ব্যাংক চাকরির বড় সুযোগ! সরকারি ব্যাংকে ৫০,০০০ নতুন নিয়োগ

চলতি আর্থিক বছরে সরকারি ব্যাংকগুলো প্রায় ৫০ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগের (Bank jobs) পরিকল্পনা নিয়েছে। ব্যাংকগুলোর ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়িক চাহিদা এবং শাখা সম্প্রসারণের জন্য এই উদ্যোগ…

Public Sector Banks Surge Ahead of Private Banks in FY25 Market Share

চলতি আর্থিক বছরে সরকারি ব্যাংকগুলো প্রায় ৫০ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগের (Bank jobs) পরিকল্পনা নিয়েছে। ব্যাংকগুলোর ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়িক চাহিদা এবং শাখা সম্প্রসারণের জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, এই নতুন নিয়োগের মধ্যে প্রায় ২১ হাজার হবে অফিসার পদে এবং বাকি অংশে ক্লার্কসহ অন্যান্য স্টাফ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। সরকারি মালিকানাধীন ১২টি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) চলতি আর্থিক বছরে প্রায় ২০ হাজার কর্মী নিয়োগের লক্ষ্য নিয়েছে। এর মধ্যে বিশেষায়িত অফিসারও রয়েছে।

   

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এসবিআই ইতোমধ্যেই ৫০৫ জন প্রোবেশনারি অফিসার (পিও) এবং ১৩,৪৫৫ জন জুনিয়র অ্যাসোসিয়েট নিয়োগ করেছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন শাখায় গ্রাহক পরিষেবার মান আরও উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করছে ব্যাংকটি।

১৩,৪৫৫ জন জুনিয়র অ্যাসোসিয়েট নিয়োগের মাধ্যমে ৩৫টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শূন্যপদ পূরণ করা হবে। এসবিআই-এর মোট কর্মীর সংখ্যা ২০২৫ সালের মার্চ শেষে দাঁড়িয়েছে ২,৩৬,২২৬ জনে। এর মধ্যে অফিসার রয়েছেন ১,১৫,০৬৬ জন।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রতিটি পূর্ণকালীন কর্মীর গড় নিয়োগ ব্যয় ছিল ৪০,৪৪০.৫৯ টাকা। এসবিআই-এর বার্ষিক কর্মী ক্ষয় হার (অ্যাট্রিশন রেট) ধারাবাহিকভাবে ২ শতাংশের নিচে রয়েছে। এই নিম্ন ক্ষয় হারের কারণ হিসেবে ব্যাংকটির সেরা মানের কর্মী ব্যবস্থাপনা এবং কল্যাণমূলক নীতি উল্লেখ করা হয়েছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরকারি ব্যাংক পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (পিএনবি) চলতি আর্থিক বছরে প্রায় ৫,৫০০ জন নতুন কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ শেষে পিএনবি-র মোট কর্মীর সংখ্যা ১,০২,৭৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে, আরেকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া প্রায় ৪,০০০ কর্মী নিয়োগের লক্ষ্য নিয়েছে। এছাড়া, অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারি ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে যে, তাদের সাবসিডিয়ারি বা যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত করার মাধ্যমে অর্থায়নের সুযোগ তৈরি করতে হবে। তবে এর আগে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা আরও বড় পরিসরে সম্প্রসারণ করতে হবে, যাতে বাজার থেকে সর্বোচ্চ মূল্য পাওয়া যায়।

সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, প্রায় ১৫টি সাবসিডিয়ারি বা যৌথ উদ্যোগের প্রাথমিক পাবলিক অফারিং (আইপিও) অথবা শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে মধ্যম থেকে দীর্ঘমেয়াদি সময়কালের জন্য।

যেখানে প্রয়োজন, ব্যাংকগুলোকে তাদের এই সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করতে হবে। এর মাধ্যমে বাজারে শেয়ার বিক্রির সঠিক সময়ে ভালো মূল্য পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

Advertisements

অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী, এই সকল সাবসিডিয়ারি বা যৌথ উদ্যোগের মধ্যে সুশাসন, পেশাদার সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আরও কার্যকরী অপারেশনাল দক্ষতা আনার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ, এসব বিষয়ের উন্নয়ন ছাড়া ভবিষ্যতে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত করার মাধ্যমে ভালো মানের রিটার্ন আশা করা সম্ভব নয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ব্যাংকগুলোর এই নতুন নিয়োগ উদ্যোগ দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। নতুন কর্মীদের নিয়োগের ফলে ব্যাংকের পরিষেবা মান বৃদ্ধি পাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত হবে।

প্রসঙ্গত, সরকারি ব্যাংকগুলোর এই নিয়োগ প্রক্রিয়া দেশের তরুণ সমাজের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। এর পাশাপাশি, ব্যাংকিং খাতের পরিধি আরও বাড়বে, যা দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে শক্তিশালী করবে।

বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় গ্রাহক পরিষেবা উন্নয়নের জন্য জুনিয়র অ্যাসোসিয়েটদের গুরুত্ব অপরিসীম। অন্যদিকে, নতুন অফিসার নিয়োগের মাধ্যমে ব্যাংকের ঋণ, বিনিয়োগ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।

সাধারণত, সরকারি ব্যাংকে চাকরি মানেই স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক মর্যাদা। এছাড়া ব্যাংকগুলোতে বেতন, ভাতা এবং পেনশন সুবিধা ভালো হওয়ায় এই চাকরি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা তৈরি করে।

অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন, সরকারি ব্যাংকগুলোর এই কর্মী নিয়োগ দেশের বেকারত্বের হার কমাতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি, ব্যাঙ্কগুলোর সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলো শেয়ার বাজারে আসলে নতুন বিনিয়োগের সুযোগও তৈরি হবে।

সবমিলিয়ে বলা যায়, সরকারি ব্যাংকগুলোর এই বড় আকারের নিয়োগ এবং ভবিষ্যতের আর্থিক রূপরেখা দেশের ব্যাংকিং খাতকে আরও শক্তিশালী ও জনমুখী করে তুলবে।