চণ্ডীগঢ় ও হরিয়ানার পানিপথে ঘটল এক লোমহর্ষক ও অমানবিক ঘটনা। চলন্ত ট্রেনের ভিতরে এক মহিলাকে গণধর্ষণ (Gang-Rape) করে তাঁকে ট্রেন থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পাশের লাইনে পড়ে যাওয়ায় এক পা ট্রেনে কাটা পড়ে যায় তাঁর। বর্তমানে বছর পঁইত্রিশের নির্যাতিতা রোহতকের পিজিআইএমএস (PGIMS) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গোটা ঘটনার তদন্তে নেমেছে জিআরপি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মহিলা চলন্ত ট্রেনে ভ্রমণ করছিলেন। অভিযোগ, পানিপথের কাছাকাছি আসতেই ট্রেনের মধ্যেই ৩–৪ জন যুবক তাঁকে ঘিরে ফেলে এবং শারীরিক নির্যাতন চালায়। পরে তাঁকে ট্রেন থেকে নিচে ফেলে দেয় অভিযুক্তরা। পাশের লাইনে পড়ে যাওয়ার পরেই একটি দ্রুতগতির ট্রেন এসে পড়ে এবং মহিলার একটি পা কেটে দেয়।
রাতের অন্ধকারে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় একাধিক প্রশ্ন উঠছে রেল সুরক্ষা এবং যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে। ২৫ জুন রাতে সোনিপতের রেললাইনের ধারে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় ওই মহিলাকে। সোনিপত জিআরপি তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রোহতকে পাঠানো হয়।
৪ জুলাই, রোহতকের পিজিআইএমএস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই মহিলা এক চিকিৎসককে জানান, ট্রেনে তিনি কী ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমি শুধু মনে করতে পারি, ৩–৪ জন যুবক আমাকে ট্রেনে ঘিরে ধরেছিল। তারা ধর্ষণ করে এবং পরে আমাকে ট্রেন থেকে ফেলে দেয়। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই।”
এই বয়ান পাওয়ার পরেই পুলিশ জিরো এফআইআর দায়ের করে এবং পানিপথ জিআরপি-কে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
২৪ জুন ওই মহিলা নিখোঁজ হন বলে পরিবারের দাবি। তাঁর স্বামী ২৬ জুন স্থানীয় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনার মধ্যে যোগাযোগের একটি সময়-সামঞ্জস্য রয়েছে। মহিলার বয়ান রেকর্ড করে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে জিআরপি ও রেল পুলিশ। মহিলার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলে তাঁর বক্তব্য আবারও নেওয়া হবে এবং অপরাধীদের শনাক্ত করতে তৎপর হবে পুলিশ।
এই ঘটনা ফের প্রমাণ করে দিল, দেশের রেলযাত্রা এখনও বহু মহিলার কাছে নিরাপদ নয়। দিনরাত ট্রেনে যাতায়াতকারী নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। সিসিটিভি নজরদারি, মহিলা কোচে নিরাপত্তারক্ষী, পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা—এসব ব্যবস্থার ঘাটতি যে চরম পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে, তা এই ঘটনাই দেখিয়ে দিল।
যে নির্মমতার সঙ্গে মহিলাকে গণধর্ষণ করে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে, তা শুধু অপরাধ নয়, অমানবিকতারও নিদর্শন। অপরাধীরা এখনো ধরা না পড়লেও, পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনবে।