বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ভারতীয় ক্রিকেট দল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এজবাস্টনে ঐতিহাসিক ৩৩৬ রানের জয়ের পর ২০২৫-২৭ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (World Test Championship) পয়েন্ট টেবিলে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। শুভমান গিলের নেতৃত্বে ভারতীয় দল এই মাঠে প্রথমবারের মতো জয়লাভ করেছে, যেখানে তারা এর আগে সাতটি হার এবং একটি ড্র-র রেকর্ড ছিল। গিলের দুই ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি (২৬৯) এবং সেঞ্চুরি (১৬১) এবং আকাশ দীপের ম্যাচে ১০ উইকেটের অসাধারণ পারফরম্যান্স ভারতকে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরিয়ে এনেছে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে, শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় এবং ইংল্যান্ড তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে।
ম্যাচের হাইলাইটস
২০২৫ সালের ২ জুলাই থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত বার্মিংহামের এজবাস্টনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে ভারত প্রথমে ব্যাট করে ৫৮৭ রানের বিশাল স্কোর গড়ে। শুভমান গিলের ২৬৯ রানের রেকর্ড-ব্রেকিং ইনিংস ছিল এই স্কোরের মূল ভিত্তি। তিনি ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন, যিনি বিরাট কোহলির ২৫৪* (২০১৯, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) রেকর্ড ভেঙেছেন। এছাড়া, এই ২৬৯ রান ইংল্যান্ডে ভারতীয় ব্যাটারের সর্বোচ্চ স্কোর এবং এশিয়ার বাইরে কোনো ভারতীয় ব্যাটারের সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোর। গিল একই ম্যাচে ২০০ এবং ১৫০ রানের ইনিংস খেলে ইতিহাসে প্রথম ব্যাটার হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। তাঁর ৪৩০ রানের মোট স্কোর একটি টেস্টে ভারতীয় ব্যাটারের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। রবীন্দ্র জাদেজা (৮৯) এবং ওয়াশিংটন সুন্দর (৪২) গিলকে ভালো সমর্থন দিয়েছেন।
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৪০৭ রানে অলআউট হয়, যেখানে মোহাম্মদ সিরাজ ৬/৭০ এবং আকাশ দীপ ৪/৮৮ নেন। হ্যারি ব্রুক (১৫৮) এবং জেমি স্মিথ (১৮৪*) ৩০৩ রানের জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে লড়াইয়ে রাখলেও ভারত ১৮০ রানের লিড পায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ৪২৭/৬ ডিক্লেয়ার করে, গিলের ১৬১, রিশাভ পান্তের ৬৫ এবং জাদেজার ৬৯ রানের সৌজন্যে। ইংল্যান্ডের জন্য ৬০৮ রানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, যা টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ লক্ষ্যগুলির মধ্যে একটি।
ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে আকাশ দীপের ৬/৯৯ এবং সিরাজের বোলিং ভারতকে জয় এনে দেয়। আকাশ দীপ বেন ডাকেট, জো রুট এবং অলি পোপকে আউট করে ইংল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় ব্যাটিং লাইনআপ ধ্বংস করেন। জেমি স্মিথের ৮৮ রান সত্ত্বেও ইংল্যান্ড ২৭১ রানে অলআউট হয়, এবং ভারত ৩৩৬ রানের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। এটি ভারতের বিদেশের মাটিতে রানের হিসেবে সবচেয়ে বড় জয়।
গিল এবং আকাশ দীপের অবদান
শুভমান গিল এই ম্যাচে নেতৃত্বের দুর্দান্ত প্রদর্শন করেছেন। তিনি প্রথম ইনিংসে ৩৮৭ বলে ২৬৯ রান (৩০ চার, ৩ ছক্কা) এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬১ রান (১৩ চার, ৮ ছক্কা) করেন। তিনি একই টেস্টে দুটি ১৫০-এর বেশি স্কোর করা দ্বিতীয় ব্যাটার এবং ভারতীয়দের মধ্যে সুনীল গাভাসকরের পর দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন। তাঁর ৪৩০ রানের মোট স্কোর টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গিলের এই পারফরম্যান্স তাকে বিশ্ব ক্রিকেটে একজন উদীয়মান তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আকাশ দীপ, জসপ্রিত বুমরাহর অনুপস্থিতিতে, দলের প্রধান পেসার হিসেবে উঠে আসেন। তিনি ম্যাচে ১০ উইকেট (প্রথম ইনিংসে ৪/৮৮, দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/৯৯) নিয়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপকে ধ্বংস করেন। তাঁর সঠিক লাইন-লেংথ এবং বলের দুদিকে মুভমেন্ট পাওয়ার ক্ষমতা এই পিচে অসাধারণ ছিল। গিল তাঁর প্রশংসা করে বলেন, “আকাশ দীপ এমন একটি পিচে দুদিকে বল মুভ করিয়েছেন, যা সত্যিই কঠিন। তিনি আমাদের জন্য অসাধারণ ছিলেন।”
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট টেবিল
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই জয়ের পর ভারত ডব্লিউটিসি পয়েন্ট টেবিলে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। অস্ট্রেলিয়া শীর্ষে রয়েছে (পিসিটি: ১০০), শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় (পিসিটি: ৬৬.৬৭), এবং ইংল্যান্ড তৃতীয় (পিসিটি: ৫০)। ভারতের পিসিটি বর্তমানে প্রায় ৫০% এর কাছাকাছি, যা প্রথম টেস্টে হারের পর তাদের অবস্থান উন্নত করেছে। ডব্লিউটিসি ২০২৫-২৭ সাইকেলে প্রতিটি জয়ের জন্য ১২ পয়েন্ট, ড্রয়ের জন্য ৪ পয়েন্ট এবং টাইয়ের জন্য ৬ পয়েন্ট দেওয়া হয়। ভারতের এই জয় তাদের ডব্লিউটিসি ফাইনালে পৌঁছানোর সম্ভাবনাকে শক্তিশালী করেছে।
ভারতের কৌশল এবং ভবিষ্যৎ
প্রথম টেস্টে হেডিংলিতে পাঁচ উইকেটে হারের পর ভারত এই ম্যাচে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করেছে। গিলের নেতৃত্বে দলের ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ে উন্নতি ছিল লক্ষণীয়। তিনি বলেন, “আমরা জানতাম, এই ধরনের উইকেটে ৪০০-৫০০ রান করলে আমরা খেলায় থাকব। আমাদের বোলাররা দুর্দান্তভাবে তাদের টপ-অর্ডার ভেঙে দিয়েছে।” মোহাম্মদ সিরাজের ৭ উইকেট এবং প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার সহায়ক বোলিংও ভারতের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এই জয় ভারতের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে, এবং লর্ডসে পরবর্তী টেস্টে তারা সিরিজে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে মাঠে নামবে। গিল এবং আকাশ দীপের পারফরম্যান্স ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন যুগের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে তরুণরা বড় দায়িত্ব নিচ্ছেন। ডব্লিউটিসি ফাইনালে পৌঁছানোর জন্য ভারতকে এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।