শত্রুতা শুধুই স্মৃতি! মালদ্বীপের মনের মধ্যে মোদী!

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক মঞ্চে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে, যা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মালদ্বীপ (Maldives) সরকার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তাদের স্বাধীনতা দিবসের…

PM Modi

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক মঞ্চে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে, যা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মালদ্বীপ (Maldives) সরকার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তাদের স্বাধীনতা দিবসের প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, যা ২৬ জুলাই ২০২৫-এ পালন করা হবে। এই সিদ্ধান্তটি কেবলমাত্র একটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নয়, বরং দুই দেশের সম্পর্কে একটি নতুন অধ্যায়ের শুরু হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। মাত্র কয়েক মাস আগে পর্যন্ত মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুয়িজু “ইন্ডিয়া আউট” নীতি নিয়ে রাজনৈতিক মঞ্চে উঠে এসেছিলেন, যা ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু এখন সেই শত্রুতার ছায়া কেটে গিয়ে একটি নতুন বন্ধনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

পটভূমি: শত্রুতা থেকে বন্ধনের দিকে
২০২৩ সালের শেষে মুয়িজু রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তাদের প্রচারে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে মালদ্বীপ থেকে বের করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই “ইন্ডিয়া আউট” প্রচারটি তাঁর প্রো-চায়না নীতির একটি অংশ হিসেবে গণ্য হয়েছিল। এর ফলে ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধন কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশ্যে মালদ্বীপের কিছু কর্মকর্তার অপমানজনক মন্তব্য ও ২০২৪ সালের শুরুতে ঘটে যাওয়া পর্যটন বিবাদও এই সম্পর্কে আরও ক্ষতি করেছিল। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মালদ্বীপের অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক চাপ বাড়ার কারণে মুয়িজুকে পুনর্বিবেচনা করতে হয়েছে।

   

ভারত মালদ্বীপের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সঙ্গী। ২০২৪ সালে ভারতের তরফে মালদ্বীপকে প্রদান করা ৪০০ মিলিয়ন ডলারের মুদ্রা স্বাপক ও ৩০ বিলিয়ন টাকার সাহায্য এই সম্পর্কের গভীরতা নির্দেশ করে। তাছাড়া, ভারতীয় পর্যটকরা মালদ্বীপের অর্থনৈতিক চাক্ষুষ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০২৩ সালের লক্ষদ্বীপ পর্যটন বিবাদের পর ভারতীয় পর্যটনকারীদের সংখ্যা ১৪% বৃদ্ধি পায়, যা মালদ্বীপের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা ছিল। এই অর্থনৈতিক নির্ভরতা মুয়িজুকে ভারতের সঙ্গে পুনর্নবীকরণের পথে যাওয়ার জন্য বাধ্য করেছে।

কূটনৈতিক দক্ষতা ও মোদীর প্রভাব
ভারতীয় বাহ্যিক মন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সরাসরি মন্তব্য, “ভারতের সঙ্গে কাজ করলে সুবিধা আছে, নয়তো এর একটি খরচ আছে,” এই নতুন সম্পর্কের ভিত্তি রচনা করেছে। মুয়িজুর সঙ্গে মোদীর সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে দুই দেশের মধ্যে পুনর্স্থাপিত বন্ধনের স্পষ্ট সংকেত পাওয়া গেছে। মালদ্বীপের মতো ছোট উপকূলীয় রাষ্ট্রের জন্য ভারত একটি সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে অপরিহার্য। ভারতের “নেবারহুড ফার্স্ট” নীতি এবং মালদ্বীপের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।

মোদীর ব্যক্তিগত প্রভাবও এই আমন্ত্রণের পেছনে একটি বড় কারণ। তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতের একটি শক্তিশালী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় একটি অভূতপূর্ব প্রভাব বিস্তার করেছে। মালদ্বীপের এই আমন্ত্রণটি মোদীর কূটনৈতিক দক্ষতার একটি প্রমাণ।

Advertisements

চীনের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
মুয়িজুর প্রো-চায়না নীতি ভারতের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অংশ হিসেবে মালদ্বীপে চীনী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। তবে, মালদ্বীপের অর্থনৈতিক সংকট ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের সীমাবদ্ধতা মুয়িজুকে ভারতের দিকে ফিরতে বাধ্য করেছে। এটি ভারত-চীন প্রভাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি, যা ভবিষ্যতে ভারতের পক্ষে আরও সুবিধাজনক হতে পারে।

মানুষের প্রতিক্রিয়া
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, “শত্রুতা শুধুই স্মৃতি হয়ে গেছে, এখন বন্ধনের সময়।” অন্যদিকে, কিছু ব্যক্তি এই পদক্ষেপকে মালদ্বীপের অর্থনৈতিক দুর্বলতার প্রমাণ হিসেবে দেখছেন। তবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে আশার আলো ফুটে উঠেছে যে, ভারত ও মালদ্বীপের সম্পর্ক আবারও শক্তিশালী হবে।

মালদ্বীপের এই আমন্ত্রণটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়, বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমীকরণের একটি দিকনির্দেশক। ভারতের নেতৃত্বে মোদী এবং মালদ্বীপের মুয়িজুর মধ্যে নতুন শুরু এই অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করতে পারে। শত্রুতার দিন শুধুই স্মৃতি হয়ে রয়েছে, এখন মোদী মালদ্বীপের মনের মধ্যে একটি নতুন আলো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছেন। ২৬ জুলাইয়ের এই ইতিহাসিক দিনটি দুই দেশের সম্পর্কে এক নতুন যুগের সূচনা হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।