তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ এবং চিকিৎসক নেতা শান্তনু সেনের ডিগ্রি বিতর্ক নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট (High Court) একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিল শান্তনু সেনের ডাক্তারি রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যার বিরুদ্ধে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেন।
হাইকোর্টের (High Court) বিচারপতি অমৃতা সিনহার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই মামলার শুনানি গ্রহণ করে এবং মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের নির্দেশ প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত শান্তনু সেনের জন্য একটি বড় স্বস্তি এনেছে এবং রাজ্যের রাজনৈতিক ও চিকিৎসা মহলে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
শান্তনু সেন, (High Court) যিনি পেশায় একজন চিকিৎসক এবং তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখপাত্র, তার ডাক্তারি ডিগ্রির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি এবং তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায় অভিযোগ করেছিলেন যে শান্তনু সেনের ডিগ্রি বৈধ নয়। এই অভিযোগের ভিত্তিতে মেডিক্যাল কাউন্সিল ২০২৫ সালের জুলাই মাসে শান্তনু সেনের ডাক্তারি রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
এই সিদ্ধান্তের পর শান্তনু সেন (High Court) দাবি করেন যে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তিনি এই বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি আরও বলেন, “আমার অনেক কিছু বলার ছিল। আমি যদি শুনানির সুযোগ পাই, তবে সব কিছু স্পষ্ট করে বলব।”
এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করে। বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার পূর্বে শান্তনু সেনের মেয়ে (High Court) সৌমিলি সেনের এমবিবিএস ভর্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন, দাবি করে যে তিনি নিট (NEET) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়েই ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। এই অভিযোগগুলি শান্তনু সেনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ হিসেবে দেখা হয়।
শান্তনু সেন মেডিক্যাল কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে (High Court) মামলা দায়ের করেন, এবং বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চ তাঁর আবেদন গ্রহণ করে। হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সিদ্ধান্তে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি ছিল এবং শান্তনু সেনকে ন্যায্য শুনানির সুযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে, কাউন্সিলের নির্দেশ বাতিল করা হয়েছে। এই রায় শান্তনু সেনের ডাক্তারি পেশায় ফিরে আসার পথ প্রশস্ত করেছে এবং তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
শান্তনু সেনের (High Court) বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন।
এই মন্তব্যের জেরে তৃণমূল তাঁকে দলের মুখপাত্রের পদ থেকে সরিয়ে দেয় এবং পরবর্তীতে দল থেকে বহিষ্কার করে। শান্তনু সেন দাবি করেছেন, তিনি দলের ভালোর জন্যই কথা বলেছিলেন, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ভুল বোঝানো হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি তৃণমূলের অনুগত সৈনিক। আমি সঠিক সময়ে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলাম, কিন্তু দলনেত্রী হয়তো সঠিক তথ্য পাননি।”
কলকাতা হাইকোর্টের (High Court) এই সিদ্ধান্ত শান্তনু সেনের পেশাগত ও রাজনৈতিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। তাঁর রেজিস্ট্রেশন বাতিলের নির্দেশ প্রত্যাহারের ফলে তিনি আবার চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতে পারবেন। এই রায় তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ শান্তনু সেনের বহিষ্কার এবং রেজিস্ট্রেশন বাতিলের ঘটনাকে অনেকে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফল হিসেবে দেখছেন। মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি সুদীপ্ত রায়, যিনি নিজেও তৃণমূল বিধায়ক, শান্তনু সেনের বিরোধী শিবিরের বলে পরিচিত।
হাইকোর্টের (High Court) এই রায়ের পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। এক্স-এ প্রকাশিত পোস্টগুলিতে দেখা গেছে, অনেকে এই সিদ্ধান্তকে শান্তনু সেনের জন্য ন্যায়বিচার হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ মেডিক্যাল কাউন্সিলের প্রাথমিক সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল বলে মনে করছেন। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং দলের নেতৃত্বের সঙ্গে শান্তনু সেনের সম্পর্কের অবনতি এই ঘটনার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
হাইকোর্টের (High Court) এই রায় শান্তনু সেনের পেশাগত জীবনের পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। তৃণমূল থেকে বহিষ্কার হওয়া সত্ত্বেও তিনি দাবি করেছেন যে তিনি দলের প্রতি অনুগত এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তকে মেনে নেবেন। তবে, এই ঘটনা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন গতিশীলতা তৈরি করতে পারে। শান্তনু সেনের সমর্থকরা মনে করেন, এই রায় তাঁর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে, বিশেষ করে চিকিৎসা মহলে।
এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। মেডিক্যাল কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত বাতিল হওয়ায় শান্তনু সেনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এটি রাজ্য সরকার এবং মেডিক্যাল কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও আলোচনার সূত্রপাত করেছে। আগামী দিনে এই বিষয়টি রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সকলের দৃষ্টি রয়েছে।