সংখ্যালঘু অধিকার বিতর্কে মুখোমুখি ওয়াইসি-রিজিজু

কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসির (Owaisi) মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ তীব্র বাক্যবিনিময় হয়েছে। এই…

Owaisi and rijiju controversy

কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসির (Owaisi) মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ তীব্র বাক্যবিনিময় হয়েছে।

এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে রিজিজুর মন্তব্য, (Owaisi)  যেখানে তিনি দাবি করেছেন, “ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের তুলনায় বেশি সুবিধা এবং সুরক্ষা পায়।” এই মন্তব্যের জবাবে ওয়াইসি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, “আপনি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের মন্ত্রী, কোনো রাজা নন… সংখ্যালঘু অধিকার মৌলিক অধিকার, কোনো দান নয়।”

   

রিজিজু (Owaisi)  এই সমালোচনার জবাবে ওয়াইসি এক্স-এ পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, “কীভাবে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলির সংখ্যালঘুরা ভারতে আসতে পছন্দ করে, কিন্তু আমাদের সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগ করে না?” এই বিতর্ক ভারতের সংখ্যালঘু অধিকার এবং সরকারি নীতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত করেছে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে, যেখানে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বিতর্কের পটভূমি (Owaisi) 

কিরেন রিজিজু, যিনি একজন বৌদ্ধ এবং প্রথম বৌদ্ধ হিসেবে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন, সম্প্রতি দাবি করেছেন যে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ১১ বছরের শাসনকালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য “অভূতপূর্ব সমর্থন” প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, “সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আজ সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের তুলনায় বেশি লক্ষ্যভিত্তিক সমর্থন এবং তহবিল পায়।

যা সংখ্যালঘুরা পায়, তা হিন্দুরা পায় না।” তিনি প্রধানমন্ত্রী জনবিকাশ কর্মসূচি (পিএমজেভিকে) এবং প্রধানমন্ত্রী বিরাসত কা সম্বর্ধন (পিএম ভিকাস)-এর মতো প্রকল্পের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এই প্রকল্পগুলি সংখ্যালঘুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে(Owaisi) ।

এই মন্তব্যের জবাবে ওয়াইসি (Owaisi) তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “এটা কি সুবিধা যে প্রতিদিন মুসলিমদের পাকিস্তানি, বাংলাদেশি, জিহাদি বা রোহিঙ্গা বলা হয়? এটা কি সুরক্ষা যে মুসলিমরা লিঞ্চিংয়ের শিকার হয়? ভারতীয় নাগরিকদের অপহরণ করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়, এটা কি সুরক্ষা?”

তিনি আরও বলেন, “ভারতের সংখ্যালঘুরা এখন আর দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকও নয়, তারা যেন জিম্মি।” ওয়াইসি সরকারের ওয়াকফ (সংশোধন) আইন, ২০২৫-এর সমালোচনা করে বলেন, এই আইন মুসলিমদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে এবং ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিমদের অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করছে।

রিজিজুর পাল্টা যুক্তি

রিজিজু তাঁর এক্স পোস্টে বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি সকলের জন্য, এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলি সংখ্যালঘুদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, “প্রতিবেশী দেশগুলির সংখ্যালঘুরা ভারতে আশ্রয় নিতে চায়, কিন্তু ভারতের সংখ্যালঘুরা কেন দেশত্যাগ করে না?” তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের সংখ্যালঘুরা ভারতে আশ্রয় নিয়েছে, যা প্রমাণ করে ভারত সংখ্যালঘুদের জন্য নিরাপদ।

রিজিজু (Owaisi) আরও দাবি করেন, ভারতের সংবিধানে ছয়টি স্বীকৃত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় (মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন এবং পার্সি) থাকলেও, “বাস্তবে, সামাজিকভাবে, আবেগগতভাবে কেউ সংখ্যালঘু নয়।” তিনি বলেন, ভারতে কোনো সম্প্রদায়কে তাদের সংখ্যালঘু পরিচয়ের কারণে দুর্বল বোধ করানো হয় না।

Advertisements

সংখ্যালঘু অধিকারের সাংবিধানিক প্রেক্ষাপটভারতের সংবিধানে সংখ্যালঘু অধিকার সুরক্ষিত করার জন্য বেশ কিছু ধারা রয়েছে। ধারা ২৫ থেকে ৩০-এ ধর্মীয় এবং ভাষাগত সংখ্যালঘুদের অধিকার, যেমন ধর্ম পালন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং সংস্কৃতি সংরক্ষণের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

জওহরলাল নেহরু ১৯৪৬ সালে উদ্দেশ্য প্রস্তাবে বলেছিলেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত না হলে ভারতের অগ্রগতি সম্ভব নয়। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা কমিটি সংখ্যালঘু অধিকারের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে এই ধারাগুলি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিল।

ওয়াইসির (Owaisi) মন্তব্য এই সাংবিধানিক অধিকারের উপর জোর দেয়। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু অধিকার কোনো সরকারি দয়া নয়, বরং সংবিধানে নিশ্চিত মৌলিক অধিকার। তিনি সরকারের নীতি, যেমন মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল ফেলোশিপ বন্ধ করা এবং সংখ্যালঘু শিক্ষার জন্য বাজেট হ্রাসের সমালোচনা করেন।

পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপট

পশ্চিমবঙ্গে, যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ২৭%, এই বিতর্ক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তৃণমূল কংগ্রেস সরকার সংখ্যালঘু কল্যাণের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে, যেমন ইমাম ও মুয়াজ্জিন ভাতা। তবে, বিজেপি অভিযোগ করে, এটি তোষণ নীতি। এই বিতর্ক রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

এক্স-এ এই বিতর্ক ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ রিজিজুর মন্তব্য সমর্থন করে বলেছেন, ভারত সংখ্যালঘুদের জন্য নিরাপদ এবং সরকারি প্রকল্প তাদের উন্নয়নে অবদান রাখছে। অন্যদিকে, ওয়াইসির সমর্থকরা বলছেন, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্য এবং সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সরকারের দাবির বিপরীত।

দিনহাটার বাসিন্দাকে অসমের NRC-র নোটিশ, ‘অনুপ্রবেশকারী’ তকমার মুখে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক

ভবিষ্যৎ প্রভাব

এই বিতর্ক ভারতের সংখ্যালঘু অধিকার এবং সরকারি নীতি নিয়ে গভীর আলোচনার সূত্রপাত করেছে। ওয়াকফ (সংশোধন) আইন এবং সংখ্যালঘু শিক্ষার জন্য বাজেট হ্রাসের মতো বিষয়গুলি রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে(Owaisi) । পশ্চিমবঙ্গে, যেখানে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন, এই বিতর্ক তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আরও তীব্র করতে পারে।

এই ঘটনা ভারতের সাংবিধানিক মূল্যবোধ এবং সংখ্যালঘু অধিকারের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আগামী দিনে এই বিতর্ক কীভাবে রাজনৈতিক ও সামাজিক মঞ্চে প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সকলের দৃষ্টি রয়েছে।