ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের প্রথম প্রান্তিকের (Q1FY26) আয় এবং EBITDA দুই ক্ষেত্রেই ১১ শতাংশ বছর-ওভার-বর্ষ (YoY) ভিত্তিতে প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কোটাক ইনস্টিটিউশনাল ইকুইটিজের সাম্প্রতিক রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশীয় বাজারে মার্চ এবং এপ্রিল মাসে চাহিদা কিছুটা কম থাকলেও, বৈশ্বিক বাজারে স্থিতিশীল চাহিদা এই প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করছে।
হাসপাতাল সেগমেন্টে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত বিক্রয় এবং EBITDA বৃদ্ধি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন বেড সংযোজন এবং প্রতিটি বেডের উপর গড় আয় (ARPOB)-এর সামান্য বৃদ্ধি। এই বৃদ্ধির ফলে হাসপাতাল সেক্টরে বিনিয়োগ এবং সম্প্রসারণের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
ডায়াগনস্টিক সেগমেন্টে ১৪ শতাংশ বিক্রয় বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এর জন্য মূল কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি, সেবার মানের উন্নতি এবং সাম্প্রতিককালের মিশন ও অধিগ্রহণ (M&A) কার্যক্রম। মহামারীর পর ডায়াগনস্টিক চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে।
ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল বাজারের আকার FY 2023-24-এ প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে দেশীয় চাহিদার মূল্য প্রায় ২৩.৫ বিলিয়ন ডলার এবং রপ্তানি বাজারের আকার প্রায় ২৬.৫ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ফার্মাসিউটিক্যাল উৎপাদক হিসেবে ভারত বর্তমানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। তবে মূল্যের দিক থেকে ভারত ১৪তম স্থানে অবস্থান করছে।
ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে জেনেরিক ও বাল্ক ড্রাগ, ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ, ভ্যাকসিন, বায়োসিমিলার ও বায়োলজিক্সের মতো বিভিন্ন ধরণের পণ্য তৈরি হয়। বৈচিত্র্যময় এই উৎপাদন ক্ষমতা ভারতের আন্তর্জাতিক বাজারে অবস্থানকে মজবুত করেছে।
ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস স্ট্যাটিসটিক্স ২০২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, FY 2022-23-এ ফার্মাসিউটিক্যালস, মেডিসিনাল এবং বোটানিক্যাল প্রোডাক্টসের মোট উৎপাদন ছিল ৪,৫৬,২৪৬ কোটি টাকা (স্থির মূল্যে)। এর মধ্যে যোগকৃত মূল্য (Value Added) ছিল ১,৭৫,৫৮৩ কোটি টাকা।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, FY 2022-23-এ ফার্মাসিউটিক্যালস, মেডিসিনাল এবং বোটানিক্যাল প্রোডাক্টস শিল্পে প্রায় ৯,২৫,৮১১ জন মানুষ নিয়োজিত ছিলেন। এটি দেশের কর্মসংস্থান ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে গবেষণা এবং উদ্ভাবনের (R&D) জন্য বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক মন্ত্রণালয় এবং সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। ফার্মাসিউটিক্যালস বিভাগের অধীনে সাতটি জাতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (NIPER) গড়ে তোলা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয় গুরুত্বের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এরা শুধুমাত্র পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট এবং পিএইচডি স্তরের শিক্ষা প্রদান করে না, বরং অত্যাধুনিক গবেষণার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
ফার্মাসিউটিক্যালস বিভাগ “ভারতের ফার্মা-মেডটেক খাতে গবেষণা ও উদ্ভাবন সম্পর্কিত জাতীয় নীতি” তৈরি করেছে। এই নীতির মূল উদ্দেশ্য হলো দেশে ওষুধ ও মেডিকেল ডিভাইসের গবেষণা ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা। এর মাধ্যমে দেশীয় স্টার্টআপ, ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিয়ার মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো হচ্ছে।
এছাড়াও, এই নীতি উদ্ভাবনী পরিবেশকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করছে, যাতে ভারত বিশ্বব্যাপী ওষুধ আবিষ্কার এবং উদ্ভাবনী মেডিকেল ডিভাইস তৈরির ক্ষেত্রে নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। এর পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে, যাতে তারা সহজে গবেষণায় প্রবেশ করতে পারে এবং নতুন পণ্য এবং প্রযুক্তি বাজারজাত করতে পারে।
এই নীতির মাধ্যমে একটি শক্তিশালী R&D এবং উদ্ভাবন কেন্দ্রিক ইকোসিস্টেম তৈরি হবে, যা দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ফার্মা শিল্পের সাম্প্রতিক এই উন্নতি এবং ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ বিনিয়োগকারীদের জন্যও একটি ইতিবাচক সংকেত দিচ্ছে। বর্ধিত গবেষণা, নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ এবং বৈশ্বিক বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মিলিয়ে আগামী কয়েক বছর ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের জন্য স্বর্ণযুগ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফলে, প্রথম প্রান্তিকে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির এই পূর্বাভাস কেবলমাত্র একটি প্রাথমিক ইঙ্গিত, যা পরবর্তী প্রান্তিকগুলিতে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিফলিত হতে পারে। দেশের স্বাস্থ্যসেবা এবং ফার্মা শিল্পের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।