বিশ্বের ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলোর তালিকা নিয়ে আবারও আলোচনা জমে উঠেছে। সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংবাদ প্রতিষ্ঠান U.S. News & World Report কর্তৃক প্রকাশিত ২০২৫ সালের বিশ্বের শীর্ষ ৫০ ক্ষমতাশালী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ (Bangladesh) একটি উল্লেখযোগ্য অবস্থান দখল করেছে, যা দেশের জনগণের জন্য গর্বের বিষয়। তবে, এই তালিকায় পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তি না থাকা বেশ চাঞ্চল্যকর একটি বিষয় হিসেবে গৃহীত হয়েছে। আসুন, এই তালিকার বিশ্লেষণ করি এবং বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।
তালিকার সারাংশ
U.S. News & World Report-এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জন্য বিশ্বের শীর্ষ ৫০ ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র প্রথম স্থানে রয়েছে, যা তার শক্তিশালী অর্থনীতি (২৫ ট্রিলিয়ন ডলার, বিশ্ব ব্যাংক, ২০২৪) এবং বৃহত্তম সামরিক ব্যয় (৮৭৭ বিলিয়ন ডলার, SIPRI, ২০২৪) দ্বারা সমর্থিত। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন, যার অর্থনৈতিক মান ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার এবং নৌবাহিনীর সম্প্রসারণ চলছে। তৃতীয় থেকে দশম স্থানে রয়েছে রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, জাপান, সৌদি আরব এবং ইসরায়েল।
এই তালিকায় বাংলাদেশ ৪৭তম স্থানে রয়েছে, যা একটি অসাধারণ অগ্রগতির পরিচয় দেয়। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ ১২৩তম স্থানে ছিল, আর এখন ৪৭তম স্থানে উন্নীত হওয়া তার অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামরিক শক্তি এবং বৈশ্বিক প্রভাবের পরিচয় দেয়। অন্যদিকে, পাকিস্তান, যা সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়, এই তালিকায় স্থান পায়নি, যা তাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা হতে পারে।
বাংলাদেশের উত্থানের কারণ
বাংলাদেশের এই অসাধারণ উত্থানের পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রথমত, দেশের অর্থনীতি গত দশকে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন ডলার (IMF, ২০২৪) এবং এটি প্রতি বছর গড়ে ৬-৭% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পোশাক শিল্প, রেমিট্যান্স এবং শিল্পায়ন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শক্তির মূল ভিত্তি।
দ্বিতীয়ত, সামরিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য প্রগতি করেছে। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার (২০২৫) অনুযায়ী, বাংলাদেশের সামরিক শক্তি সূচক (PwrIndx) উন্নতি পেয়েছে, যা দেশের সীমানা সুরক্ষা এবং শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের ক্ষমতাকে প্রতিফলিত করে। বাংলাদেশ ইউএন শান্তিরক্ষা মিশনে বৃহত্তম অবদানকারী দেশগুলোর একটি, যা তার বৈশ্বিক প্রভাব বাড়ায়।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলো এই র্যাঙ্কিং-এ সহায়ক হয়েছে। ভারত, চীন, রাশিয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক তার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়িয়েছে।
পাকিস্তানের বাদ পড়ার কারণ
পাকিস্তানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক স্থিতি বর্তমানে দুর্বল। ২০২৪ সালে তার জিডিপি প্রায় ৩৩০ বিলিয়ন ডলার (IMF), তবে মুদ্রাস্ফীতি এবং বাহ্যিক ঋণের চাপে অর্থনীতি সংকটে রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের সামরিক শক্তি সত্ত্বেও (১২তম স্থান, গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার, ২০২৫), আন্তর্জাতিক সম্পর্কে তার প্রভাব কমে গেছে। আফগানিস্তানে অস্থিরতা এবং ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা পাকিস্তানের বৈশ্বিক চিত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তৃতীয়ত, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আভ্যন্তরীণ সংকট পাকিস্তানের ক্ষমতার রেটিং-এ প্রভাব ফেলেছে।
তুলনা ও আলোচনা
বাংলাদেশের তুলনায় পাকিস্তানের বাদ পড়া বেশ আকর্ষণীয়। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটির কাছাকাছি, যেখানে পাকিস্তানের ২৩ কোটি। তবে, বাংলাদেশ বর্তমানে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ায় এই তালিকায় স্থান পেয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক শক্তি (১২তম, গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার) বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি, তবুও বৈশ্বিক প্রভাবে পিছিয়ে পড়েছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বাংলাদেশের জন্য এই র্যাঙ্কিং একটি স্বাগত বার্তা, তবে এটি একটি শুরু মাত্র। স্থিতিশীল রাজনীতি, শিক্ষা ও প্রযুক্তি উন্নয়ন, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করলে বাংলাদেশ আরও উন্নতি করতে পারে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক সংস্কার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে পেলে ভবিষ্যতে তালিকায় ফিরে আসতে পারে।
সুতরাং, বাংলাদেশের ৪৭তম স্থান একটি গর্বের বিষয়, যা দেশের উন্নয়নের গল্প বলে। আগামী দিনে এই অবস্থান আরও উন্নত হবে কিনা, তা নির্ভর করছে আমাদের নেতৃত্ব এবং জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টার উপর।