কেন্দ্রীয় সরকারের জনধন প্রকল্প ও বিভিন্ন আর্থিক প্রকল্পের সুবিধা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছনোর কারণে দেশজুড়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার হার দ্রুত হারে বাড়ছে। এরই প্রেক্ষিতে, গ্রাহক পরিষেবা উন্নত করা এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি (Public Sector Bank) প্রায় ৫০ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগ করতে চলেছে।
সূত্রের খবর, এই নিয়োগের মধ্যে প্রায় ২১ হাজার হবেন আধিকারিক স্তরের কর্মী, আর বাকি পদে নিয়োগ হবে ক্লার্ক এবং অন্যান্য সাধারণ পদে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য — ব্যাঙ্ক (Public Sector Bank) পরিষেবার মানোন্নয়ন এবং নিত্যনতুন শাখা খোলার পরিকল্পনাকে সফল করা।
SBI-এর বৃহৎ নিয়োগ পরিকল্পনা
১২টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মধ্যে সবচেয়ে বড় ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক (SBI) চলতি অর্থবছরে বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন আধিকারিক সহ ২০ হাজার কর্মী নিয়োগ করতে চলেছে। ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ৫০৫ জন প্রবেশনারি অফিসার (PO) এবং ১৩,৪৫৫ জন জুনিয়র অ্যাসোসিয়েট নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। এই কর্মীরা মূলত দেশের ৩৫টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শাখাগুলিতে কাজ করবেন।
২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত SBI-র মোট কর্মী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২,৩৬,২২৬। এর মধ্যে ১,১৫,০৬৬ জন আধিকারিক পর্যায়ের কর্মী। SBI জানিয়েছে, পূর্ণ সময়ের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতি কর্মীর জন্য ৪০,৪৪০.৫৯ টাকা ব্যয় হয়েছে।
কর্মী স্থায়িত্বে নজরকাড়া SBI
প্রতি বছর SBI থেকে স্বেচ্ছায় অবসর বা পদত্যাগের হার ২ শতাংশের নীচে থাকে। ব্যাঙ্কের উন্নত কর্মী-কল্যাণ পরিকল্পনা ও সুযোগ সুবিধার জন্য অধিকাংশ কর্মী প্রতিষ্ঠান ছাড়তে চান না। এই স্থায়িত্ব ব্যাঙ্কের পরিষেবা উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছে।
অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নিয়োগ
পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (PNB): ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫,৫০০ জনের বেশি কর্মী নিয়োগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। মার্চ পর্যন্ত ব্যাঙ্কটির মোট কর্মী সংখ্যা ১,০২,৭৪৬।
সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া: চলতি অর্থবছরে ৪ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা করেছে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পথে শাখা সংস্থা
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে তাদের শাখা সংস্থা ও যৌথ সংস্থায় বিনিয়োগ বাড়ানোর সবুজ সংকেত দিয়েছে। লক্ষ্য একটাই — পরিকাঠামোগত এবং পরিচালন কাঠামো জোরদার করে সেগুলিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা।
এই উদ্যোগের ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মূল বিনিয়োগ থেকে মোটা অঙ্কের রিটার্ন পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। অর্থ মন্ত্রকের ধারণা, IPO বা শেয়ার নথিভুক্তির মাধ্যমে এই সংস্থাগুলির আর্থিক স্বচ্ছতা বাড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে বিলগ্নিকরণও সহজ হবে।
জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির প্রায় ১৫টি শাখা বা যৌথ সংস্থা বর্তমানে শেয়ারবাজারে IPO ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে জীবনবীমা, মিউচুয়াল ফান্ড, পেমেন্টস ব্যাংক, হাউজিং ফাইন্যান্স ইত্যাদি সংস্থা।
একদিকে যেমন গ্রাহক পরিষেবা শক্তিশালী করতে নতুন শাখা ও কর্মী নিয়োগে জোর দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি, তেমনই দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক স্বচ্ছতা এবং বিনিয়োগে লাভবান হওয়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। ব্যাঙ্কিং খাতের এই পরিবর্তন পরবর্তী কয়েক বছরে ভারতের আর্থিক পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।