অটল পেনশন যোজনা (Atal Pension Yojana) ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষের কেন্দ্রীয় বাজেটে ঘোষণা করা হয়, যা ভারতের অ-সংগঠিত খাতের কর্মীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি একটি সরকারি পেনশন স্কিম। এই যোজনার মূল উদ্দেশ্য হল কর্মজীবন শেষে বয়স্ক নাগরিকদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা প্রদান করা। অ-সংগঠিত খাতের যে সমস্ত কর্মীরা বয়স্ক বয়সে স্থিতিশীল আয়ের নিশ্চয়তা চান, তাদের জন্য এই স্কিমটি অত্যন্ত কার্যকর।
অটল পেনশন যোজনার অধীনে, ৬০ বছর বয়সের পর প্রতিমাসে ন্যূনতম ১,০০০ টাকা থেকে সর্বাধিক ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত পেনশন প্রদান করা হয়। এই পেনশন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রাপ্য, অর্থাৎ পেনশনগ্রাহী জীবিত থাকা পর্যন্ত এটি চালু থাকে। মৃত্যুর পরে, ওই ব্যক্তির স্ত্রী বা স্বামী একই পরিমাণ পেনশন পেতে থাকেন। উভয়ের মৃত্যুর পর, ওই পেনশন ফান্ডের পুরো টাকা নমিনির হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এই যোজনা সম্পূর্ণভাবে Pension Fund Regulatory and Development Authority (PFRDA)-এর মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং এটি একটি স্বেচ্ছা অবদানমূলক স্কিম। অর্থাৎ, ইচ্ছুক নাগরিকরা নিজেদের আর্থিক সঙ্গতি অনুযায়ী অবদান দিতে পারেন এবং অবদানের পরিমাণের উপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে পেনশন প্রাপ্তির পরিমাণ স্থির হয়।
যোগ্যতা ও শর্তাবলী:
অটল পেনশন যোজনায় যোগ দেওয়ার জন্য প্রার্থীর বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এছাড়া, প্রার্থীর একটি সচল মোবাইল নম্বর এবং আধারের সঙ্গে যুক্ত একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
প্রতিটি প্রার্থীকে কমপক্ষে ২০ বছর ধরে অবদান দিতে হবে। যাঁরা পূর্বে স্বাবলম্বন স্কিমের সুবিধাভোগী ছিলেন, তারাও এই যোজনায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
তবে, ১ অক্টোবর ২০২২ থেকে যাঁরা আয়কর প্রদান করেন, তাঁরা আর এই স্কিমের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। এর মাধ্যমে সরকার চায় শুধুমাত্র কম আয়ের অ-সংগঠিত খাতের কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
অটল পেনশন যোজনার সুবিধা
এই স্কিমের প্রধান সুবিধা হল সরকার দ্বারা ন্যূনতম পেনশন গ্যারান্টি। অর্থাৎ, প্রার্থী অবদানের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পেনশন পেতে বাধ্য। এটি বৃদ্ধ বয়সে অনিশ্চিত আয়ের ঝুঁকি কমায় এবং মানসিক নিশ্চিন্ততা প্রদান করে। এছাড়া, স্ত্রী বা স্বামীও মৃত্যুর পর এই সুবিধা পেতে পারেন, যা আর্থিক সুরক্ষাকে আরও দৃঢ় করে।
কীভাবে আবেদন করবেন?
অটল পেনশন যোজনায় আবেদন করা খুবই সহজ। প্রার্থী নিজের ব্যাংকের শাখা বা পোস্ট অফিস থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে পারেন বা সরাসরি PFRDA-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করতে পারেন।
আবেদনপত্র পূরণ করার সময় প্রার্থীর নাম, জন্মতারিখ, বয়স, মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি এবং আধার নম্বর দিতে হবে। বিবাহিত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্বামীর/স্ত্রীর নাম ও বয়সও উল্লেখ করতে হবে।
তাছাড়া, একজন নমিনি নিয়োগ করতে হবে এবং তার সঙ্গে সম্পর্কের উল্লেখ করতে হবে। এর পরে, প্রার্থীকে কাঙ্ক্ষিত মাসিক পেনশন পরিমাণ নির্বাচন করতে হবে। সবশেষে আবেদনপত্রে স্বাক্ষর বা আঙ্গুলের ছাপ দিতে হবে, যা দ্বারা প্রার্থী নিশ্চিত করেন যে তিনি যোজনার শর্তাবলী বুঝেছেন।
আবেদনপত্র ব্যাংকে জমা দেওয়ার পরে, প্রার্থী একটি নিশ্চিতকরণ বার্তা SMS-এর মাধ্যমে পাবেন। এছাড়া, প্রার্থীরা https://npstrust.org.in/open-apy-account লিঙ্কে গিয়ে অনলাইনেও আবেদন করতে পারেন।
অটল পেনশন যোজনার ক্যালকুলেটর:
অনলাইনে APY ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে প্রার্থী কত মাসিক অবদান দিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কত পেনশন পাবেন, তা সহজেই জেনে নিতে পারেন। প্রার্থীর বয়স অনুযায়ী অবদানের পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। যেমন, ১৮ বছর বয়সে যোগ দিলে ন্যূনতম অবদান শুরু হয় মাত্র ৪২ টাকা থেকে।
যদি কেউ ১৮ বছর বয়সে প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা পেনশন পাওয়ার জন্য এই যোজনায় নাম লেখান, তবে প্রতি মাসে ২১০ টাকা অবদান দিতে হবে। ৬০ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ ৪২ বছর ধরে অবদান দিতে হবে। এভাবে মোট বিনিয়োগ হবে ১,০৫,৮৪০ টাকা। এই অবদানের বিপরীতে প্রার্থী যে পেনশন তহবিল পাবেন, তা প্রায় ৭,৫৪,০৯৭ টাকায় বৃদ্ধি পাবে।
অটল পেনশন যোজনা দেশের লক্ষ লক্ষ অ-সংগঠিত খাতের কর্মীর জন্য এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা। এটি শুধু ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা দেয় না, বরং বৃদ্ধ বয়সে সম্মানজনক জীবনযাপন নিশ্চিত করে। সরকারের এই উদ্যোগ প্রকৃত অর্থেই ‘সবকা বিকাশ’ এবং ‘সামাজিক সুরক্ষা’র লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করছে।
অতএব, যদি আপনি অ-সংগঠিত খাতের কর্মী হন এবং এখনও এই যোজনায় নাম লেখাননি, তবে দেরি না করে আজই এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। ভবিষ্যতের জন্য এটি হতে পারে একটি চমৎকার বিনিয়োগ।