প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং (Rajnath Singh) জানিয়েছেন, অপারেশন সিঁদুরের পর ভারতীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বিশ্বব্যাপী চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় ২.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে, এবং ভারতের জন্য একটি বিশাল বাজার অপেক্ষা করছে।
নয়া দিল্লির ডিআরডিও ভবনে ৭ থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কন্ট্রোলার্স কনফারেন্সে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, “বিশ্ব আমাদের প্রতিরক্ষা খাতের দিকে তাকিয়ে আছে। অপারেশন সিঁদুরে (Rajnath Singh) আমাদের সৈনিকদের বীরত্ব এবং দেশীয় সরঞ্জামের সক্ষমতা প্রদর্শনের ফলে আমাদের প্রতিরক্ষা পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। ২০২৪ সালে বিশ্ব সামরিক ব্যয় ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে—এমন একটি বিশাল বাজার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”
ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট ও দায়িত্ব (Rajnath Singh)
রাজনাথ সিং(Rajnath Singh) উল্লেখ করেন, ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট বিশ্বের অনেক দেশের জিডিপির চেয়েও বেশি। তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিরক্ষা বাজেট অনেক দেশের জিডিপির চেয়ে বড়। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ করা হয়। এর ফলে আমাদের দায়িত্ব বহুগুণ বেড়ে যায়।
আমাদের ব্যয় এমনভাবে করতে হবে যাতে বাজেট শুধু বাড়ে না, বরং সঠিক সময়ে সঠিক উদ্দেশ্যে সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়।” ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৬.৮১ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৯.৫৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ১.৮ লক্ষ কোটি টাকা মূলধন ব্যয়ের জন্য এবং ১.৬ লক্ষ কোটি টাকা পেনশনের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
জিইএম পোর্টাল ও আধুনিকীকরণ
প্রতিরক্ষামন্ত্রী (Rajnath Singh) প্রতিরক্ষা অধিগ্রহণ পরিষদের (ডিএসি) জিইএম (গভর্নমেন্ট ই-মার্কেটপ্লেস) পোর্টাল থেকে মূলধন সংগ্রহের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “ডিএসি প্রথমবারের মতো জিইএম পোর্টাল থেকে মূলধন সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছে, এটি একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।
আমি জানতে পেরেছি, বিভাগটি প্রতিরক্ষা কর্মীদের জন্য কম্প্রিহেনসিভ পে সিস্টেম এবং কেন্দ্রীয় ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করছে।” এই পদক্ষেপটি ভারতের প্রতিরক্ষা সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে।
কন্ট্রোলার্স কনফারেন্স ২০২৫
প্রতিরক্ষা হিসাব বিভাগ (ডিএডি) আয়োজিত এই কনফারেন্সটি নতুন দিল্লির ডিআরডিও ভবনের ড. এস কে কোঠারি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি প্রতিরক্ষা আর্থিক ব্যবস্থাপনার ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর (Rajnath Singh) সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান, তিন বাহিনীর প্রধান, প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং, আর্থিক উপদেষ্টা (প্রতিরক্ষা পরিষেবা) এস জি দস্তিদার এবং কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ডিফেন্স অ্যাকাউন্টস মায়াঙ্ক শর্মা।
কনফারেন্সের এবারের থিম, ‘ট্রান্সফরমিং ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইস, পেমেন্ট, অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং থ্রু ডিফেন্স ফিনান্স অ্যান্ড ইকোনমিক্স’, ডিএডি-র ভূমিকাকে ঐতিহ্যগত হিসাব-নিকাশ থেকে একটি আধুনিক, ভবিষ্যৎ-প্রস্তুত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের দিকে ইঙ্গিত করে।
এই রূপান্তর ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর প্রতিরক্ষামন্ত্রীর (Rajnath Singh) কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কনফারেন্সে ডিএডি-র নতুন মিশন স্টেটমেন্ট এবং মূলমন্ত্র ‘অ্যালার্ট, অ্যাজাইল, অ্যাডাপটিভ’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।
ডিআরডিও ও আত্মনির্ভরতা
ডিআরডিও-র জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ২৬,৮১৬.৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১২.৪১% বৃদ্ধি। এর মধ্যে ১৪,৯২৩.৮২ কোটি টাকা গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্প এবং মূলধন ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ। এই অর্থ ডিআরডিও-কে নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নে, বিশেষ করে মৌলিক গবেষণায় শক্তিশালী করবে। সরকারের আত্মনির্ভর ভারত উদ্যোগের অধীনে, মোট আধুনিকীকরণ বাজেটের ৭৫% দেশীয় সংগ্রহের জন্য বরাদ্দ, যার ২৫% বেসরকারি শিল্প থেকে ক্রয়ের জন্য নির্ধারিত।
ভবিষ্যৎ পথকনফারেন্সে আটটি উচ্চ-পর্যায়ের সেশন (মনন সত্র) অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বাজেট ও হিসাব সংস্কার, অভ্যন্তরীণ অডিট পুনর্গঠন, সহযোগী গবেষণা, মূল্য নির্ধারণ উদ্ভাবন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হবে।
রাজনাথ সিং (Rajnath Singh) জোর দিয়েছেন, প্রতিরক্ষা হিসাব বিভাগের দায়িত্ব কেবল কাগজে হিসাব রাখা নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি বলেন, “আপনাদের সৎ কাজের প্রভাব সীমান্তে পাহারা দেওয়া সৈনিকদের মনোবল পর্যন্ত পৌঁছায়। তারা অনুভব করে যে তাদের পিছনে একটি ব্যবস্থা রয়েছে, যা সব পরিস্থিতিতে তাদের সঙ্গে থাকবে।”
মশালবাহিনীর অনুশীলনে যোগ দিলেন প্রভাত লাকরা
অপারেশন সিঁদুর এবং কন্ট্রোলার্স কনফারেন্স ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে একটি নতুন যুগের সূচনা করছে। আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যে দেশীয় উৎপাদন ও গবেষণার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যা ভারতকে বিশ্ব প্রতিরক্ষা বাজারে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে।