নয়াদিল্লি: ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর, মুম্বইয়ের তাজ হোটেলসহ একাধিক স্থানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় কেঁপে উঠেছিল গোটা দেশ। প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৬৬ জন নিরপরাধ মানুষ। ১৬ বছর পর সেই নারকীয় হামলার অন্যতম অভিযুক্ত তাহাউর হুসেইন রানা মুখ খুললেন। ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (NIA) হেফাজতে থাকা অবস্থায় মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের জেরায় তিনি স্বীকার করেছেন, তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ‘বিশ্বস্ত গুপ্তচর’ ছিলেন এবং হামলার সময় তিনি মুম্বই শহরেই উপস্থিত ছিলেন।
আমেরিকা থেকে প্রত্যর্পণ, এবার সরাসরি স্বীকারোক্তি
তাহাউর রানা দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। কিন্তু ভারতের অনুরোধে তাকে ২০২৪ সালের ১০ এপ্রিল প্রত্যর্পণ করা হয়। মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট তাঁর আপিল খারিজ করে দিলে সব বাধা কেটে যায়। ভারতে পৌঁছনোর পর থেকেই তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে এনআইএ এবং মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চ।
সেই জেরাতেই রানা জানান, তিনি কেবল পাকিস্তানের একমাত্র কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবা-র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, বরং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সরাসরি নির্দেশেই কাজ করতেন। তিনি দাবি করেন, তাঁকে গালফ যুদ্ধের সময় সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছিল পাকিস্তানের হয়ে কাজ করার জন্য।
লস্কর-ই-তইবার জন্মই হয়েছিল গুপ্তচর নেটওয়ার্ক হিসেবে Tahawwur Rana Pakistan spy
রানা বলেন, লস্কর-ই-তইবা প্রথমে একটি গুপ্তচর সংস্থা হিসেবেই গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে তা সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। তাঁর দাবি, লস্করের বহু সদস্যকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সক্রিয়ভাবে প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিক সহায়তা দিয়েছে। তিনি জানান, তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং কুখ্যাত জঙ্গি ডেভিড হেডলি একাধিকবার লস্করের হয়ে সন্ত্রাসবাদ প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেছিল।
রানা বলেন, হামলার আগে হেডলিকে ভারতীয় ভিসা পেতে সাহায্য করেন জাল নথিপত্র বানিয়ে, যাতে সে নিরাপদে মুম্বইয়ে ঢুকে হামলার টার্গেট জায়গাগুলির রেকি করতে পারে। এসব কাজই ছিল পাকিস্তানের সেনা ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিকল্পনার অংশ।
রানা ছিলেন মুম্বইতেই-হামলার সময়
সবচেয়ে বিস্ফোরক তথ্য: তাহাউর রানা দাবি করেন, ২৬ নভেম্বর ২০০৮, যেদিন জঙ্গিরা তাজ হোটেলসহ একাধিক জায়গায় হামলা চালায়, সেদিন তিনি মুম্বই শহরেই ছিলেন। শুধু তাই নয়, হামলা শুরুর আগেই তিনি শহরের একাধিক জায়গায় সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। যদিও ঠিক কোথায় ছিলেন, সে তথ্য তিনি তদন্তকারীদের জানাননি।
তবে মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চ মনে করছে, তাঁর অবস্থান শহরের জুহু বা চেম্বুর এলাকার আশেপাশে ছিল। গোয়েন্দারা আরও খতিয়ে দেখছেন, হামলার সময় তাঁর মোবাইল ফোন, পাসপোর্ট বা অন্যান্য চিহ্ন, যা তাঁর অবস্থান প্রমাণ করতে পারে।
আইনি প্রক্রিয়া চলছে, আদালতে ফের পেশ
গত মাসে দিল্লির পাতিয়ালা হাউস কোর্ট তাহাউর রানাকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে একবার ফোনে কথা বলার অনুমতি দিয়েছিল। এনআইএ জানিয়েছে, মানবিক কারণে একবার ফোনকলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাঁকে ৯ জুলাই পর্যন্ত বিচারিক হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ভারতের অবস্থান আরও জোরালো হল?
এই স্বীকারোক্তির পর ভারতের হাতে এমন একটি প্রমাণ উঠে এল, যা শুধু তাহাভুর রানার বিরুদ্ধে নয়, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মদতের সন্ত্রাসের অভিযোগকে আরও জোরালো করে তুলবে। ২৬/১১-র তদন্তে এর আগেও পাকিস্তান সেনা ও আইএসআই-এর সম্পৃক্ততার আভাস মিলেছিল, এবার তা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে রানার নিজের মুখে।