির সামনে বাংলা দখলের সুযোগ আছে কারণ,
১. বিজেপি এখনও কেন্দ্রে শাসক দল। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক, প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব এই সমস্ত কিছুতেই বিজেপির ভূমিকা থেকে যায়।
২. তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী ভোটারদের কাছে এখন বিজেপিই প্রধান বিকল্প, কারণ বাম-কংগ্রেস অতি দূর্বল। তবে সিপিআইএমের গণসংযোগ ও সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা তৃণমূল ও বিজেপির কাছে ইর্ষনীয়।
মণ্ডলে মণ্ডলে লঙ্কাকাণ্ড!
শুধু সরকার বিরোধী ভোট ও ধর্মীয় মেরুকরণই ভরসা বিজেপির। গত ১০ বছরে রাজ্যে তেমন কোনও সংগঠন নেই। দলীয় সাংগঠনিক স্তর ‘মণ্ডল’ পর্যায়ে গোষ্ঠীবাজি চরমে। বিজেপির নেতৃত্ব সংকট রয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, অর্জুন সিং প্রমুখ নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ চরমে।
জনসংযোগের অভাব। তৃণমূল যখন দুয়ারে সরকার, লক্ষীর ভান্ডার, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদির মাধ্যমে সরাসরি মানুষের জীবনে ঢুকে পড়েছে, বিজেপি এখনও কেন্দ্রীয় ইস্যু ও হিন্দু আবেগনির্ভর রাজনীতি করে চলেছে।
সংখ্যালঘু ভোটারদের সম্পূর্ণ বিরোধিতা বিজেপিকে একতরফা হিন্দু ভোট নির্ভর করে তুলেছে, যা সংখ্যাতাত্ত্বিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। ড্যামেজ কন্ট্রোলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের কণ্ঠে সংখ্যালঘু প্রীতি উপচে পড়ছে।
বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, যেহেতু গত (২০২৪) লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হয়েছে। এই ফলাফল বোঝায় যে, বিজেপি এখনও মুছে যায়নি। কিন্তু একে রাজ্যে ক্ষমতা গ্রহণের যোগ্য বিকল্প বলা যাবে ন।
হিসেবেই থেকে যাবে—নির্বাচনের সময় ঝাঁপানো, তার পর আবার আড়ালে সরে যাওয়া একটি বাহ্যিক শক্তি।