কলকাতা: রাস্তার কতটা অংশ গাড়ির জন্য, আর কতটা অংশ পথচারীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে — এবার সেই বিষয়ে আসতে চলেছে সর্বভারতীয় একটি ফুটপাত নীতি (National Footpath Policy)। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রক সমস্ত রাজ্যের কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে।
কোন রাজ্যের নিজস্ব ফুটপাথ নীতি রয়েছে, থাকলে তার ধরন কী, বা কোথাও যদি এখনও কোনও নীতি তৈরি না হয়ে থাকে — তাও জানাতে বলা হয়েছে। এই সব রিপোর্টের ভিত্তিতে দেশের সমস্ত রাজ্যের জন্য প্রযোজ্য একটি ফুটপাত ‘ফুটপাথ পলিসি’ (Uniform Footpath Policy) গঠনের পথে হাঁটছে কেন্দ্র।
শুধু ফুটপাথ নয়, শহরের মধ্যে কোথায় কতটি ফুট ওভারব্রিজ এবং সাবওয়ে রয়েছে, তার তালিকাও চেয়েছে কেন্দ্র। কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরুর মতো শহরে পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপার করাতে কোথায় কোথায় অবকাঠামোগত সংযোজন প্রয়োজন, তা খতিয়ে দেখাই এখন সরকারের উদ্দেশ্য।
নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্যের নগরোন্নয়ন দপ্তরের কাছে একটি পৃথক ফুটপাথ নীতি ইতিমধ্যেই রয়েছে। তবে পূর্ত দপ্তর এবং পঞ্চায়েত দপ্তরের থেকে এখনও পর্যন্ত সেই তথ্য আসেনি। এ রাজ্যে শহরাঞ্চলের রাস্তাঘাটের দায়িত্বে থাকে মূলত পূর্ত ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। আর গ্রামীণ অঞ্চলে রাস্তার দেখভাল করে পঞ্চায়েত দপ্তর। ইতিমধ্যেই এই তিন দপ্তরকে একত্রে একটি ফুটপাত রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।
নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে গাড়ির জন্য যেমন রাস্তা বরাদ্দ থাকে, পথচারীদের জন্য নির্দিষ্ট ফুটপাথও থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। কলকাতা হোক বা জেলার শহর — অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফুটপাথ দখল করে বসে থাকেন হকাররা। ফলে সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমে হাঁটেন, যা থেকে ঘটে বহু দুর্ঘটনা। সুপ্রিম কোর্টও সেই বিষয়টি নজরে এনে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছে — ফুটপাথ হকারমুক্ত রাখতে হবে এবং পথচারীর জন্য সহজগম্য করতে হবে।
কলকাতা শহর হোক কিংবা মফস্বলের শহর — বহু জায়গাতেই মূল রাস্তার পাশের ফুটপাথ হকারদের দখলে চলে যায়। সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে মূল রাস্তায় হাঁটেন, যার ফলেই ঘটে দুর্ঘটনা। আদালতের নির্দেশ মেনে কলকাতা পুরসভা একাধিকবার অভিযান চালালেও, কিছুদিন পর আবার আগের পরিস্থিতি ফিরে আসে।
কলকাতা পুরসভা আদালতের নির্দেশে কিছুদিন অভিযান চালালেও পরে আবার পরিস্থিতি আগের মতোই হয়ে যায়। হকাররা ফিরে আসেন, পথচারীদের নিরাপদ চলাচল হয় বাধাগ্রস্ত। এই অবস্থায় কেন্দ্রের ফুটপাত নীতির খসড়া তৈরি হলে সব রাজ্যের ক্ষেত্রেই সমান নিয়ম বলবৎ হবে — যেমন, কত ফুট রাস্তার কত শতাংশ ফুটপাথ বরাদ্দ থাকবে, কোথায় ওভারব্রিজ প্রয়োজন, কত দূরত্বে সাবওয়ে থাকতে হবে ইত্যাদি।
নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্য ও কেন্দ্র উভয়ই দুর্ঘটনা রোধে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ এবং পথচারীদের সুরক্ষায় ফুটপাথ ব্যবহারে জোর দিচ্ছে। একই সঙ্গে জনঘনত্ব বিশ্লেষণ করে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ওভারব্রিজ বা সাবওয়ে তৈরির পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে। যেমন সায়েন্স সিটি, উল্টোডাঙা, বেলঘাটা বা পাটুলির মতো এলাকায় যেভাবে এই ব্যবস্থাগুলি রয়েছে।
সব মিলিয়ে, দেশের প্রতিটি মানুষের পথ চলাকে নিরাপদ করতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। আর তার প্রথম ধাপ — সমস্ত রাজ্যের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং ‘ফুটপাথ পলিসি’ রূপায়ণ। এখন দেখার, এই নীতি কবে কার্যকর হয় এবং বাস্তবচিত্রে এর প্রতিফলন কতটা ঘটে।
সুপ্রিম কোর্ট চায়, কত ফুট প্রশস্ত রাস্তার কতটা অংশ ফুটপাথের জন্য বরাদ্দ থাকবে, তার ফুটপাত গাইডলাইন থাকুক। একই নিয়মে দেশের সব রাজ্যে সেই অনুযায়ী রাস্তাঘাটের পরিকল্পনা হবে। এই ফুটপাত নীতির ফলে পথচারীদের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।