শিয়ালদহের এসি লোকাল ট্রেন চালু নিয়ে ধোঁয়াশা, নানা জটে আটকে প্রকল্প

কলকাতা: লোকাল ট্রেন মানেই ঠাসা ভিড়, গরমে অস্বস্তি, বাদুরঝোলা পরিস্থিতি। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে পূর্ব রেল নতুন পদক্ষেপ হিসেবে শিয়ালদহ ডিভিশনে চালু করতে চলেছে রাজ্যের প্রথম…

শিয়ালদহের এসি লোকাল ট্রেন চালু নিয়ে ধোঁয়াশা, নানা জটে আটকে প্রকল্প

কলকাতা: লোকাল ট্রেন মানেই ঠাসা ভিড়, গরমে অস্বস্তি, বাদুরঝোলা পরিস্থিতি। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে পূর্ব রেল নতুন পদক্ষেপ হিসেবে শিয়ালদহ ডিভিশনে চালু করতে চলেছে রাজ্যের প্রথম এসি লোকাল ট্রেন (AC Local Train)। শিয়ালদহের এসি লোকাল ট্রেন চালু নিয়ে ধোঁয়াশা, নানা জটে আটকে প্রকল্প। ইতিমধ্যেই রেক এসে পৌঁছেছে রানাঘাট কার শেডে। কিন্তু একাধিক পরিকাঠামোগত জটিলতার কারণে এখনও সেই এসি লোকাল ট্রেন যাত্রা শুরু করতে পারেনি।

এই এসি লোকাল (AC Local Train) শিয়ালদহের এসি লোকাল ট্রেন চালু নিয়ে ধোঁয়াশা, নানা জটে আটকে প্রকল্পহল সম্পূর্ণরূপে নতুন প্রযুক্তির LHB প্যাটার্নের ট্রেন, যার প্রতিটি কামরায় থাকবে চারটি করে স্বয়ংক্রিয় দরজা। ঠিক মেট্রোর মতো, স্টেশনে পৌঁছলে দরজা খুলবে এবং ট্রেন ছাড়ার আগে বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এখানেই মূল সমস্যা। শিয়ালদহ-রানাঘাট রুটে যে মাত্রায় যাত্রী ভিড় হয়, সেখানে দরজা নিয়ন্ত্রণের এই মেট্রো ধাঁচের পদ্ধতি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রেলের অন্দরেই।

   

রেলের এক আধিকারিক জানান, “শিয়ালদহ ডিভিশনের প্রতিটি স্টেশনের চরিত্র আলাদা। কোথাও তীব্র ভিড়, কোথাও অপেক্ষাকৃত কম। এর ফলে সব স্টেশনে একই নিয়ম চালু করাও সম্ভব নয়। দরজা খোলা-বন্দের প্রক্রিয়া যেন কোনওভাবেই যাত্রীদের ভোগান্তির কারণ না হয়, সেদিকে নজর দিতে হচ্ছে।”

রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রেও সমস্যায় রেল। LHB কোচের এই এসি রেকগুলির রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। রেলের কর্মীরা এতদিন যেভাবে রানাঘাট, সোনারপুর, বারাসত সহ অন্যান্য শাখার নন-এসি লোকাল ট্রেনের মেইনটেন্যান্স করে এসেছেন, এই নতুন ট্রেন তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অমিত ঘোষ, ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “ট্রেন চলে আসছে, কিন্তু কর্মীদের কোনও ট্রেনিং দেওয়া হয়নি। প্রশাসনের কোনও পরিষ্কার পরিকল্পনা নেই। প্রশিক্ষণ ছাড়া এত আধুনিক ট্রেন পরিচালনা অসম্ভব।”

এছাড়া ভাড়ার বিষয়েও তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। সূত্র অনুযায়ী, ১০ কিমি পথের জন্য যেখানে নন-এসি লোকালের ভাড়া মাত্র ৫ টাকা, সেখানে এসি লোকালের ভাড়া ২৯ টাকা ধরা হয়েছে। ১১–১৫ কিমি দূরত্বে ভাড়া বেড়ে হবে ৩৭ টাকা। ফলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ভাড়ার কারণে সাধারণ যাত্রীদের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে এই ট্রেন।

Advertisements

যদিও যাত্রীদের একাংশের দাবি, এই এসি লোকাল চালু হলে যাতায়াত অনেকটাই স্বস্তিদায়ক হবে। রানাঘাটের এক বাসিন্দা বলেন, “গাড়িতে শিয়ালদহ আসতে অনেক সময় ও টাকা লাগে। যদি এসি ট্রেনে যাওয়া যায়, অনেক কম খরচে, কম সময়ে যাতায়াত করা যাবে।” আর এক যাত্রী বলেন, “মানুষ তো মেট্রোয় চলাফেরা করতে অভ্যস্ত। এসি লোকালে সমস্যা কোথায়? রেলের উচিত দ্রুত এই ট্রেন চালু করা।”

পূর্ব রেল সূত্রের খবর, শিয়ালদহ ডিভিশন থেকে এসি লোকাল (AC Local Train) চালানোর জন্য উচ্চ পর্যায়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। রেল আশাবাদী, প্রশিক্ষণ ও পরিকাঠামোগত সমস্যা কাটিয়ে খুব শিগগিরই এই এসি লোকাল পথে নামবে।

রাজ্যের প্রথম এসি লোকাল ট্রেনের যাত্রা এখন অপেক্ষারত। যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে নজর দিয়ে এই পরিকল্পনা প্রশংসনীয় হলেও, রেলের উচিত দ্রুত সমস্যার সমাধান করে ট্রেন চালু করা। কারণ যাত্রীদের আর অপেক্ষা সহ্য হচ্ছে না।